সময়ে চিকিৎসা না হলে খোয়া যেতে পারে দৃষ্টিশক্তি! গ্লুকোমার ঝুঁকি কমাতে কী করবেন?

সময়ে চিকিৎসা না হলে খোয়া যেতে পারে দৃষ্টিশক্তি! গ্লুকোমার ঝুঁকি কমাতে কী করবেন?

কলকাতা: শুরু হয়েছে ‘বিশ্ব গ্লুকোমা সপ্তাহ’। প্রতি বছর মার্চে মানুষকে সচেতন করতেই এটা পালন করা হয়। এর জন্য চলতি বছরে বিখ্যাত চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে অ্যালার্জেন (Allergan, an AbbVie company) নামের একটি অ্যাবভি সংস্থা। এই রোগ যাতে দ্রুত ধরা পড়ে এবং সময়ে চিকিৎসা শুরু করা যায়, তার গুরুত্বের উপরেই মূলত জোর দেওয়া হচ্ছে। এখানেই শেষ নয়, ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ এবং প্রতিরোধের ক্ষেত্রে কী কী পদক্ষেপ করা জরুরি, সেই বিষয়টার উপরেও আলোকপাত করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ ছাড়া চিকিৎসা ব্যবস্থায় যে অগ্রগতি ঘটেছে, সেটাও তুলে ধরেছেন তাঁরা।

গ্লুকোমা কী? এটা আসলে চোখের একটা অবস্থা। যা সময়ে সারানো না হলে গুরুতর সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনকী, দৃষ্টিশক্তি পর্যন্ত হারিয়ে ফেলতে পারেন রোগী। গ্লুকোমা রোগের কারণে অপটিক নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রসঙ্গত, অপটিক নার্ভ বা অপটিক স্নায়ুর মাধ্যমেই চোখের থেকে দৃষ্টিগোচর তথ্য আমাদের মস্তিষ্কে পৌঁছয়। আর গ্লুকোমা রোগটি সময়ের সঙ্গে বাড়তে থাকে। যার ফলে ধীরে ধীরে রোগী পেরিফেরাল দৃষ্টিশক্তি হারাতে শুরু করেন। আর চিকিৎসা না হলে তো দৃষ্টিশক্তিও চলে যেতে পারে।

সারা বিশ্ব জুড়ে দৃষ্টিহীনতার প্রথম কারণ অবশ্য ক্যাটারাক্ট। তবে গ্লুকোমা কিন্তু বিশ্বব্যাপী অন্ধত্বের সমস্যার দ্বিতীয় প্রধান কারণ। ২০১২ সালের পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বের প্রায় ৪৫ লক্ষ মানুষ গ্লুকোমার কারণে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন। আর আমাদের দেশে গ্লুকোমায় আক্রান্ত ১.২ কোটি রোগীর মধ্যে প্রায় ১২ লক্ষ মানুষ দৃষ্টিশক্তি খুইয়েছেন। তা সত্ত্বেও অনেক বড় ক্ষেত্রেই গ্লুকোমা রোগ সময়ে নির্ণয় করা যায় না।

দেশের বর্তমান গ্লুকোমা পরিস্থিতি প্রসঙ্গে নেত্রালয়মের ডিরেক্টর ডা. মণীশ সিং জানাচ্ছেন যে, “সচেতনতার অভাব এবং নিয়মিত চক্ষু পরীক্ষা না-হওয়ার কারণে গ্লুকোমা রোগ নির্ণয় করা যায় না। আবার গ্লুকোমা রোগের ছবিটা ভারতের গ্রামাঞ্চল এবং শহরাঞ্চলে এক রকম নয়। আগামী সময়ে নানা কারণে আমাদের দেশে গ্লুকোমা রোগীর সংখ্যা বাড়বে। তাই এখনই সচেতনতা বাড়াতে হবে।”

কলকাতা সেন্টার ফর সাইটের গ্লুকোমা ও ক্যাটারাক্ট সার্ভিসেসের কনসালট্যান্ট অপথ্যালমোলজিস্ট ডা. দেবাশিস চক্রবর্তীর কথায়, “মানুষের মধ্যে গ্লুকোমা নিয়ে নানা ভুল ধারণা রয়েছে। যার ফলে চিকিৎসা করাতে আসতে চান না রোগীরা। আবার এই রোগ শুধুমাত্র বয়স্কদেরই আক্রমণ করে, এই ধারণাটাই তো ভুল। যে কোনও বয়সের মানুষ এমনকী, সদ্যোজাতরাও এতে আক্রান্ত হতে পারে।” অ্যালার্জেনের মেডিকেল ডিরেক্টর ডা. ঋষি জৈন বলেন, “দ্রুত রোগ নির্ণয় অত্যন্ত জরুরি। বছরে অন্তত এক বার করে তাই চক্ষু পরীক্ষা করাতে হবে। আর গ্লুকোমার প্রাথমিক উপসর্গ সহজেই ধরা পড়ে।”

কলকাতার ত্রিনেত্রালয়ের মেডিক্যাল ডিরেক্টর ডা. পার্থ বিশ্বাস আবার গ্লুকোমা রোগের ঝুঁকি হ্রাস করার উপরে জোর দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, “গুরুতর ক্ষতি হয়ে যাওয়ার আগে গ্লুকোমা রোগ সনাক্ত করার জন্য নিয়মিত চক্ষু পরীক্ষা করা বাঞ্ছনীয়। চল্লিশ পেরোলেই কিংবা যাঁদের ঝুঁকি বেশি, তাঁদের বছরে নির্দিষ্ট সময় অন্তর চক্ষু পরীক্ষা করানো উচিত। গ্লুকোমা প্রতিরোধের ক্ষেত্রে আর একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, চোখে আঘাত লাগতে দেওয়া চলবে না। এ ছাড়া নিয়ন্ত্রণ করতে হবে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের মতো সমস্যাও।”

(Feed Source: news18.com)