সাস্টেনেবল ইজ অ্যাটেনেবল ফেস্ট: ভারতে জলবায়ু সম্পর্কিত নানা সমাধান এবং সহযোগিতার

সাস্টেনেবল ইজ অ্যাটেনেবল ফেস্ট: ভারতে জলবায়ু সম্পর্কিত নানা সমাধান এবং সহযোগিতার

যখন জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বিশ্বজুড়ে প্রতিনিয়ত আরও প্রখর হয়ে উঠছে, তখন ভারত গ্রীন এনার্জি-তে রূপান্তরিত হওয়ার পাশাপাশি নির্গমন হ্রাসের মতো দুইটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করছে। এই গল্পের সত্যিকারের আকর্ষণীয় অংশটি হল: ভারতে শুধুমাত্র সরকার গ্রীন এনার্জি এজেন্ডা ছড়ানোর চেষ্টা করছে না, বরং তার ব্যবসার বৃদ্ধিতেও সহায়তা করছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলির মধ্যে অন্যতম হিসাবে, ভারতে অবস্থিত ব্যবসাগুলি স্বীকার করে যে, স্থায়িত্ব বা সাস্টেনেবিলিটি তাদের ব্যবসায়িক পরিকল্পনার একটি অবিচ্ছিন্ন অংশ৷ যে ব্যবসাগুলি সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে চায়, তাদের এই দীর্ঘায়ু একমাত্র দিতে পারে কিছু যুগোপযোগী পদক্ষেপ।

Tata Group-এর ক্ষেত্রে, এই চিন্তন প্রক্রিয়া নতুন নয়। বরং বলা যেতে পারে, এটি হল এই গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা – শ্রী জামশেদজী টাটার প্রধান আদর্শগুলির মধ্যে অন্যতম। Tata Power-এর জন্য, এই আদর্শের অর্থ হল স্বচ্ছ, অপরিসীম এবং সাশ্রয়ী মূল্যে ভারতীয়দের ঘরে বিদ্যুৎশক্তি পৌঁছে দেওয়া। সৌভাগ্যবশত, Tata Power তার এই উদ্দেশ্য পূরণে সফল হয়েছে এবং বর্তমানে এমন একটি ইকোসিস্টেম তৈরির কাজ শুরু করেছে যেখানে উপযুক্ত এনাব্লারদের সাথে যোগ্য মানুষ ও প্রযুক্তির মেলবন্ধন ঘটানো হবে। এর মাধ্যমে তৈরি করা হবে এমন একটি সিস্টেম এবং প্রযুক্তি, যা প্রকৃত অর্থে সাস্টেনেবল, সাশ্রয়ী এবং ভারতের চাহিদা অনুযায়ী যথার্থ।

এই উদ্দেশ্য সফল করার লক্ষ্যে News18 Network-এর সাথে হাত মিলিয়ে Tata Power চালু করেছে ‘সাস্টেনেবল ইজ অ্যাটেনেবল’ উদ্যোগ, যার লক্ষ্য হল গ্রীন এবং ক্লিন এনার্জি সম্পর্কে প্রচার করা ও তাকে জনপ্রিয় করে তোলা এবং স্থায়িত্বকে কয়েক কোটি ভারতীয়ের জীবনের অঙ্গে পরিণত করা। এই প্রচারের মাধ্যমে, Tata Power এবং News18 Network এমন বহু ক্ষুদ্র অথচ গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করে তোলার চেষ্টা করছে যা নাগরিকরা চাইলে আজই করতে পারেন এবং এর মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অবদান তৈরি করতে পারেন।

গত ১০ মাসের বেশি সময় ধরে, পুনর্নবীকরণযোগ্য বিদ্যুৎশক্তি (সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, হাইব্রিড) ব্যবহারের উপযোগিতা সম্পর্কে এই প্রচার চালানো হচ্ছে যাতে নাগরিকরা এই নির্ভরযোগ্য এবং সাশ্রয়ী বিদ্যুৎশক্তি কাজে লাগাতে পারেন। এছাড়াও বাড়িতে এবং কাজের জায়গায় ন্যূনতম বিদ্যুতের ব্যবহার নিশ্চিত করবে স্মার্টমিটার, বাড়িতে ও অফিসের ছাদে সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা করে খুব কম খরচে বিদ্যুৎ ব্যবহার করা সম্ভব, EZ হোম অটোমেশন সিস্টেম এনার্জি অপ্টিমাইজেশন বৃদ্ধি করবে, EZ চার্জের সাহায্যে ইলেকট্রিক ভেহিকেল ব্যবহার ও চলাচল সহজ হয়ে উঠবে এবং আরও অনেক কিছু।

