শেয়ারের দাম নেমেছে তলানিতে, ট্যুইটার নিয়ে চিন্তা-ভাবনা বদলাচ্ছেন না কি এলন মাস্ক

শেয়ারের দাম নেমেছে তলানিতে, ট্যুইটার নিয়ে চিন্তা-ভাবনা বদলাচ্ছেন না কি এলন মাস্ক

#নয়াদিল্লি: ২৫ এপ্রিল ট্যুইটার (Twitter) নিজেকে ৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের চুক্তিতে বিশ্বের ধনীতম ব্যক্তি এলন মাস্কের (Elon Musk) কাছে বিক্রি করতে সম্মত হওয়ার পর থেকেই এই মাইক্রো ব্লগিং প্ল্যাটফর্মের শেয়ার তাদের সর্বনিম্ন স্তরে নামতে শুরু করেছে। এলন মাস্ক চুক্তিটি পুনরায় পর্যালোচনা করার চেষ্টা করবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকে।

মঙ্গলবার, ট্যুইটারের শেয়ার ৪৬.৭৫ মার্কিন ডলারের নিচে নেমে যায়। এই সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানির বর্তমান মূল্য ৪ এপ্রিল এলন মাস্ক দ্বারা অংশীদারিত্ব ঘোষণা করার আগের চুক্তির মূল্য এবং শেয়ারের দামের মধ্যে মাঝামাঝি স্থানে রয়েছে।

কোম্পানিকে মোট ৩৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ভ্যালুয়েশনে রেখে ৪৭.২৬ মার্কিন ডলারে শেয়ার স্থগিত হয়েছে।

সংবাদমাধ্যমে মাস্ক প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের টুইটার অ্যাকাউন্টের উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। এই মন্তব্যের রাজনৈতিক তাৎপর্যপূর্ণতা থাকা সত্ত্বেও স্টকের কোনও পরিবর্তন হয়নি।

টেকনোলজি স্টকগুলির ব্যাপক পতনের সাথে ট্যুইটার শেয়ারও নিচে নেমে গিয়েছে। মুদ্রাস্ফীতি এবং সম্ভাব্য অর্থনৈতিক মন্দার কারণে এমনটা হচ্ছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের মতো কয়েকটি সংস্থার অনুমান অনুমান অনুযায়ী, এলন মাস্ক এবার ট্যুইটার চুক্তি অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে বিবেচনা করে দেখতে পারেন।

কেন এলন মাস্ক চুক্তিটি নিয়ে পুনর্বিবেচনা করতে পারেন?

ফোর্বস অনুসারে মাস্কের আনুমানিক নেট মূল্য ২৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তাঁর বেশিরভাগ সম্পদ টেসলা ইনকর্পোরেটেডের শেয়ারে রয়েছে যেটি তিনি নিজে নেতৃত্ব দেন।

মাস্ক ইতিমধ্যে ট্যুইটার অধিগ্রহণের জন্য নগদ সংগ্রহ করতে শুরু করে দিয়েছেন। তিনি ৮.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের টেসলার শেয়ার বিক্রি করেছেন এবং টেসলার স্টকের বিপরীতে ১২.৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়েছেন। গত সপ্তাহে তিনি সহ-বিনিয়োগকারীদের আনার পর সেই ঋণের অঙ্ক কমিয়ে ৬.২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে নিয়ে যান। মাস্ক একটি নিয়ন্ত্রক ফাইলিংয়ে বলেছেন যে তিনি এই চুক্তির জন্য আরও ফান্ড চাইতে পারেন।

যদিও মাস্ক বলেছেন যে তিনি ট্যুইটার কেনার জন্য টাকার বিষয়ে চিন্তা করছেন না। বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, টেসলার শেয়ারে মাস্কের অংশীদারত্ব ভাগ ঘোষণার পর স্টকের মূল্য ২৭ শতাংশ নিচে নেমে গিয়েছে ফলে ভবিষ্যতে তাকে আরও শেয়ার বিক্রি করতে হতে পারে। যদি মাস্ক কম অধিগ্রহণের মূল্য নিয়ে আলোচনা করেন তাহলে টেসলার স্টক কম চাপে থাকবে। সহ-বিনিয়োগকারীরা যদি অতিরিক্ত অর্থ প্রদানের বিষয়ে চিন্তিত হন তবে তাঁরা তাঁকে উৎসাহ দিতে পারেন।

মাস্ক কীভাবে কম মূল্য নিয়ে আলোচনা করতে পারেন?

ট্যুইটার বোর্ড চুক্তির মূল্য নিয়ে পুনর্বিবেচনা করতে সম্মত না হলে মাস্ক চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার হুমকি দিতে পারেন। তিনি চুক্তিগতভাবে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্রেক-আপ ফি দিতে বাধ্য কিন্তু ট্যুইটারকে তার থেকে বেশি ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য মামলা করতে হবে বা মাস্ককে চুক্তিটি সম্পূর্ণ করতে বাধ্য করার চেষ্টা করতে হবে।

অতীতে এই জাতীয় ব্যবসায়িক পুনর্বিবেচনার অনেক নজির আছে। ২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারী শুরুর দিকে যখন গ্লোবার অর্থনীতিতে ধস নামার পর অনেক কোম্পানির চুক্তির পুনর্বিবেচনা করে মূল্য কমানো হয়েছে।

উদাহরণস্বরূপ, ফরাসি খুচরো বিক্রেতা LVMH Tiffany & Co একটি চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার হুমকি দেয়। মার্কিন জুয়েলারি খুচরো বিক্রেতা অধিগ্রহণের মূল্য ৪২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার কমিয়ে ১৫.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে নিয়ে যায়।

সাইমন প্রপার্টি গ্রুপ আইএনসি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় মল অপারেটর তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী টবম্যান সেন্টারস ইনকর্পোরেটেডের একটি নিয়ন্ত্রক অংশের ক্রয় মূল্য ১৮ শতাংশ কমিয়ে ২.৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে করতে নিয়ে যায়।

পুনর্বিবেচনায় কি কোনও ঝুঁকি রয়েছে?

পুনর্বিবেচনা করতে গেলে সবসময় যে লাভ হবে তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। উল্টে এলন মাস্কের আরও বেশি অর্থ ব্যয় হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।

প্রথমত, এলন মাস্ককে ট্যুইটারকে বোঝাতে হবে যে তিনি সত্যিই চুক্তিতে থেকে সরে যেতে চান। এছাড়া রয়েছে আইনি বাধ্যবাধকতা যার মধ্যে অন্যতম হল ‘Specific Performanace’ ধারা। এই ধারা মেনে সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থা ট্যুইটার এলন মাস্ককে চুক্তিটি সম্পন্ন করার জন্য বাধ্য করতে পারে।

তবে এলন মাস্ক নিজে পুনরায় চুক্তিটি বিবেচনা করার কোনও ইঙ্গিত দেননি এবং তাঁর প্রতিনিধিরাও এই বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করছেন- দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কী হয়!

(Source: news18.com)