সংসার টানতে ধরেছিলেন সূচ-সুতো, সেই সেলাইয়ের জন্যই পদ্মশ্রী পেলেন প্রীতিকণা

সংসার টানতে ধরেছিলেন সূচ-সুতো, সেই সেলাইয়ের জন্যই পদ্মশ্রী পেলেন প্রীতিকণা

কলকাতা: বুধবার রাত ১০টায় ফোন পেয়েছেন ভারত সরকারের তরফে। এখনও অভিভূত হয়ে রয়েছেন সোনারপুরের প্রীতিকণা গোস্বামী।

১৯৭৩ সালে পাঁচ বোনের সংসার চালাতে কিছুটা বাধ্য হয়েই বেছে নিয়েছিলেন সেলাই। সেই সেলাই এবার পদ্মশ্রী খেতাব তুলে দিচ্ছে দক্ষিণ শহরতলীর সোনারপুরsর বাসিন্দা প্রীতিকণাদেবীর হাতে।

যে প্রতিষ্ঠানে প্রথম কাজ করতেন, সেই আমলে সেখানে কাজ করার জন্য জমা রাখতে হতো ৫০ টাকা। সেদিন তাঁর সেই টাকা দেওয়ার সামর্থ্য ছিল না বলে আত্মীয়দের থেকে ধার নিয়েছিলেন।

আজ সেই প্রীতিকণাদেবীর হাত থেকে প্রতি মুহূর্তে তৈরি হচ্ছে নকশী কাঁথার মতো অমূল্য সমস্ত শিল্পকর্ম। তবে সেলাই মাধ্যমকে শুধুমাত্র শিল্পের নিদর্শন হিসেবেই সীমাবদ্ধ রাখেননি  প্রীতিকণা দেবী, তুলে ধরেছেন সেলাইয়ের মধ্য দিয়ে নারী ক্ষমতায়নের ভাবনাও।

একদিন যে অভাব তাঁর হাতে সূচ সুতো তুলে দিয়েছিল, আজ সেই সূচ আর সুতো নিয়েই তিনি আরও মেয়েদের শেখাচ্ছেন স্বাবলম্বী হওয়ার রাস্তা। তবে এই সেলাই মানেই শুধুমাত্র যে প্রয়োজনের কাজটুকু চলার মতো, তা একেবারেই নয়।

রীতিমতো কাঁথাস্টিচ-এর মতো মাধ্যমকে বেছে নিয়ে আন্তর্জাতিক মিউজিয়ামগুলিতে প্রদর্শনযোগ্য সমস্ত কাজ তিনি শিখিয়ে চলেছেন পরবর্তী প্রজন্মকে।

১৯৯০ সাল থেকে ক্রাফট কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গলের অনুপ্রেরণায় নকশিকাঁথার মতো শিল্প নিয়ে কাজ করে চলেছেন প্রীতিকণাদেবী। এর আগে ইতিমধ্যেই ২০০১ সালে তিনি পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কার।

যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে মেয়েকে ফ্যাশন ডিজাইনিং পড়িয়ে এনেছেন ফ্যাশন ডিজাইনিং-এর পেশায়। মেয়ে মহুয়া লাহিড়ীর কাজ আন্তর্জাতিক পরিচিতি পাওয়ার পাশাপশি মায়ের হাতে তৈরি বাংলার নকশিকাঁথা শিল্পের নিদর্শনগুলোকে অন্যান্য দেশকে চিনিয়েছেন তিনি।

তবে শুধু তৈরি করাই নয়, নকশিকাঁথার মতো কাজ, যার আন্তর্জাতিক বাজারে যথেষ্ট কদর রয়েছে, সেগুলো কীভাবে বিকল্প আয়ের রাস্তা হতে পারে, সেই দিশাও তিনি দেখাতে চান তাঁর ছাত্রীদের।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, প্রীতিকণাদেবীর পরিবারে পদ্ম পুরষ্কার এই প্রথম নয়, এর আগে ১৯৯০ সালে পদ্মভূষণ সম্মানে ভূষিত হন তাঁর কাকা পণ্ডিত নিখিল জ্যোতি ঘোষ। সুরের জগতে তাঁর অবদানের জন্যই এই সম্মান দেওয়া হয়েছিল তাঁকে।

(Feed Source: news18.com)