গত বছরের প্রতিশ্রুতি কি পূরণ হয়েছে? বাজেটের আগে দেখে নেওয়া যাক পুঙ্খানুপুঙ্খ!

গত বছরের প্রতিশ্রুতি কি পূরণ হয়েছে? বাজেটের আগে দেখে নেওয়া যাক পুঙ্খানুপুঙ্খ!

কলকাতা: ২০২৪ লোকসভা ভোটের আগে মোদি সরকারের এটাই শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট। কিন্তু গত বছরের প্রতিশ্রুতি কি পূরণ হয়েছে? কতটা অগ্রগতি করেছে সরকার? কতটা এগিয়েছে দেশ? সরকারি পরিসংখ্যানের আলোকেই দেখে নেওয়া যাক প্রতিশ্রুতি পূরণের বাস্তবতা।

অর্থনৈতিক বৃদ্ধি এবং ব্যয়ের প্রতিশ্রুতি: ২০২২ সালে বাজেট পেশের সময় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ বলেছিলেন, বর্তমান অর্থবর্ষে (২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত) ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আনুমানিক ৯.২ শতাংশ হবে। যা সমস্ত বড় অর্থনৈতিক দেশগুলির মধ্যে সর্বোচ্চ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর বিশ্ব জুড়ে মন্দা এবং জ্বালানির দাম বৃদ্ধির আশঙ্কায় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া গত ডিসেম্বরেই প্রবৃদ্ধির অনুমান কমিয়ে করে ৬.৮ শতাংশ। তা স্বত্বেও বিশ্ব ব্যাঙ্ক বলেছে, ভারত বিশ্বব্যাপী ৭টি বৃহত্তম উদীয়মান এবং উন্নয়নশীল অর্থনীতির মধ্যে ‘দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি’ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এখানেই শেষ নয়, আইএমএফ-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর ক্রিস্টালিনা জর্জিভা চলতি মাসেই বলেন, ভারতের অর্থনীতি ‘বিশ্বব্যাপী গড়ের চেয়ে ভাল’ পারফর্ম করছে।

এবার সরকারি পরিসংখ্যানে চোখ বোলানো যাক। সেখানে দেখা যাচ্ছে, ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধি আর্থিক বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে ১৩.৫ শতাংশ ছিল (২০২২ সালের শুরুতে)। কিন্তু দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে তা ৬.৩ শতাংশে নেমে আসে। কারণ জ্বালানির দাম এবং কাঁচামালের খরচ বৃদ্ধির ফলে উৎপাদন খাত ধীর হয়ে যায়। নোমুরা ফিনান্সিয়াল সার্ভিস গ্রুপের ড. অরদীপ নন্দী বলছেন, ফিসক্যাল ম্যাথের ওঠানামার কারণেই এমনটা হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘রাজস্ব ঘাটতির লাভের সঙ্গে ব্যয়ও বেড়েছে। সরকার ব্যয় কমানোর চেষ্টা করছে। আসল কথা হল, রাজস্ব কর এবং উচ্চ জিডিপি প্রবৃদ্ধির ভারসাম্য রাখা।’

ভারতের রাজস্ব ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা – মোট ব্যয় এবং রাজস্বের মধ্যে পার্থক্য যা সরকার জিডিপির ৬.৪ শতাংশ রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল – রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পরিসংখ্যান অনুসারে এখনও পর্যন্ত সেই স্তর বজায় রাখা সম্ভব হয়েছে। এই বছর লক্ষ্যমাত্রা ২০২০ (৯.১ শতাংশ) এবং ২০২১ (৬.৭ শতাংশ)-এর চেয়ে কম নির্ধারণ করা হয়। কারণ করোনার জেরে সরকারের ব্যয় বৃদ্ধি। যাই হোক, উচ্চ আমদানি ব্যয় এবং খাদ্য, জ্বালানি ও সারের উপর ভর্তুকির কারণে চলতি অর্থবর্ষে ব্যয় ৩৯.৪৫ ট্রিলিয়ন রুপি রাখার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ড. নন্দী বলছেন, ‘চলতি অর্থবর্ষের শেষ নাগাদ সরকার তার বাজেটকৃত ব্যয় জিডিপির ১.১ শতাংশ অতিক্রম করে যাবে’।

