বিরাট সঙ্কটে মার্কিন মুলুকের সিলিকন ভ্যালি ব্যাঙ্ক! ২০০৮-এর মতো মন্দা আসছে নাকি?

বিরাট সঙ্কটে মার্কিন মুলুকের সিলিকন ভ্যালি ব্যাঙ্ক! ২০০৮-এর মতো মন্দা আসছে নাকি?

আর্থিক সংকটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাঙ্ক (SVB)। সেদেশের বহু স্টার্টআপ, নতুন সংস্থার মূল ঋণদাতা এই ব্যাঙ্ক। SVB-র বর্তমানে পরিস্থিতিকে বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ বর্তমান পরিস্থিতিকে লেম্যান ব্রাদার্স এবং এভারগ্রান্ডের লিকুইডিটি সংকটের সঙ্গে তুলনা করেছেন।

এক দশকেরও আগে শেষবার এত বড় আর্থিক সংকট হয়েছিল। কী হয়েছিল? সেই সময়ে ওয়াশিংটন মিউচুয়ালের ধসের কাণ্ডে কেঁপে গিয়েছিল গোটা মার্কিন বাজার। বিশেষজ্ঞদের মতে, সেই সময়ের পর থেকে এটিই সবচেয়ে বড় এমন ঘটনা।

সিলিকন ভ্যালি ব্যাঙ্ক গত এক বছরে প্রযুক্তি ক্ষেত্রে মন্দায় জোর ধাক্কা খেয়েছে। করোনা ও তার পরের বছরে প্রযুক্তি ক্ষেত্রে দরাজ হাতে তহবিল জুগিয়েছে SVB-এর মতো বড় সংস্থাগুলি। কিন্তু গত এক বছরে ছবি পাল্টে গিয়েছে। মুনাফার অভাবে ধুঁকছে বেশিরভাগ প্রযুক্তি স্টার্টআপ-ই। এর পাশাপাশি মুদ্রাস্ফীতি মোকাবিলায় সুদের হার বাড়ানো নিয়ে ফেডারেল রিজার্ভের আগ্রাসী পরিকল্পনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

SVB-র সিকিউরিটিজ পোর্টফোলিও ভয়ানক লোকসানের সম্মুখীন হয়েছে। এর পাশাপাশি ফান্ডিংয়ে টান পড়েছে। ফলে মূলধন সংগ্রহ করার প্রচেষ্টা শুরু করতেই SVB ফাইন্যান্সিয়াল গ্রুপের বন্ড ও শেয়ারে পতন শুরু হয়েছে।

এমন সময়ে টাকা জোগাড় করতে শেয়ার বিক্রির ঘোষণা করে তারা। বৃহস্পতিবার, ক্যালিফোর্নিয়ার SVB ফাইন্যান্সিয়াল গ্রুপের শেয়ার রেকর্ড পতনের সম্মুখীন হয়। গত ২০ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে এটিই সবচেয়ে বেশি পতন। সিলিকন ভ্যালি ব্যাঙ্কের মালিক সংস্থার এখন একটাই লক্ষ্য। যেন-তেন প্রকারেণ সংস্থার আর্থিক অবস্থানকে শক্তিশালী করা। আর সেই কারণেই একগুচ্ছ পদক্ষেপ নিয়েছে তারা। তার মধ্যেই একটি হল এই স্টক বিক্রি। কিন্তু সংস্থা নিজেই যদি তার অংশীদারিত্ব কমায়, তাহলে সেই শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের মনও উঠে যায়। তার ফলেই শেয়ারের দরের এই বিপুল পতন।

SVB ফাইন্যান্সিয়ালের শেয়ার প্রায় ৬০% হ্রাস পেয়েছে। এদিকে তহবিল সংগ্রহের জন্য সিকিউরিটিজ বিক্রি করতে গিয়েও তারা প্রায় ১.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের লোকসান করেছে।

SVB জানিয়েছে, তারা তাদের বিক্রিযোগ্য প্রায় ২১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের (AFS) সিকিউরিটিজ বিক্রি করে দিয়েছে। তাতেই এই ১.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের লোকসান হয়েছে। অন্যদিকে ইক্যুইটি ও ঋণের মাধ্যমে আরও ২.২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার তুলছে তারা। সংস্থার এই কার্যকলাপে হয় তো কিছুটা অবাকই হয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। তাঁদের অনেকেরই ধারণা ছিল যে SVB-এর কাছে যথেষ্ট টাকা রয়েছে। এখনই রাতারাতি AFS পোর্টফোলিও বিক্রির মতো জায়গায় যেতে হবে না। আসলে এই পোর্টফোলিও থেকে গড় ১.৭৯% রিটার্ন মিলছিল। যা কিনা বর্তমানের ১০ বছরের ট্রেজারি আয়ের ৩.৯% হারের তুলনায় অনেকটাই কম।

এটা কি সেই ২০০৮ সালের মার্কিন মন্দার পুনরাবৃত্তির ইঙ্গিত?

এই মুহুর্তে উত্তর হল, ‘না’। বিশেষজ্ঞদের মতে, এখনও বৃহত্তর ব্যাঙ্কিং সেক্টরে কোনও সমস্যার সম্ভাবনা নেই। সার্বিকভাবে ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা এখনও যথেষ্ট শক্তিশালী আছে।

SVB শুধুমাত্র প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের সঙ্গে জড়িত সংস্থাগুলিতেই বেশি টাকা ঢেলেছিল। আর সেই কারণেই সেই ক্ষেত্রে মন্দা আসতেই তারাও ডুবে গিয়েছে। কিন্তু অন্য ঋণদাতা ও বিনিয়োগকারীদের পোর্টফোলিও অনেক বেশি বিস্তৃত। আর সেই কারণেই তাদের ক্ষেত্রে এই ভয়টা আপাতত নেই।

(Feed Source: hindustantimes.com)