দেশের জিডিপিতে সরাসরি থাবা বসাচ্ছে দূষণ, ল্যানসেট কমিশনের রিপোর্ট ঘিরে চাঞ্চল্য

দেশের জিডিপিতে সরাসরি থাবা বসাচ্ছে দূষণ, ল্যানসেট কমিশনের রিপোর্ট ঘিরে চাঞ্চল্য

#নয়াদিল্লি: দূষণ ও স্বাস্থ্য বিষয়ক সাম্প্রতিক ল্যানসেট কমিশনের রিপোর্টে এয়ার পলিউশন নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে। কমিশনের রিপোর্ট বলছে, আধুনিক যন্ত্রসভ্যতার পৃথিবীতে দূষণের নতুন নতুন উৎসের কারণে মৃত্যুসংখ্যা ক্রমশই বেড়ে চলেছে। সারা পৃথিবী তো বটেই, বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়া, পূর্ব এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এই দূষণের মারাত্মক প্রভাব দেখা দিচ্ছে। এর জন্য দায়ী ক্রমবর্ধমান বায়ু দূষণ, ক্রমবর্ধমান রাসায়নিক বর্জ্যজনিত দূষণ এবং সরাসরি দূষণের সংস্পর্শে আসা মানুষের ক্রমানুসারে সংখ্যা বৃদ্ধি।

উল্লেখযোগ্য ভাবে বায়ু দূষণের ক্ষেত্রে ভারত বিশ্বের দূষণজনিত ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলির তালিকায় অন্যতম স্থানে রয়েছে।

কোন দেশ নিয়ে কী পরিসংখ্যান দিচ্ছে কমিশন?

ল্যানসেট কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী দূষণজনিত কারণে কোনও ব্যক্তির অকাল মৃত্যু হলে তা ভবিষ্যতের প্রোডাকশন ভিত্তিক সমাজের ওপরেও প্রভূত প্রভাব ফেলবে। ভারত, চিন, ইথিওপিয়া, নাইজিরিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইইউ ১৫- এই ছয়টি অঞ্চলে এই ছবি ইতিমধ্যেই প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। কমিশনের রিপোর্ট বলছে, অতিরিক্ত দূষণ ও অকাল মৃত্যুর কারণে ২০০০ সালে ভারত তার জিডিপির ৩.২ শতাংশের সমপরিমাণ উৎপাদন ক্ষমতা হারিয়েছে।

গবেষণায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, আধুনিক যন্ত্রসভ্যতায় নানান উৎসজাত দূষণের কারণে ২০০০ থেকে ২০১৯ আর্থিক বছরে ভারত, চিন এবং নাইজিরিয়ায় জিডিপির মান ক্রমশ নিম্নমুখী এবং বর্তমানে এই গ্রাফ প্রতিটি দেশের ক্ষেত্রেই প্রায় ১ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে।

রিপোর্ট জানাচ্ছে, দূষণের ফলে সারা পৃথিবী জুড়ে প্রতি বছর প্রায় ৯ মিলিয়ন বা প্রতি ছয় জনের মধ্যে একজন মানুষ অকালে মারা যায়। প্রকৃতপক্ষে বায়ু দূষণ বিশ্বের সর্বাধিক মৃত্যুর জন্য দায়ী একটি কারণ। শুধুমাত্র ২০১৯ সালেই বায়ু দূষণের কারণে ৬.৭ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হয়। জল দূষণজনিত কারণে মৃত্যু হয় প্রায় ১.৪ মিলিয়ন মানুষের।

বায়ু দূষণ ও এর বার্ষিক আর্থিক মূল্য

বায়ু দূষণের একটি অন্যতম উৎস জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার। বিশ্বব্যাপী জীবাশ্ম জ্বালানিতে প্রতিদিন প্রায় ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ হয়।