১৭ই মে নয়াদিল্লিতে আয়োজিত সাস্টেনেবল ইজ অ্যাটেনেবল (SIA) ফেস্টের মাধ্যমে এই প্রচারটি নতুন উচ্চতায় পৌঁছে গিয়েছে। এই অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, রাজ্য-স্তরের শীর্ষ আমলা, রাষ্ট্রদূত, তারকা এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রের অগ্রগণ্য ব্যক্তিরা জলবায়ু পরিবর্তন এবং সাস্টেনেবিলিটির সাথে জড়িত প্রায় প্রতিটি দিক নিয়ে একটি আলোচনা করার জন্য একত্রিত হয়েছিলেন, এর উদ্দেশ্য ছিল এমন একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা যেখানে সমাধান এবং বিভিন্ন ধারণার উদ্ভব হতে পারে।

একটি সাস্টেনেবল পৃথিবী: ক্লিন এনার্জিতে রূপান্তরের কৌশল

এই অনুষ্ঠানের শুরুতে ইজরায়েল, ডেনমার্ক, রিপাব্লিক অফ উরুগুয়ের ভারতীয় রাষ্ট্রদূত এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদলের প্রধান, আরও সাস্টেনেবল বিশ্বের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আলোচনা করে। এই অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা করেছেন CNN-News18 এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর, জাক্কা জ্যাকব।

ভারতের ইজরায়েলি রাষ্ট্রদূত নাওর গিলন বক্তব্য পেশ করার সময়ে বিভিন্ন সিনার্জি সম্পর্কে জানান যেগুলি ভারত এবং ইজরায়েলের পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে রূপান্তরের জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে- বিশেষত অ্যালুমিনিয়াম এয়ার ব্যাটারিতে গুরুত্বপূর্ণ JV-সহ শক্তি সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে। এক্ষেত্রে নিশ্চিত ভাবেই ভারতের বিশাল অ্যালুমিনিয়াম রিজার্ভ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে। রিপাব্লিক অফ উরুগুয়ের রাষ্ট্রদূত অ্যালবার্টো এ. গুয়ানি অত্যন্ত গর্বের সাথে উরুগুয়ের অসামান্য কৃতিত্ব সম্পর্কে এই অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন- সেই দেশের বিদ্যুতের চাহিদার ৯৮% পূরণ করা হয় পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির মাধ্যমে৷ এটি এমন একটি দেশের কাহিনী যার যাত্রা অত্যন্ত আকর্ষণীয় কারণ, কয়েক বছর আগেও সেই দেশের বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে সমস্ত শক্তি জীবাশ্ম জ্বালানির আকারে আমদানি করা হত, এখন তারা উৎপাদিত অতিরিক্ত শক্তির জন্য গ্রীন হাইড্রোজেনকে স্টোরেজ সমাধান হিসাবে অন্বেষণ করছে।

ভারতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলের প্রধান মিঃ উগো আস্তুতো, ইইউ-এর নির্গমন লক্ষ্যমাত্রা সম্পর্কে বক্তব্য পেশ করেন এবং তিনিও তাঁদের এনার্জি সাপ্লাই চেন-এ বৈচিত্র্য আনার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন, যাতে তাদের ভবিষ্যতে আর কখনও ব্ল্যাকমেলের শিকার হতে না হয়, যে পরিস্থিতিতে তাদের রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময় পড়তে হয়েছিল। তিনি ভারতের জলবায়ু এবং এনার্জি ট্রানজিশন অংশীদারিত্বের বিষয়ে আশাব্যঞ্জক কথা বলেছেন। তাছাড়াও প্রযুক্তির মাপকাঠিতে ভারতের ক্ষমতার প্রতি আস্থা প্রকাশ করেছেন, কারণ এটি কেবল ইউরোপ এবং ভারতের জন্য নয়, বরং সমগ্র বিশ্বের জন্য কাজ করবে। ভারতে ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত ফ্রেডি স্ভানেও প্রযুক্তির মাপকাঠি তৈরি করার এবং এটি করার জন্য আরও সাশ্রয়ী মূল্যের উপায় খুঁজে বের করার জন্য ভারতের ক্ষমতার প্রসঙ্গ তোলেন। তিনি প্রযুক্তিকে আরও সহনশীল করে তোলার বিষয়ে ভারতের ক্ষমতা সম্পর্কে ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন।