জনকল্যাণের প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি: ২০১৫ সালে শুরু হয় প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্রকল্প। দেশের সমস্ত মানুষকে মাথার উপর ছাদ দেওয়াই এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য। গত বছর অর্থাৎ ২০২২-২৩ সালের বাজেটে শহর ও গ্রামে ৪ মিলিয়ন বাড়ি নির্মাণের জন্য ৪৮০ বিলিয়ন রুপি বরাদ্দ করা হয়েছিল। শহরে এই প্রকল্পের দেখভাল এবং বাস্তবায়নের দায়িত্বে আবাসন ও নগর বিষয়ক মন্ত্রক। গত বছরের অগাস্টেই তারা সরকারের কাছে এই প্রকল্পের সময়সীমা বাড়ানোর আবেদন করে। আরও আর্থিক সহায়তাও চাওয়া হয়। এর পরই বাড়ি নির্মাণের সময়সীমা ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

চলতি অর্থবর্ষে ২০২২-এর ১ এপ্রিল থেকে ২০২৩ সালের ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রাপ্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে, শহরাঞ্চলে ১.২ মিলিয়ন এবং গ্রামীণ এলাকায় ২.৬ মিলিয়ন বাড়ি নির্মাণ করেছে সরকার। অর্থাৎ ৪.২ মিলিয়ন বাড়ি তৈরির যে লক্ষ্যমাত্রা সরকার নিয়েছিল তা পূরণ হয়নি।

অন্য দিকে, ২০২২-২৩ সালে বাড়ি বাড়ি জল দেওয়ার লক্ষ্যে ৩৮ মিলিয়ন পরিবারের জন্য ৬০০ বিলিয়ন রুপি বরাদ্দ করেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। জলসম্পদ মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত ১৭ মিলিয়ন পরিবারের জলের সংযোগ পেয়েছেন। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকও পূরণ হয়নি। ২০১৯ সালের অগাস্ট মাসে এই প্রকল্প চালু হয়। তার পর থেকে এখনও পর্যন্ত এই প্রকল্পে ৭৭ মিলিয়ন পরিবার জলসংযোগ পেয়েছেন।

রাস্তা তৈরি হচ্ছে ঢিমেতালে: গত বছর অর্থমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, ২০২২-২৩ সালে আরও ২৫ হাজার কিমি ন্যাশনাল হাইওয়ে তৈরি হবে। এর মধ্যে ভাঙাচোরা রাস্তা সারানো এবং স্টেট হাইওয়েগুলিকে ন্যাশনাল হাইওয়ে হিসেবে ঘোষণাকেও ধরা হবে। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক মন্ত্রণালয় এই অর্থবছরে ১২ হাজার কিলোমিটার (৭,৪৫৬ মাইল) নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। কিন্তু মন্ত্রকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে মোট ৫,৭৭৪ কিমি (৩,৫৮৮ মাইল) ন্যাশনাল হাইওয়ে তৈরি হয়েছে। এক্ষেত্রেও লক্ষ্যমাত্রা অর্ধেকও পূরণ হয়নি। অবশ্য এর মধ্যে জানুয়ারির পরিসংখ্যান নেই। বিগত বছরগুলির তথ্য অনুসারে, দৈনিক নির্মাণের গতি ২০২১-২২ সালে প্রতিদিন ২৯ কিমি এবং ২০২০-২১ সালে গড়ে ৩৭ কিমি থেকে এই বছর গড়ে প্রায় ২১ কিমি (১৩ মাইল) হয়েছে৷

(Feed Source: news18.com)