
বর্ধমান: পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের গোপালপুর মুক্তকেশী বিদ্যালয় রবিবারও খোলা থাকে। পঠনপাঠন হয় অন্যান্য দিনের মতো। সোমবার ছুটি এখানে। ইংরেজদের সানডে ছুটির নিয়ম মানতে চাননি তৎকালীন স্কুল কর্তৃপক্ষ। তাই এই অদ্ভুত নিয়ম।
গান্ধীজির অসহযোগ আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এই স্কুল। স্থানীয় শিশু কিশোরদের শিক্ষিত করে তোলার সংকল্প নিয়ে এই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামীরা। বিদেশি সংস্কৃতি ও ভাবধারা বর্জন করাই ছিল লক্ষ্য। প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের সম্মান জানিয়েই এই নিয়ম ধরে রেখেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।
একশো বছর আগের কথা। তখন বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতায় দেশ জুড়ে চলছে গান্ধীজির নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলন। সেই আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ আছড়ে পড়েছিল পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের গোপালপুর গ্রামে। সেই আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে ১৯২২ সালে তৈরি হয়েছিল গোপালপুর মুক্তকেশী বিদ্যালয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠাতার দেশপ্রীতির ভাবনাকে মান্যতা দিয়ে গোপালপুর মুক্তকেশী বিদ্যালয় আজও পুরনো নিয়ম মেনেই চলে।
বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র বর্তমান শিক্ষক সমীরকুমার ঘোষাল জানান, গোপালপুর গ্রাম প্রাক স্বাধীনতা যুগে অশিক্ষা এবং অনুন্নয়নের অন্ধকারে ঢাকা ছিল। শিক্ষালাভের জন্য গ্রামে একটা পাঠাশালা পর্যন্ত ছিল না। গোপালপুর গ্রামের বাসিন্দা দেশপ্রেমিক অবিনাশচন্দ্র হালদার দেশীয় ভাষায় নিজের গ্রামের মানুষজনকে শিক্ষার আলোকে আনার সংকল্প গ্রহণ করেন। তিনি নিজের জমিতেই বিদ্যালয় গড়ার সিদ্ধান্ত নেন। খেজুর গাছের গোড়া, বাঁশ ও খড় দিয়ে অবিনাশবাবু তৈরি করে ফেলেন একটি আটচালা স্কুল। ১৯২২ সালের ৫ জানুয়ারি সেখানেই শুরু হয় পঠনপাঠন।
নিজের আরাধ্য দেবী মুক্তকেশী স্মরণে অবিনাশ হালদার তাঁর প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়ের নাম রাখেন গোপালপুর মুক্তকেশী বিদ্যালয়। অনেক চেষ্টায় স্কুল তৈরি হলেও ইংরেজি পড়ানোর ব্যবস্থা না থাকায় সেই সময়ে এই স্কুলটিকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় স্বীকৃতি দেয়নি। তবে তাতে দমে যাননি প্রতিষ্ঠাতা। গ্রামের সমমনস্ক মানুষদের নিয়ে প্রচার শুরু করেন। অবশেষে ফলও মেলে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সাড়া দিয়ে অভিভাবকরা তাঁদের সন্তানদের এই স্কুলে পড়াতে পাঠানো শুরু করেন।