টার্গেট ২০৩০ – বিগ রিনিউয়েবল এনার্জি চ্যালেঞ্জ

দ্বিতীয় প্যানেলে, আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল ভারতের বিগ রিনিউয়েবল এনার্জি চ্যালেঞ্জ এবং ২০৩০-এর জন্য আমাদের স্থির করা লক্ষ্যের দিকে অগ্রগতি। CNBC TV18-এর দিল্লী ব্যুরো চিফ পরীক্ষীত লুথরা এই প্রসঙ্গে UNIDO-র রেনে ভান বের্কেল; CEEW-এর জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ও CEO অরুণাভ ঘোষ; MoRTH -এর সেক্রেটারি অনুরাগ জৈন এবং Tata Power-এর পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি বিভাগের CEO, আশিস খান্না-র সাথে কথা বলেন, ভারতের এনার্জি ট্রানজিশনের সাথে সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ বিষয়ে।

যদিও এখানে বিদ্যুৎচালিত যানবাহন, গ্রীন হাইড্রোজেন মিশন এবং উদীয়মান গ্রীন টেকনোলজির খরচ কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন PLI এবং ভারতীয় স্টার্টআপগুলির ভূমিকার মতো বৈচিত্র্যময় বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। তবে যে বিষয়টি সকলের মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল তা হল, ভারতীয় শিল্পগুলিকে নির্ঝঞ্ঝাটে গ্রীন এনার্জি-তে রূপান্তরিত করার উপায় কী হতে পারে।

অরুণাভ ঘোষ ব্যাখ্যা করেছেন যে, বাজারকে সচল রাখার জন্য সবার প্রথমে সরবরাহের দিকটি মজবুত করে তোলার দরকার ছিল। তা ইতিমধ্যে সফল হয়েছে। এখন সময় এসেছে চাহিদার দিকে নজর দেওয়ার, যা বেসরকারি উদ্যোগগুলির তরফে আসা দরকার। আশিস খান্না B2B এনার্জি মার্কেটকে উৎসাহিত করার প্রয়োজনীয়তা এবং কোম্পানিগুলিকে স্বাধীনভাবে গ্রীন এনার্জি ব্যবহার করার স্বাধীনতা দেওয়ার উপরে জোর দেন। তিনি সৌরশক্তি, বিশেষত – ছাদে সৌর প্যানেল, সৌর পাম্প এবং সৌর মাইক্রোগ্রিডের মাধ্যমে বিকেন্দ্রীভূত শক্তির ভূমিকার পাশাপাশি কীভাবে এই পদ্ধতিগুলি ছোটখাট ব্যবসা এবং সাধারণ মানুষ উভয়কেই গ্রীন এনার্জি গ্রহণ করতে সক্ষম করছে- তার উপর জোর দিয়েছিলেন।

অনুরাগ জৈনও এই বিষয়ে তাঁর আশাবাদিতা ব্যক্ত করেছেন। তিনি বক্তব্য পেশ করার সময়ে যে বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সেটি হল, সৌর বিদ্যুতের দাম ২০১০ সালে যা ছিল এখন তার ভগ্নাংশে পরিণত হয়েছে এবং এটি বাস্তবে প্রচলিত বিদ্যুতের তুলনায় এখন অনেকটাই সস্তা। রেনে ভান বের্কেল বিদ্যুতের কার্যকারিতার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছেন: গ্রীন এনার্জির অপব্যয় করার কোনও মানে হয় না, বিশেষত যেখানে গ্রীন এনার্জি অনেক বেশি সস্তা এবং অপরিসীম।

