টাইটানিকের ধ্বংসস্তূপে প্রাগৈতিহাসিক হাঙরের দাঁতের তৈরি দুষ্প্রাপ্য নেকলেস

টাইটানিকের ধ্বংসস্তূপে প্রাগৈতিহাসিক হাঙরের দাঁতের তৈরি দুষ্প্রাপ্য নেকলেস

কয়েক কোটি বছর আগে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে মেগালোডন হাঙর৷ সেই হাঙরের দাঁতের তৈরি নেকলেস চিহ্নিত করা গেল টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষে৷ সলিলসমাধির ১১১ বছর পর এই প্রথম প্রকাশিত হয়েছে টাইটানিক জাহাজের পূ্র্ণাঙ্গ ডিজিটাল স্ক্যান। ডিপ সি ম্যাপিং প্রযুক্তিতে পেশ করা হয়েছে তার ত্রিমাত্রিক বা থ্রিডি ছবি। ১১১ বছর ধরে অতলান্তিক মহাসাগরের সাড়ে বারো হাজার ফুট গভীরে পড়ে আছে টাইটানিকের ধ্বংসস্তূপ। সমুদ্রের অতলে টাইটানিকের ছবি এর আগেও প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু কোনও ছবিতেই এত স্পষ্ট ধরা পড়েনি সুবিশাল এই জাহাজকে। ত্রিমাত্রিক নতুন ছবি দেখে মনে হচ্ছে যেন তার চার পাশে জলই নেই। এতটাই জীবন্ত সেই ছবিগুলি।

ত্রিমাত্রিক ছবিগুলি এতটাই জীবন্ত, জাহাজের প্রপেলারে লেখা ক্রমিক নম্বরও পড়া যাচ্ছে। জাহাজের যাত্রীদের ব্যবহার করা কিছু জিনিস যেমন জুতো, ঘড়িরও হদিশ মিলেছে জাহাজের ধ্বংসাবেশেষে। রয়েছে জাহাজের অন্দরসজ্জার মূর্তি, যাত্রীদের জন্য রাখা মুখবন্ধ শ্যাম্পেনের বোতলের মতো নানা জিনিস। সেরকমই একটি ছবিতে দেখা গিয়েছে টারকোয়ায়েজ ও সোনার তৈরি কণ্ঠহার৷ তার লকেটের জায়গায় বসানো রয়েছে মেগালোডন হাঙরের দাঁত৷ বলা হয়, বিশ্বে হাঙরের সব প্রজাতির মধ্যে মেগালোডনই ছিল বৃহত্তম৷ স্বভাবতই তার জীবাশ্ম সদৃশ দাঁত ছিল বিশ শতকে গোড়ার কোনও ধনী ব্রিটিশ সুন্দরীর ভূষণ৷

কিন্তু অত্যন্ত দুষ্প্রাপ্য ও অমূল্য এই নেকলেস উদ্ধার করে আনা যাবে না অতলান্তিকের গভীর থেকে৷ কারণ আমেরিকা ও ইংল্যান্ডের মধ্যে করা চুক্তি অনুযায়ী টাইটানিকের কোনও যাত্রীর জীবিত বংশধর ছাড়া ধ্বংসস্তূপ থেকে কোনও জিনিস কেউই নিতে পারবেন না৷ কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তার সাহায্যে বিশ্লেষণ করা হবে টাইটানিকের যাত্রীদের পোশাক ও গয়না৷ সে সব ছবি বিশ্লেষণ করে জানার চেষ্টা হবে এই নেকলেস কোন সুন্দরীর কণ্ঠভূষণ ছিল৷ তাঁর বংশধরকে খুঁজে পাওয়া গেলে তবেই সমুদ্রের অতল থেকে উদ্ধার করা হবে নেকলেস৷

১৯১২ সালে ১০ এপ্রিল ইংল্যান্ডের সাদাম্পটন বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করেছিল টাইটানিক। গন্তব্য ছিল আমেরিকার নিউ ইয়র্ক। ১৫ এপ্রিল উত্তর অতলান্তিকে নিউ ফাউন্ডল্যান্ডের কাছে হিমশৈলে ধাক্কা লেগে জাহাজটি ডুবে যায়। বিশ্বের ভয়ঙ্করতম এই জাহাজডুবিতে মৃত্যু হয় দেড় হাজার মানুষের। টাইটানিকের বো বা জাহাজের অগ্রভাগ শতাধিক বছর জলের গভীরে থেকেও একইরকম আছে কার্যত। টাইটানিকের ছবি তোলার জন্য জলের নীচে সাবমার্সিবল যন্ত্র পাঠানো হয়েছিল। রিমোটের সাহায্যে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে সেগুলিকে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে এ বার টাইটানিকের সব দিকের পূর্ণাঙ্গ ছবি পাওয়া গিয়েছে। অতলান্তিক মহাসাগরের উত্তর অংশে দেড় মাস ধরে ছিলেন গবেষকরা। ৭ লক্ষ ছবির সাহায্যে পাওয়া গিয়েছে এই ত্রিমাত্রিক ছবিগুলি।

এই জাহাজডুবির পিছনে রহস্য এখনও কাটেনি। যুক্তির তুলনায় অনেক বেশি নির্ভরতা অনুমানভিত্তিক। মনে করা হচ্ছে এই নতুন ছবি অনেক অধরা প্রশ্নের উত্তর দেবে। টাইটানিকের ছবি তোলার জন্য তথ্যচিত্র নির্মাতা অতলান্তিক প্রোডাকশনস-এর সঙ্গে কাজ করেছে ম্যাগেলান লিমিটেডও। গভীর সমুদ্রে গবেষণায় দক্ষ এই সংস্থা সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছে টাইটানিককে ঘিরে থাকা রহস্যের উপর আলো ফেলবে এই নতুন ছবিগুলি।

তার আগে, আপাতত নেটদুনিয়া এই জীবাশ্ম-কণ্ঠহার নিয়ে বুঁদ জেমস ক্যামেরনের কালজয়ী ‘টাইটানিক’ ছবির নস্টালজিয়ায়৷ চর্চায় ভেসে উঠছে ছবির শেষ দৃশ্য৷ যেখানে নীল ঘূর্ণিতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে রোজের হিরের কণ্ঠহার৷

(Feed Source: news18.com)