মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে গেলে মাথায় রাখতে হবে কোন ৬ বিষয়? জানুন…

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে গেলে মাথায় রাখতে হবে কোন ৬ বিষয়? জানুন…

#নয়াদিল্লি: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করা, পড়াশুনার খরচ নিশ্চিত করা, ভিসা প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করা এবং নিজের বাড়ি থেকে দূরে গিয়ে নতুন একটি দেশে বসবাস শুরু করার বিষয়টি সকলের জন্য সহজ হয় না। নতুন দেশের নিয়ম কানুন এবং সংস্কৃতিকে মেনে নিতে অনেকেই সমস্যার মুখোমুখি হন। তবে সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে এই প্রক্রিয়াটি খুবই সহজ হতে পারে। অধ্যয়ণরত প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের অভিজ্ঞতা সেখানকার পরিবেশ সম্পর্কে জানতে বিশেষ সাহায্য করতে পারে। মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলি প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীরাও তাদের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে এই বিষয়ে সাহায্য করতে পারে।

আদিত্য শ্রীনিবাসন (Adithiya Sreenivasan) নামে একজন প্রাক্তন শিক্ষার্থী বলেন, “আমার ভবিষ্যতের লক্ষ্যের সংক্ষিপ্ত তালিকায় আমি প্রথম যে বিষয়টি খুঁজছিলাম তা হল আমার পছন্দের বিষয়টি কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয়।”

আদিত্য অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির টেম্পে ক্যাম্পাস থেকে পাওয়ার এবং এনার্জি সিস্টেম বিষয়ের উপর ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যাগুলিতে অধ্যাপকরা সেসময় কোন কোন বিষয়ে গবেষণার কাজ করছেন এবং পাওয়ার এবং শক্তি ডোমেনের উপর কোন কোন কোর্সের সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে সেই বিষয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করি।” খরচের বিষয়টি মাথায় রেখে তিনি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে বেশির প্রাধান্য দিয়েছিলেন। বর্তমানে চেন্নাইতে অ্যাকসেঞ্চার (Accenture) কোম্পানিতে কর্মরত আদিথ্য শ্রীনিবাসন আরও বলেন, “আমি এটাও লক্ষ্য করে দেখেছি যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীরা স্নাতক শেষ করার পরে তাদের কর্মজীবনে কী করছে।”

জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র আদিত্য রাম শঙ্কর (Adithya Raam Sankar) বলেন, “আমি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোগ্রামগুলিকে ক্যারিয়ার, টিউশন ফি, জীবনযাত্রার খরচ, আবহাওয়া, ব্যক্তিগত পছন্দ এবং জীবনযাপনের অবস্থা ইত্যাদি বিষয়ের ভিত্তি করে ভিন্ন ভিন্ন বিভাগে বিভক্ত করি। সমস্ত দিক বিবেচনা করে আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে সামগ্রিকভাবে জর্জিয়া আমার জন্য উপযুক্ত বিকল্প।” আদিত্য আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স বিষয়ে স্নাতকোত্তর করেছেন এবং বর্তমানে ভার্জিনিয়া শহরে ওরাকল (Oracle) কোম্পানিতে কর্মরত।

আর্থিক সাহায্য এবং স্টুডেন্ট ভিসা:

একবার সমস্ত আবেদন জমা হয়ে গেলে, একজন সম্ভাব্য শিক্ষার্থীর প্রাথমিক কাজ হল কোর্সের জন্য অর্থ সংগ্রহ করা। শঙ্কর এবং আদিত্য উভয়েই বলেন যে আবেদনকারীদের সময়ের আগে থেকেই অর্থ সংগ্রহের বিকল্পগুলি ভেবে রাখা উচিত। লোনের ক্ষেত্রে ব্যাকগ্রাউন্ড রিসার্চ শুরু করে দেওয়া উচিত। আদিথ্য শ্রীনিবাসন বলেন, “যাদের আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন তাদের ক্ষেত্রে শিক্ষামূলক ঋণের ব্যবস্থা করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমি সুদের হার তুলনা করার জন্য বিভিন্ন ব্যাঙ্কের কাছে গিয়েছিলাম এবং আমার কাগজপত্র প্রস্তুত রেখেছিলাম। ঋণ অনুমোদন প্রক্রিয়া দীর্ঘ হতে পারে এই কারণে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সবকিছু সম্পূর্ণ করে রাখা প্রয়োজন।”

