নয়াদিল্লি: একটি ইনভেস্টিগেশনাল ট্যাবলেট কোভিড টিকা তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা। এই টিকা কেবল হোস্টকেই রক্ষা করে না, ভাইরাসের বায়ুবাহিত বিস্তারকেও কমাতে পারে। টিকাটি পশুদের মধ্যে পরীক্ষা করা হয়েছিল। এই টিকা করোনাভাইরাসকে মেরে ফেলতে মিউকোসাল টিস্যুর মাধ্যমে (Mucosal Tissue) কাজ করে, সংক্রমণ সীমিত করে এবং বাতাসে ভাসমান ভাইরাসের বিস্তারকে সীমিত করে। ডিউক ইউনিভার্সিটির (Duke University) সার্জারি বিভাগের মেডিকেল প্রশিক্ষক ও গবেষক স্টেফানি এন ল্যাঞ্জেলের (Stephanie N Langel) নেতৃত্বে হওয়া গবেষণাটি সায়েন্স ট্রান্সলেশনাল মেডিসিন (Science Translational Medicine) জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
জার্নাল কী বলছে?
ডিউক ইউনিভার্সিটির এক বিবৃতিতে ল্যাঞ্জেলকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, “বিশ্বের বেশিরভাগ অংশেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকা মানুষজনের সংখ্যা বেশি। শিশুদের ক্ষেত্রে এটি বিশেষভাবে সত্য। টিকা নেওয়ার পরও কোনও ব্যক্তি দ্বিতীয়বার সংক্রমিত হলে সে অন্য কম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকা ব্যক্তিদেরও সংক্রমিত করতে পারে। পরিবার ও এলাকার অনেকেই সংক্রমিত হতে পারে। যা জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি তৈরি করে। এই টিকার ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য সুবিধা হল যে এটি শুধুমাত্র রোগের বিরুদ্ধেই সুরক্ষা দেয় না, টিকা না নেওয়া লোকেদের মধ্যেও সংক্রমণ কমিয়ে দেয়।”
ল্যাঞ্জেল এবং তাঁর সহকর্মীরা এই টিকাটি পরীক্ষা করেছেন। দলে রয়েছেন মার্কিন টিকা নির্মাতা ভ্যাক্সার্ট (Vaxart) ও অলাভজনক সংস্থা লাভলেস বায়োমেডিকাল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (Lovelace Biomedical Research Institute) বিজ্ঞানীরা। জানা গিয়েছে, নতুন এই টিকাটি করোনাভাইরাসের স্পাইক প্রোটিন প্রকাশ করতে ভেক্টর হিসাবে একটি অ্যাডেনোভাইরাস ব্যবহার করে। ল্যাঞ্জেল এক বিবৃতিতে বলেছেন, “এই ভ্যাকসিন থেকে যথেষ্ট উপকার হবে যা শুধুমাত্র রোগের বিরুদ্ধেই রক্ষা করবে না বরং টিকা না দেওয়া লোকেদের মধ্যে সংক্রমণ কমিয়ে দেবে।”
টিকা প্রয়োগের ফলাফল কী?
একটি হ্যামস্টারের উপর এই টিকা প্রয়োগ করার পর গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে টিকাটি রক্ত এবং ফুসফুসে একটি শক্তিশালী অ্যান্টিবডি রেসপন্স তৈরি করেছে। যখন কোনও প্রাণী উচ্চ মাত্রায় করোনাভাইরাসের সংস্পর্শে আসে, তখন টিকা নেওয়া থাকলেও সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে। এখানে হ্যামস্টারের মধ্যে তুলনায় কম উপসর্গ ছিল এবং নাক ও ফুসফুসে সংক্রামক ভাইরাসের পরিমাণও কম ছিল। এটাও দেখা গিয়েছে যে হ্যামস্টার বাতাসের মাধ্যমে বেশি ভাইরাস ছড়াতে পারেনি।
কী ভাবে ভাইরাসের বায়ুবাহিত বিস্তার আটকাবে এই টিকা?
পেশিতে ইনজেকশন দেওয়া টিকার তুলনায় ইমিউনোগ্লোবুলিন এ (Immunoglobulin A)-র উৎপাদন বাড়ায় মিউকোসাল ইমিউনাইজেশন (Mucosal Immunizations)। ইমিউনোগ্লোবুলিন এ হল নাক ও ফুসফুসে রোগজীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থার প্রথম ঢাল। টিকা নেওয়ার পর এই মিউকোসাল পোর্টগুলি সুরক্ষিত থাকে, যার ফলে যাদের টিকা দেওয়া হয়েছে তাদের হাঁচি বা কাশির সময় সংক্রামক ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
ল্যাঞ্জেল বলেছেন, “আমাদের ডেটা দেখিয়েছে যে বায়ুবাহিত সংক্রমণের মাধ্যমে কোভিডের বিস্তার কম করার জন্য মিউকোসাল ইমিউনাইজেশন একটি কার্যকর কৌশল।” গবেষকরা উল্লেখ করেছেন যে গবেষণাটি মূল করোনাভাইরাসের উপরেই করা হয়েছে। ওমিক্রন প্রজাতির বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেওয়ার জন্যও টিকা তৈরি করা হবে। গবেষণাটি বিল এবং মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন থেকে আর্থিক সহায়তা পেয়েছে।
করোনাভাইরাসের সব রূপের বিরুদ্ধেই সুরক্ষা দেবে এমন টিকা কি আছে?
মার্কিন সেনা (US Army) নতুন কোভিড টিকা তৈরি করেছে, যা সকল রূপের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে সক্ষম বলে দাবি! ‘মুনশট’ (Moonshot) নামে নতুন সিঙ্গল ডোজ (Single Dose) কোভিড টিকাটি করোনাভাইরাসের সমস্ত রূপগুলির বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী দ্বারা তৈরি করা হয়েছে। ট্রায়ালের প্রাথমিক ফলাফল পর্যালোচনা করার পর ডাবলিনের ট্রিনিটি কলেজের (Trinity College) অধ্যাপক লুক ও’নিল (Luke O’Neill) এই টিকাটিকে ‘চিত্তাকর্ষক’ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন যে ফলাফল যে কোনও দিন জনসমক্ষে প্রকাশ করা যেতে পারে। টিকাটি প্রথম প্রাণীদের উপর পরীক্ষা করা হয়েছিল। সাফল্যের পরে বর্তমানে এটি প্রথম পর্যায়ের মানব ট্রায়ালে রয়েছে।
অধ্যাপক ও’নিলের মতে, “এই টিকা বানরের উপরে পরীক্ষা করা হয়েছিল। আশ্চর্যজনকভাবে এটি করোনাভাইরাসের আলফা (Alfa), বিটা (Beta), ডেল্টা (Delta), ওমিক্রন (Omicron) থেকে রক্ষা করেছে। এটি বানরের মধ্যে থাকা ভাইরাসগুলির বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়। টিকাটি প্রথম পর্যায়ের মানব ট্রায়ালের মাঝখানে রয়েছে। যে কোনও দিন আমরা শীঘ্রই সেই প্রথম পর্যায়ের ট্রায়াল থেকে ডেটা পেতে যাচ্ছি।”