পড়ুয়ারা সাঁওতালি মাধ্যমের, অথচ নিজের ভাষা ও অলচিকি লিপিতে পড়াশোনার সুযোগ পায়নি। মনে আশা ছিল, প্রশ্নপত্র মাতৃভাষায় হবে। কিন্তু আদতে যা হল তাতে ভেস্তে গেল পরীক্ষাটাই। উচ্চমাধ্যমিকে সাদা খাতাই জমা দিতে হল ১৫জন পরীক্ষার্থীদের। মঙ্গলবার উচ্চমাধ্যমিকের পরিবেশ বিদ্যাসহ অন্যান্য বিষয়ের পরীক্ষা ছিল। পশ্চিম মেদিনীপুরের নারায়ণগড় ব্লকের নেকুড়সেনী হাইস্কুলের (সাঁওতালি মাধ্যম) পরীক্ষার্থীরা নিজেদের ভাষায় প্রশ্নপত্র পাবে ভেবেছিল। কিন্তু তেমনটা না হওয়ায় পরীক্ষা কেন্দ্রে রীতিমতো সমস্যায় পড়ে। নির্দিষ্ট লিপি জানা ইনভিজিলেটরও সেই দিন ছিলেন না হলে। নেকুড়সেনী হাইস্কুলের এটাই প্রথম উচ্চমাধ্যমিক ব্যাচ। দাঁতনের মনোহরপুর রাজা রামচন্দ্র বিদ্যাভবন স্কুলে সিট পড়েছিল তাদের। সংবাদমাধ্যমকে পড়ুয়ারা বলে,এদিনের প্রশ্নপত্র বাংলা, ইংরেজি আর হিন্দিতে এসেছিল। সাঁওতালি ভাষায় ও লিপিতে প্রশ্ন ছিল না। ফলে বোঝা যায়নি। ফাঁকা খাতা জমা দিতে হয়েছে।
শুধু নেকুড়সেনী নয়, একই সমস্যায় পড়েছে ঝাড়গ্রাম জেলার বেলপাহাড়ি এসসি হাইস্কুলের সাঁওতালি মাধ্যমের ২৩জন পরীক্ষার্থী। মডার্ন কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন পরীক্ষা ছিল তাদের। সেখানেও অলচিকি হরফে প্রশ্ন করা হয়নি। সেই স্কুলের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা সংবাদমাধ্যমকে বলে,যা পড়েছিলাম, তা থেকেই ভাল ভাবে পরীক্ষা দিতে চেয়েছিলাম। অলচিকিতে প্রশ্ন করা হয়নি বলে কিছুই বোঝা যায়নি। ফাঁকা খাতাই জমা দিয়ে আসতে হয়েছে। সহযোগিতাও মেলেনি।
এমন ঘটনার নেপথ্যে কারণ কী? নেকুড়সেনী হাইস্কুলের (সাঁওতালি মাধ্যম) কর্তৃপক্ষ সংবাদমাধ্যমকে জানাচ্ছেন, সাঁওতালি ভাষা ও অলচিকি লিপিতে পরিবেশ বিদ্যার বই ছাপায়নি সংসদ। এমনকী অলচিকিতে অনুবাদও করেনি। অথচ বিষয়ের অনুমোদন দিয়েছে। একাদশ শ্রেণিতে পরীক্ষার সময়েও একই সমস্যায় পড়েছিল পরীক্ষার্থীরা। তখন উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ, জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে এই ব্যাপারে জানানো হয়। কিন্তু অবস্থা যেই কে সেই।
পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের পশ্চিম মেদিনীপুরের জয়েন্ট কনভেনর সৌমেন ঘোষ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, গোটা পশ্চিমবঙ্গেই এই বিষয়ে অলচিকিতে প্রশ্নপত্র হয়নি। পরীক্ষার্থীরা অলচিকিতে উত্তর লিখতেই পারত। তাঁর কথায়, পরীক্ষা কক্ষে এই লিপি জানা একজন শিক্ষক দেওয়া হয়েছিল। তবে পরবর্তীকালে বিষয়টি নিয়ে কাউন্সিল ভাববে। যদিও পরীক্ষাকেন্দ্রের তরফে জানা যায়, ইনভিজিলেটর সাঁওতালি ভাষা জানলেও অলচিকি লিপি সম্পর্কে তাঁর যথেষ্ট জ্ঞান ছিল না। পরীক্ষার্থী ও শিক্ষকরা তাদের দাবি জানান জেলা শাসককেও। বিষয়টি নিয়ে জেলা শাসকের সামনে ক্ষোভ প্রকাশ করেন পরীক্ষার্থী ও শিক্ষকরা।
(Feed Source: hindustantimes.com)