স্বীকৃতি পত্র আসার আগেই শঙ্কর লোন এবং স্কলারশিপের বিকল্পগুলি নিয়ে গবেষণা শুরু করেছিলেন। এই বিষয়ে তিনি বলেন, “যেহেতু আমার প্রাথমিক বিকল্প ছিল শিক্ষামূলক ঋণ, তাই আমি সবচেয়ে ভালো অফারের পাওয়ার জন্য অনেক আগে থেকেই খোঁজাখুঁজি শুরু করেছিলাম। পাশাপাশি, আমি যে সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে আবেদন করেছিলাম সেখানেও স্কলারশিপের জন্যও আবেদন করতে থাকি। বহিরাগত যে বিকল্পগুলিতে থেকে স্কলারশিপ পাওয়ার সম্ভনা রয়েছে তা নিয়েও রিসার্চ চালিয়ে যাই। এই প্রক্রিয়া চলাকালীনই আমি ফলাফল পেতে শুরু করেছিলাম।”

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভর্তির স্বীকৃতি পত্র আসার পর ভিসার আবেদন নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেন শঙ্কর। ভিসার নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে আদিত্য বলেন, “ভিসার কাগজপত্র সংক্রান্ত প্রক্রিয়া দীর্ঘ এবং জটিল মনে হতে পারে কিন্তু যদি আমরা পুরো প্রক্রিয়াটিকে ছোট ছোট মডিউলে ভাগ করি তবে বিষয়টি অনেক সহজ হয়ে যায়।” শেষ মুহূর্তে এসে যাতে কোনও সমস্যা না হয় তা নিশ্চিত করার জন্য আগে থেকেই সবকিছু সম্পূর্ণ করে রেখেছিলেন।

খরচ এবং স্টুডেন্ট ভিসা প্রক্রিয়ার পাশাপাশি আদিথ্য শ্রীনিবাসন আবেদনপত্র জমা দেওয়ার পর অ্যাকাডেমিকসের কথা ভেবে মৌলিক বিষয়গুলিকে ঘষামাজা করতে শুরু করেন। তিনি বলেন, “আমি একটি প্রাথমিক নথি তৈরি করেছিলাম যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, বর্তমান ছাত্র এবং প্রাক্তন ছাত্রদের দ্বারা প্রস্তাবিত বিভিন্ন বই এবং পূর্বশর্তগুলিকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল। স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামের সাথে নিজেকে দ্রুত মানিয়ে নেওয়ার জন্য এই বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”

শিক্ষার অভিজ্ঞতা:

আন্তর্জাতিক ছাত্রছাত্রীদের যখন একটি মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে তখন তাদের জন্য অনেক নতুন নতুন অভিজ্ঞতা অপেক্ষা করে। শঙ্কর বলেন, “সবচেয়ে বড় পার্থক্য যেটা আমি বুঝতে পেরেছিলাম তা হল শিক্ষাব্যবস্থার ধরন। এখানে মূলত থিয়েরির মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন করার থেকে অর্জিত জ্ঞান বাস্তবে প্রয়োগের উপর বেশি জোর দেওয়া হয়।”

আদিত্য শ্রীনিবাসন এই বিষয়ে বলেন যে মার্কিন শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের সারা বছরের কাজের উপর ভিত্তি করে মূল্যায়ন করা হয়, যেখানে ভারতীয় সিস্টেমে শেষ সেমিস্টার বা ফাইনালের রেজাল্টের উপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। তিনি বলেন মার্কিন শিক্ষাব্যবস্থায় ক্লাসে অধ্যাপকদের পড়ানো বিষয়ের উপর ভিত্তি করে নিয়মিত হোমওয়ার্ক দেওয়ার বিষয়টি তাঁর খুব পছন্দ। তিনি আরও বলেন, “এটি সময়ের সঙ্গে স্থির গতিতে জ্ঞান অর্জন করতে সাহায্য করে। এখানে একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট একটি বিষয়ের উপর অনেক বেশি জোর দেওয়া হয়ে। ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থায় একসাথে অনেক বিষয়ের উপর জোর দেওয়া হয়।”

অফিস টাইমে অধ্যাপকদের সঙ্গে সাক্ষাতের ধারণা মার্কিন শিক্ষাব্যবস্থার আরেকটি অভিনব সংযোগ। শিক্ষার্থীরা এই সময়ের মধ্যে অধ্যাপকদের সঙ্গে দেখা করতে পারে এবং তাদের প্রশ্নগুলি স্পষ্টভাবে জিজ্ঞাসা করার সুযোগ পায়। আদিত্য শ্রীনিবাসন বলেন, “ক্লাসে যে বিষয়গুলি পড়ানো হচ্ছে সে বিষয়েও আপনি আপনার ধারণা শেয়ার করতে পারেন। মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষার্থীরা নিজের হাতে অভিজ্ঞতা করার সুযোগে পাশাপাশি মেন্টরদের কাছে অনেক সাহায্য পায়।”