মার্চ মাসে প্রকাশিত গ্রিনপিসের ওয়ার্ল্ড এয়ার কোয়ালিটি রিপোর্ট ২০২১-এ নিউ দিল্লিকে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত রাজধানী হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। দিল্লি সহ উত্তর ভারতীয় শহরগুলিতে দূষণের কারণে প্রায় ৩০ লক্ষেরও বেশি মানুষ অকালে প্রাণ হারিয়েছেন বলে অনুমান করা হয়।

এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, গত বছরে সারা পৃথিবীর মধ্যে মধ্য এশিয়া এবং দক্ষিণ এশিয়ায় বায়ুর গুণমান ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ। বিশ্বের দূষিততম ৫০টি শহরের মধ্যে ৪৬টি শহরই মধ্য এশিয়া এবং দক্ষিণ এশিয়ায় অবস্থিত। প্রকৃতপক্ষে, বাংলাদেশ, আফগানিস্থান ও শ্রীলঙ্কা বাদে মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিতে পিএম-এর পরিমাপ প্রায় ২.৫ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। তবে মহামারীর কারণে কড়া লকডাউন বাতাসে গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমনকে অনেকটাই নিম্নমুখী করেছে।

ভারতে বায়ু দূষণের ছবিটা কীরকম?

ভারতে বায়ুদূষণের পরিমাণ যে অপ্রতুল হারে বাড়ছে তার পরিচয় আমরা ইতিমধ্যেই দিল্লি সহ উত্তর ভারতের শহরগুলিতে দূষণের ফলে লাগাতার মৃত্যুর খবরে পেয়েছি। ল্যানসেট কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, ভারতের বায়ু দূষণের পরিমান প্রায় ৯৩ শতাংশ ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্দেশিত বায়ুদূষণের সূচকসীমাকে অতিক্রম করে গিয়েছে। গত ২০১৯ সালে ভারতে দূষণজনিত মৃত্যুর সংখ্যা এ যাবৎকালে সবচেয়ে বেশি ছিল। কেন্দ্রীয় সরকারের নানান প্রকল্পের মাধ্যমে এই অবস্থার খানিকটা পরিবর্তন করার প্রচেষ্টা করা হলেও, অবস্থা এখনও পরিবর্তিত হয়নি। প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনা কর্মসূচি এ ক্ষেত্রে খানিকটা দিশা দেখিয়েছে।

প্রসঙ্গত, নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi) সরকারের তত্ত্বাবধানে এই স্কিমটি চালু করা হয়েছিল ২০১৬ সালে। বিভিন্ন গ্রামীণ পরিবারগুলিতে এলপিজি কানেকশনের সাহায্যে গৃহকার্য জনিত দূষণের মাত্রা কমানোর উদ্দেশ্যে এই প্রকল্প চালু করা হয়।

এর পূর্বেই কোলাবোরেটিভ ক্লিন এয়ার পলিসি সেন্টার দ্বারা পরিচালিত একটি সমীক্ষার রিপোর্টে বলা হয় যে, ২০১৯ সালে ভারতে বায়ু দূষণের বিভিন্ন কারণের মধ্যে গৃহকার্য জনিত কঠিন জ্বালানি পদার্থের ব্যবহার ছিল অন্যতম।

এই রিপোর্টগুলির পরিপ্রেক্ষিতে ভারত সরকারের ফ্ল্যাগশিপ স্কিমের আওতায় উজ্জ্বলা যোজনা কর্মসূচিকে সংযুক্ত করা হয়। বর্তমানে বিভিন্ন রিপোর্ট অনুযায়ী রান্নার জ্বালানি হিসাবে এলপিজির অধিকতর ব্যবহারে বায়ু দূষণের পরিমাণ অনেকটাই কমেছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। ২০১৯ সালের তুলনায় দূষণজনিত কারণে কমপক্ষে প্রায় ১.৫ লক্ষ অকাল মৃত্যু রোধ করা গিয়েছে বলে অনুমান করা হয়।

(Source: news18.com)