একটি চড়ুই পাখির জন্য মৃত্যু ৪ কোটি মানুষের! অবাক লাগছে? আসল ঘটনায় ঘুম উড়ে যাবে

একটি চড়ুই পাখির জন্য মৃত্যু ৪ কোটি মানুষের! অবাক লাগছে? আসল ঘটনায় ঘুম উড়ে যাবে

বেজিং: চড়ুই পাখির জন্য কত মানুষের মৃত্যু হতে পারে, এমনটা ভেবেছেন কখনও? অথচ বাস্তবে কিন্তু এমনটাই ঘটেছিল। সালটা ১৯৫৮। মাও জে দং-ই তখন চিনের ‘রাজা’। পাশাপাশি পিপল রিপাবলিক অব চায়নার সর্বময় চেয়ারম্যান। তো সেই পৃথিবী বিখ্যাত বিতর্কিত কমিউনিস্ট নেতাই সে বছর সিদ্ধান্ত নিলেন, চড়ুই নিধন করতে হবে। যার পোশাকি নাম ছিল দ্য গ্রেট স্প্যারো ক্যাম্পেন। একটা কী দশটা নয়, চিন থেকে চিরকালের মতো চড়ুই নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিলেন মাও৷ কিন্তু কেন? কারণ, দেশের ফসলের ক্ষতি করছে বদমাস চড়ুই৷

আগেই খেতের কীট-পতঙ্গ মারার নির্দেশ দিয়েছিলেন মাও জে দং৷ এতখানি তৎপরতার পিছনে আরেক কারণ, কমিউনিস্ট চিনে ততদিনে ব্যক্তির খেত-খামারের অস্তিত্ব নেই৷ সবটাই রাষ্ট্রের সম্পত্তি৷ অতএব, রাষ্ট্র নেমে পড়ল তার খামারের খেয়ালি সুরক্ষায় ৷ আদপে যা চিনের চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত৷ বিশ্বস্ত বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে মাও জানলেন, একটি চড়ুই বছরে ৪-৫ কেজি শস্য খায়৷ হিসেবে করে দেখা গেল, ১০ লাখ চড়ুই ৬০ হাজার মানুষের খাবার খেয়ে ফেলে৷ অতএব, মারো চড়ুই৷ নিশ্চিহ্ন করো নিরীহ পাখিদের৷

সরকারি বন্দোবস্ত হল৷ ‘দক্ষযজ্ঞে’র জন্য কেনা হল ১ লাখ চড়ুই নিধন অভিযানের নিশান৷ খুদে পাখি মারতে মেতে উঠল গোটা দেশ৷ যারা এই কাজে এগিয়ে এল তাদের গর্বের নাম হল ‘স্প্যারো আর্মি’৷ এমনকী চড়ুই মারায় উৎসাহ দিতে পুরস্কার ঘোষণা করল রাষ্ট্র৷ একাধিক পদ্ধতিতে মারা হল পাখি৷ উন্মত্ত জনতা ড্রাম বাজিয়ে ধাওয়া করত পাখির ঝাঁকের পিছনে৷ শোনা যায়, শেষে উড়ান-ক্লান্ত পাখি মাটিতে পড়ে মারা যেত৷ খুঁজে খুঁজে ভাঙা হল চড়ুইয়ের বাসা, নষ্ট করা হল ডিম৷ জাল দিয়ে ধরা হল৷ বাকি পাখি মারা হল বন্দুক দিয়ে৷ অচিরেই মাওয়ের ইচ্ছা মতো চড়ুইশূন্য হল চিন৷ কিন্তু, তাতে কি লাভ হল রাষ্ট্রের, ভালো হল দেশের মানুষের? বাঁচল খেতের ফসল?

ভাল দূরে থাক, চড়ুই নিধনের কারণে কয়েক বছর পরে কালো দুর্ভিক্ষের দিন দেখল দেশ ৷ আসলে চড়ুই শস্যের কিছু অংশ খেত ঠিক, তেমনই ফসল ধ্বংসকারী পোকামাকড়ও খেত পুচকে পাখির দল৷ বেপরোয়া চড়ুই নিধনে নষ্ট হয় সে বছরের সিংহভাগ ফসল৷ ১৯৬১-৬২ সালের সেই ভয়ঙ্কর দুর্ভিক্ষে ৩-৪ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল৷ তাঁর হটকারি সিদ্ধান্তে এত মানুষের মৃত্যুর পর পিপল রিপাবলিক অব চায়নার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মাওয়ের প্রতিক্রিয়া কী ছিল?

শস্যক্ষেত্রে কোনও ফসল না থাকলেও সরকারি গুদামে তখন পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্য মজুদ ছিল। কিন্তু তবুও কোনও এক অদ্ভুত অজানা কারণে সরকার সেসব খাদ্য জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করতে কোনওরকম পদক্ষেপ নেয়নি। তার ওপর, সরকারের এসব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুললেই তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হত।

(Feed Source: news18.com)