ক্যাম্পাসের জীবনযাত্রা:

বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস প্রাঙ্গন শিক্ষার্থীদের সারাদিনের ক্লাস এবং পড়াশোনার পর বিরতি উপভোগ করার সুযোগ দেয়। আদিত্য শ্রীনিবাসনের ক্ষেত্রে এমনটাই হয়েছিল। তিনি বলেন, “খেলাধুলার জন্য ভালো সুযোগ সুবিধা ছিল এবং আমরা সন্ধ্যার পরের সময়টা টেনিস ও ক্রিকেটের মতো খেলার মাধ্যমে কাটাতাম।” জীবনযাত্রার খরচ মেটাতে তিনি ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টস ও স্কলার সেন্টারে কাজ করেছিলেন। এই সময় বিভিন্ন দেশের অনেক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব হয়। “তাদের অনেকের সাথে আমার এখনও যোগাযোগ রয়েছে,” আদিত্য বলেন। এথেন্সের মতো শহরে বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত হওয়ায় ক্যাম্পাস সবসময় ছাত্রছাত্রীদের দ্বারা পরিপূর্ণ থাকত এবং আশেপাশে সুন্দর একটা পরিবেশ ছিল।

আদিত্য রাম শঙ্কর বলেন বাড়ির কথা খুব মনে পড়লে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্ডিয়া অ্যাসোসিয়েশনে গিয়ে সময় কাটাতেন। তিনি বলেন, “উৎসবের দিনগুলিতে আমি আমি ভারতীয় সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য মিস করেছি। যদিও, UGA-তে ভারতীয় ছাত্র সমিতি নিজেদের জন্য দেশের মতো একটা পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা করত।”

ইন্টার্নশিপ এবং ওপিটি:

আদিত্য শ্রীনিবাসন তার ইন্টার্নশিপের জন্য ক্যাম্পাসে থাকার সিদ্ধান্ত নেন এবং শঙ্কর ইন্টার্নশিপ এবং চাকরি খোঁজার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যারিয়ার কেন্দ্রের কাছে সাহায্য নেন। যে সমস্ত ছাত্রছাত্রীরা ইন্টার্নশিপ নাগালের বাইরে হয়, ক্যাম্পাস সেই শূন্যতা পূরণ করে এবং অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি করার যথেষ্ট সুযোগ দেয়।

আদিত্য বলেন, “একটি ইন্টার্নশিপ ফুল-টাইম চাকরির সুযোগ অনেকগুণ বাড়িয়ে তোলে। গবেষণার অভিজ্ঞতা আপনার প্রোফাইলে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বানিয়ে তোলে।” তিনি শিক্ষার্থীদের অপশনাল প্র্যাকটিকাল ট্রেনিং (OPT) এবং কারিকুরাল প্র্যাকটিকাল ট্রেনিং (CPT)-এর মতো বিষয় এবং তাদের সাথে যুক্ত নিয়মাবলী ভালোভাবে পড়তে বলেন।

শঙ্কর প্রথম সেমিস্টার থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যারিয়ার কেন্দ্রের যুক্ত থাকার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, শিক্ষার পাশাপাশি চাকরির খোঁজার প্রক্রিয়াটির বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করা উচিত।

অমূল্য দক্ষতা:

মার্কিন শিক্ষাব্যবস্থার উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে অন্যতম হল শিক্ষার্থীদের একটি সুন্দর কেরিয়ার গড়তে সাহায্য করা। শঙ্কর বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে কেরিয়ার গড়তে অনেক সাহায্য করেছে। আমি আগে যেভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং ক্লাসমেটদের সঙ্গে কথা বলতাম এবং বর্তমানে আমি সহকর্মীদের সাথে যেভাবে কাজ করি তার মধ্যে অনেক মিল রয়েছে। এই বিষয়গুলি আমাকে একজন ব্যক্তিত্ব হিসেবে সচেতন সিদ্ধান্ত নিতে, জীবনে দায়িত্বশীল হতে এবং সময়কে আরও ভালভাবে পরিচালনা করতে সাহায্য করেছে।” শঙ্কর প্রায় এক দশক আগে ডিগ্রি অর্জন করেন কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা তাঁর মনে এখনও জীবিত আছে।

Published by:Shubhagata Dey

(Source: news18.com)