কলকাতা: ২০২২ এর নভেম্বর মাসের শিয়ালদহ৷ ২০২৩ এর মে মাসের শক্তিগড়। দুটি ক্ষেত্রেই দুর্ঘটনার কবলে পড়ল লোকাল ট্রেন। দুটি ক্ষেত্রেই অভিযোগ SPAD অর্থাৎ, মোটরম্যান সিগন্যাল না মেনে ট্রেন এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার উপরে। কিন্তু রেলের মোটরম্যানের মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ব্যক্তি, নিজের দায়িত্ব এড়িয়ে সিগন্যাল ভেঙে দৌড়বেন কেন? তাহলে কি অসাবধানতা? নাকি ক্লান্তি? যার জন্য বারবার ঘটছে এমন দুর্ঘটনা।
রেল ইউনিয়নের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই সেফটি পদে বহু জায়গা ফাঁকা পড়ে আছে৷ এখনও নিয়োগ হয়নি৷ যার জেরে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বাকিদের। রেল ইউনিয়নের দেওয়া তথ্য বলছে, ১০০-র বেশি শূন্যপদ মোটরম্যান বিভাগে। হাওড়ায় ১৫৩, শিয়ালদহে ১৭২, আসানসোলে ২৩৬ এবং মালদহে ১৩৪ শূন্যপদ রয়েছে বলে ইউনিয়ন সূত্রের খবর৷
মোটরম্যানদের ডিউটির সময় ৭ ঘণ্টা। সেটা সর্বোচ্চ ৯ ঘণ্টা পর্যন্ত হতে পারে। কিন্তু যা পরিস্থিতি, তাতে চালকদের ১২ ঘণ্টা করে ডিউটি করতে হচ্ছে। তার উপরে কোনও ছুটিও তাঁরা পারছে বলে অভিযোগ। একজন ছুটি নিলে অন্যজনকে ডবল ডিউটি করতে হয় বলে জানাচ্ছেন ইউনিয়নের সদস্যেরা। শুধু তাই নয়, যিনি ছুটি নেবেন, তাঁকে আগেরদিন ডাবল ডিউটি করে যেতে হয়। ডিউটি শেষের পরে ন্যূনতম ৩০ ঘণ্টা অফ দেওয়ার কথা। অভিযোগ, বহু ক্ষেত্রেই সেই অফ মিলছে না।
ইউনিয়নের এক সদস্য বলেন, ‘‘এই তীব্র গরমে, ক্যাবে পর্যাপ্ত হাওয়া নেই৷ মাঝে স্যান্ড গার্ড লাগানো হয়েছিল। আপত্তি ওঠে, এর জন্য সিগন্যাল দেখা যাচ্ছে না। তাই সেটিও সরিয়ে নেওয়া হয়।’’ লোকাল ট্রেনের মোটরম্যান বা গার্ডদের শৌচালয় নেই। এই অবস্থায় মানসিক চাপের কথা সামনে আনছে কর্মচারী সংগঠনগুলি।
তবে একজন লোকো পাইলট বহু বছরের প্রশিক্ষণের পরে এই পদে আসে। অ্যাসিস্ট্যান্ট লোকো পাইলট থেকে শান্টিং লোকো পায়লট। সেখান থেকে গুডস লোকো পায়লট হয়ে তবে সে প্যাসেঞ্জার ট্রেনের লোকো পায়লট হয়৷ ফলে এই দীর্ঘ প্রশিক্ষণের পরেও মানবিক ত্রুটি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে৷
গত বুধবার রাতে শক্তিগড় স্টেশনে ঢোকার মুখে মালগাড়ির সঙ্গে সংঘর্ষে লাইনচ্যুত হয় ডাউন বর্ধমান ব্যান্ডেল লোকাল। তবে, দুটি ট্রেনেরই গতি কম থাকায় বড়সড় কোনও দুর্ঘটনা ঘটেনি। লোকাল ট্রেনের মতো মালগাড়িটিও লাইনচ্যুত হয়েছিল।
এ দিন রাত ৯টা নাগাদ বর্ধমান জংশন স্টেশন থেকে ছাড়ে ডাউন ব্যান্ডেল লোকাল। শক্তিগড় স্টেশনে যখন ট্রেনটি ঢুকছিল তখন পাশের লাইন দিয়েই একই দিকে যাচ্ছিল একটি তেল বোঝাই মালগাড়ি। আচমকাই মালগাড়ি এবং লোকাল ট্রেনের ইঞ্জিন কামরার মধ্যে পাশাপাশি সংঘর্ষ হয়। যার জেরে রেল লাইন থেকে নেমে যায় লোকাল ট্রেনের প্রথম বগিটি। তেল নিয়ে যাওয়া মালগাড়ির কয়েকটি ট্যাঙ্কারও লাইনচ্যুত হয় বলে খবর।