বাংলাদেশঃ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্বতন্ত্র কবরস্থান

বাংলাদেশঃ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্বতন্ত্র কবরস্থান

হলি সিয়াম শ্রাবণ, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি :‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহবানে সাড়া দিয়ে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে জীবনবাজি রেখে একসঙ্গে পাকহানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি, মৃত্যুর পরও যেন একসঙ্গে থাকতে পারি।’ স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের এমন অন্তিম ইচ্ছার প্রেক্ষিতে প্রায় ২০ বছর আগে ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার পৌর শহরে স্থাপন করা হয়েছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্বতন্ত্র কবরস্থান।

এখানে গণপরিষদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা হাতেম আলী মিয়া, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ডাঃ এম এ সোবহান, যুদ্ধকালীন ১১ নং সেক্টরের সাব-সেক্টর কমান্ডার তোফাজ্জল হোসেন চন্নু, পাকহানাদার বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে শহীদ আনোয়ারুল ইসলাম মনজুসহ আরও অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধা চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন।

জানা গেছে- সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম ডাঃ ক্যাপ্টেন (অবঃ) মুজিবুর রহমান ফকিরের পৃষ্ঠপোষকতায় ২০০৩ সনে এ বীর মুক্তিযোদ্ধা কবরস্থানটি স্থাপন করেন তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার বর্তমানে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাহান আরা বানু।

উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পৌর শহরে সাব-রেজিস্ট্রি অফিস সংলগ্ন ২৬ শতক খাস জমিতে স্থাপন করা এ কবরস্থান।

শহীদ আনোয়ারুল ইসলাম মনজুর ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ম. নুরুল ইসলাম জানান- এ কবরস্থানটি বাংলাদের মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রথম স্বতন্ত্র কবরস্থান।

২০০৩ সনে তিনিসহ কয়েকজন এ কবরস্থান নির্মাণকাজের তদারকির দায়িত্বে ছিলেন। তিনি আরও বলেন- মৃত্যুর পর সহযোদ্ধাদের পাশে অন্তিম শয়নে যাওয়ার ইচ্ছা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের এক বিরল ভালবাসার উদাহরন। সহযোদ্ধাদের প্রতি এ ভালবাসার দৃষ্টান্ত বর্তমান ও আগামী প্রজন্মের কাছে দেশ প্রেমের প্রেরণা যোগাবে।

কবরস্থানটির স্বেচ্ছায় পরিচর্যাকারী গৌরীপুর পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র মোঃ আব্দুল হালিম জানান- একটি সময়ে দেশে কোনো বীর মুক্তিযোদ্ধা বেঁচে থাকবেন না। তখন ভবিষ্যত প্রজন্ম বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কবর দেখার জন্য এখানে ভীড় করবে। তাই একে সংরক্ষণ করতে হবে।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ নাজিম উদ্দিন জানান- স্বতন্ত্র কবরস্থান হওয়ায় এখানে জাতীয় ও স্থানীয় দিবসসহ বিভিন্ন সময়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় কবর জিয়ারত এবং মোনাজাত করা হয়ে থাকে।

তিনি বলেন- প্রায় ২০ বছর আগে স্থাপিত এ কবরস্থাটির পূর্বপাশে গাইড ওয়াল না থাকায় মাটি পুকুরগর্ভে চলে যাচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ গাছপালা বাউন্ডারি ওয়ালে হেলে পড়ায় তাতে ফাটল দেখা দিয়েছে। কবরস্থানে প্রবেশের মূল গেইট একদিকে হেলে পড়ায় যেকোন সময় ধ্বসে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।

এছাড়া কবর জিয়ারতের সুবিধার্থে কবরস্থানের মাঝখান দিয়ে একটি পাকা রাস্তার ও মাঠে গর্ত ভরাটে মাটি ফেলা প্রয়োজন। এ কবরস্থানটি সংস্কারের জন্য প্রশাসনসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

(Feed Source: sunnews24x7.com)