ভ্যালেনটাইন্স ডে-র আগে গরু আলিঙ্গন বিতর্ককে টেনে এনে বিজেপিকে ‘গুঁতো’ মমতার

ভ্যালেনটাইন্স ডে-র আগে গরু আলিঙ্গন বিতর্ককে টেনে এনে বিজেপিকে ‘গুঁতো’ মমতার

কলকাতা: গরুকে আলিঙ্গন করলে যদি গুঁতোয়?  আলিঙ্গন করতে বলার আগে ১০ লাখ বীমা করে দিক কেন্দ্র। ভ্যালেন্টাইনস ডে-র আগের দিনে গরু আলিঙ্গন বিতর্ককে বিধানসভায় টেনে এনে বিজেপিকে আক্রমণ  মুখ্যমন্ত্রীর।

ভ্যালেন্টাইনস ডে তথা প্রেম দিবস নিয়ে দেশের মানুষের  হুড়োহুড়ি কখনওই ভাল চোখে দেখে না গেরুয়া শিবির। পাশ্চাত্যের এই ধারকরা বাণিজ্যিক সংস্কৃতি থেকে চোখ সরাতে নরমে গরমে চেষ্টা জারি রেখেছে বিজেপি ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মতো  হিন্দুত্ববাদী গেরুয়া বাহিনী। ভ্যালেন্টাইনস ডে-তে  লাভ জেহাদের মতো বিষয়কে প্রচারে এনে ভ্যালেন্টাইনস ডের বিরোধিতা নতুন কিছু নয় গেরুয়া শিবিরের কাছে।

কিন্তু, এবার ভ্যালেন্টাইনস ডে-র বিরোধিতায় গরুকে আলিঙ্গন করার কথা বলে রীতিমতো হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিল কেন্দ্রীয় পশু কল্যাণ বোর্ড। বোর্ডের এই নির্দেশিকার পরেই কেন্দ্রীয় সরকারি এই সংস্থার ফরমানকে নিয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয় দেশজুড়ে। আমাদের রাজ্যও তার ব্যাতিক্রম নয়। রাজনৈতিক কারণেই  বাম, কংগ্রেস, তৃণমূল নেমে পড়েছে শিক্ষা, সংস্কৃতির গেরুয়াকরণের প্রতিবাদে। যদিও, দেশজুড়ে এই ইস্যুতে জলঘোলা হতে শুরু হওয়ার পর, নির্দেশিকা প্রত্যাহার করে নিয়েছে কেন্দ্রীয় পশু কল্যাণ বোর্ড। তবে,  নির্দেশিকা ফিরিয়ে নিলেও, এই নিয়ে সমালোচনা থেমে নেই। থেমে নেই কেন্দ্রীয় সংস্থাকে সামনে রেখে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে নিশানা করা।

সোমবার বিধানসভায় রাজ্যপালের ভাষনের জবাবি ভাষনে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে কটাক্ষ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের শিক্ষা, সংস্কৃতির সমালেচনা করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী টেনে আনেন গরু আলিঙ্গনের প্রসঙ্গ। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এরা গরুকে আলিঙ্গন করতে বলছে।  গরুকে আলিঙ্গন করতে গেলে যদি গুঁতোয় তাহলে তার দায় কে নেবে? রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্যসাথী কার্ড আছে। আহত হলে আমরা চিকিৎসা দিতে পারি। কিন্তু, যারা এই আলিঙ্গনের কথা বলছে তাঁদের বলুন হ্যাঁ, গরুকে আলিঙ্গন করব। তার আগে ১০ লাখ টাকার বিমা করে দিতে। তারপর না  হয় গরুকে আলিঙ্গন করা যাবে।’

এখানেই শেষ নয়,মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘শুধু গরু কেন?  মহিষেরও তো বড় শিং আছে। তাকেও আলিঙ্গনের করার কথা কেন্দ্রকে ভেবে দেখতে অনুরোধ করছি।’ নাম না করে কেন্দ্রের বিজেপি নেতৃত্বের বোধবুদ্ধিকে কটাক্ষ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কী বুদ্ধি রে বাবা!  ভ্যালেন্টাইনস ডে-তে এমন ভাবনা!’

বিরোধী শূন্য সদনে,  রাজ্যপালের ভাষন বিতর্কে বিধানসভায় জবাবি ভাষন দিচ্ছিলেন মমতা। কিছুক্ষণ আগেই, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্যের জেরে সভায় উত্তেজনা তৈরি হয়। শুভেন্দুকে নিশানা করেন মুখ্যমন্ত্রী। দলের মন্ত্রী, বিধায়করাও পাল্টা হৈ চৈ জুড়ে দেন সদনে। বিজেপি ওয়াক আউট করে সদন ছেড়ে গেলেও, সদনে তখনও উত্তেজনার আঁচ। সেই গুমোট পরিবেশে আচমকাই বয়ে গেল একটা দমকা হাওয়া।  মুখ্যমন্ত্রীর ভাষনে উঠে এল গরু আলিঙ্গনের প্রসঙ্গ। মুখ্যমন্ত্রীর সরস কটাক্ষে রাজনীতি ভুলে তখন হেসে লুটোপুটি খাচ্ছেন শাসক দলের বিধায়করা।

কেন্দ্রীয় পশু কল্যাণ বোর্ডের গরু  অলিঙ্গন নিয়ে আগেই সরব হয়েছিল বাম প্রভাবিত পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের মতো সংস্কার বিরোধী মঞ্চ৷ কেন্দ্রীয় বোর্ডের এই ফরমানের পেছনে সংস্কৃতির গেরুয়াকরণের অভিযোগ তুলে নিন্দা করেছিল তারা। বিজ্ঞান মঞ্চের মতে, ‘বিজ্ঞানকে পিছনে ঠেলে সংস্কারকে এগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ভ্যালেটাইনস ডে একটা মানবিক ও জৈবিক সম্পর্কের রসায়ন। তাকে গেরুয়া সংস্কারবাদী মানসিকতা দিয়ে  গরু, গোমাতা ইত্যাদির সঙ্গে গুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যা খুবই নিন্দনীয়।’

(Feed Source: news18.com)