বাংলাদেশঃ ঈশ্বরগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের বেহাল দশা

বাংলাদেশঃ  ঈশ্বরগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের বেহাল দশা

এহসানুল হক,ঈশ্বরগঞ্জ : যাত্রী আছে,ট্রেন নেই। স্টেশন আছে, স্টেশনের যাত্রী ছাউনির টিন নেই। স্টেশন মাস্টারের রুম আছে, মাস্টার নেই। স্টেশনে ডাস্টবিন আছে, তার ব্যবহার নেই। এমনই চিত্র দেখা গেছে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার রেলওয়ে স্টেশনে।

সরজমিনে পরিদর্শন করে জানা যায়, স্টেশন মাষ্টার ও ট্রেন সংকটে মাস দেড়েক ধরে তালা ঝুলছে উপজেলার ঈশ্বরগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনে। ফলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্টেশনে আগত যাত্রীদের।

ট্রেন কখন আসবে, কোথায় আছে, কোনো সমস্যায় ট্রেন আসবে কি আসবেনা তা এ স্টেশনের যাত্রীরা জানতে পারেনা। স্টেশন মাস্টার না থাকায় বিক্রি হয়না টিকেট, যাত্রী ওয়েটিং রুম ও পাবলিক টয়লেট থাকে তালাবদ্ধ। অবৈধভাবে রেললাইনের উপর শুকানো হচ্ছে খড়।

জানা যায়, ময়মনসিংহ-গৌরিপুর-ভৈরব রেলপথটি এ উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে গেছে। ১১টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার এ উপজেলার মধ্যে মোট ৩টি রেলওয়ে স্টেশন রয়েছে। স্টেশনগুলো হলো-ঈশ্বরগঞ্জ, সোহাগী ও আঠারোবাড়ি রেলওয়ে স্টেশন।

এদিকে ঈশ্বরগঞ্জ স্টেশনে যাত্রা বিরতি করে লোকাল ময়মনসিংহ এক্সপ্রেস, ঈশা খাঁ এক্সপ্রেস ও মেইল ট্রেন। গত দেড় মাস যাবৎ ঈশ্বরগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনে কোন ট্রেনের স্টপেজ না থাকায় বন্ধ রয়েছে স্টেশনটি।

কন্ট্রোল ওয়ার্ডারে স্টেশন মাস্টার কে নিয়ে যাওয়া হয়েছে কিশোরগঞ্জ। এ অঞ্চলের অন্যতম প্রধান যানবাহন ট্রেন হওয়ায় বিঘ্নিত হচ্ছে যাত্রীসেবা। তার বিরুপ প্রভাব পড়েছে স্থানীয় ব্যবসা বাণিজ্যে।

স্থানীয়রা জানান, কন্ট্রোল ওর্ডারের কারণে স্টেশন মাস্টার মিজানুর রহমান সাময়িক কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনে দায়িত্ব পালন করছে।

ফলে বর্তমানে ঈশ্বরগঞ্জ স্টেশনটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পরে আছে। স্টেশন মাস্টারের অফিস তালাবদ্ধ, বন্ধ টিকিট কাউন্টার, ওয়েটিং রুম, টয়লেটসহ সকল যাত্রী সেবা বঞ্চিত এ এলাকার ট্রেন যাত্রীরা।

সম্প্রতি দেখা গেছে, স্টেশনে লোকাল ট্রেনের অপেক্ষায় প্রতিদিন নানান দুর্ভোগের শিকার হতে হয় যাত্রী সাধারনকে। ট্রেনের অপেক্ষায় থাকা যাত্রীরা দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে অবশেষে বাড়ি ফিরে যেতে হচ্ছে। কেউ কেউ আবার বিকল্প রাস্তায় দেশের বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত করেতে বাধ্য হচ্ছে।

ট্রেনের অপেক্ষায় বিরক্ত হয়ে অনেক যাত্রীকে স্টেশন ত্যাগ করতে দেখা যায়। এতে একদিকে নষ্ট হচ্ছে তাদের সময়, অপরদিকে পরিচর্যার অভাবে নষ্ট হচ্ছে স্টেশনের অবকাঠামো।

স্থানীয় ব্যবসায়ী শাবিকুল মিয়ার সাথে কথা বলে জানা যায়, এ এলাকার ডিম, কাঁচামালসহসহ বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়ে বিক্রি করা হয়। ট্রেনের মাধ্যমে এ পণ্য গুলো ঢাকায় পৌঁছানো হতো। এখন ট্রেন সার্ভিস না থাকায় বিপাকে পরেছেন উপজেলার কৃষকসহ সকল ব্যবসায়ী।

এ এলাকার যাত্রী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দুর্ভোগ লাঘবের জন্য বন্ধ থাকা ঈশ্বরগঞ্জ স্টেশনে মাস্টার ও অন্যান্য কর্মচারি নিয়োগ দেওয়া সহ আন্তঃনগরসহ সকল ট্রেন সার্ভিস চালু করার মাধ্যমে পুনঃরায় স্টেশনটি সচল করার জন্য রেল কর্তৃপক্ষের কাছে এলাকাবাসীর দাবী।

এ উপজেলার চাকুরীজীবী, শিক্ষার্থী সহ বিভিন্ন পেশার মানুষ প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাতায়াত করে নিয়মিত।

ঈশ্বরগঞ্জ রেল স্টেশনের প্রিমেন্ট সুমন বলেন, নতুন করে মাস্টার নিয়োগ না দেয়া পর্যন্ত এ দুর্ভোগ থেকে উত্তরণের কোন সম্ভাবনা নেই।

সদ্য বদলি হওয়া স্টেশন মাস্টার মিজানুর রহমান জানান, লোকবল সংকটে আপাতত বন্ধ আছে ঈশ্বরগঞ্জ স্টেশন। আমাকে ঈশ্বরগঞ্জ থেকে কন্ট্রোল ওয়ার্ডারের মাধ্যমে কিশোরগঞ্জ নিয়ে আসায় এখন কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনে দায়িত্ব পালন করছি।

এবিষয়ে জানতে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোসা. হাফিজা জেসমিন জানান, বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

(Source: sunnews24x7.com)