সাস্টেনেবিলিটির সাথে ভারতের বিদ্যুৎ চাহিদার ভারসাম্য বজায় রাখা

ভারত গত এক দশকে বিদ্যুৎ ক্ষমতা সংযোজন এবং গ্রীন এনার্জি-তে রূপান্তর, উভয় ক্ষেত্রেই যে অগ্রগতি করেছে তাকে কেন্দ্র করে কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ এবং নতুন ও পুনর্নবীকরণযোগ্য বিদ্যুৎ মন্ত্রী, আর কে সিং এবং CNBC TV18-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর শিরীন ভান একটি আকর্ষণীয় আলোচনা করেন। মিঃ সিং-এর উৎসাহ (এবং গর্ব!) যথেষ্ট সংক্রামক ছিল। তিনি তাঁর বক্তব্যের মধ্যে তুলে ধরেন, ভারতে আরও ভয়াবহ তাপপ্রবাহ দেখা দিতে পারে এবং আমরা তা ইতিমধ্যে প্রত্যক্ষ করছি। এমন পরিস্থিতিতে ভারতীয়দের বিদ্যুতের চাহিদার (এই বছর আনুমানিক ২৩০ গিগাওয়াট), স্বাচ্ছন্দ্যের চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রে ভারতের ক্ষমতা সম্পর্কে কথা বলেছেন। মিঃ সিং জানিয়েছেন যে, এটি ২০১৪ সাল থেকে ১৮৪০০০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সংযোজনের ফলাফল হিসাবে সম্ভব হয়েছে – মিঃ সিংয়ের মতে এটি বিশ্বের বৃহত্তম ক্ষমতা সংযোজন।

মিঃ সিং উল্লেখ করেন যে, ২০১৫ সালে ভারত COP 21 NDC-এর যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা বহু আগেই অর্জন করেছে – আমাদের প্রতিশ্রুতি ছিল ২০৩০ সালের মধ্যে অ-জীবাশ্ম জ্বালানি উৎস থেকে আমাদের ইনস্টল করা বিদ্যুৎশক্তির ৪০% অর্জন করব, এবং আমরা ইতিমধ্যেই সামগ্রিক ভাবে ৪২.৮% এ পৌঁছে গিয়েছি, তা-ও প্রতিশ্রুতি দেওয়া সময়ের নয় বছর আগে তিনি আরও অনুমান করেছেন যে, আমরা একটি উল্লেখযোগ্য ব্যবধানে নির্গমন হ্রাসের ক্ষেত্রেও আমাদের প্রতিশ্রুত সময়কে অতিক্রম করব। মিঃ সিং ভারতে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তিতে বিনিয়োগ ঝুঁকিমুক্ত করার জন্য এই কৃতিত্ব অর্জনের কৃতিত্ব দিয়েছেন: স্বচ্ছতা তৈরি এবং স্পষ্ট প্রক্রিয়া স্থাপন, ভারত সরকার এমন একটি ইকোসিস্টেম তৈরি করেছে যেখানে সরকারি তহবিল কোনও চালিকাশক্তি নয়। পরিবর্তে, সরকার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নিলামের আহ্বান করে এবং সেখানে আয়োজকের ভূমিকা পালন করে। এর মধ্যে সৌর উৎপাদন ক্ষমতার জন্য বিডও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

ভারতের গ্রীন হাইড্রোজেন মিশনের ক্ষেত্রে, মিঃ সিং ইতিমধ্যেই ভারতকে একজন পথিকৃৎ হিসাবে দেখছেন বলে জানিয়েছেন। তিনি ৫ মিলিয়ন টন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার বিষয়ে তাঁর আস্থা প্রকাশ করেছেন এবং পর্যবেক্ষণ করেছেন যে, বিশ্ব সম্প্রদায়ও ভারতের এই নেতৃত্বকে স্বীকৃতি দিয়েছে, এর প্রমাণ হল ইউরোপের সুরক্ষাবাদী পদক্ষেপ। ভারত শুধুমাত্র উৎপাদনের পরিমাণের ক্ষেত্রেই নয়, খরচের দিক থেকেও এগিয়ে থাকবে – ভারতীয় গ্রীন হাইড্রোজেন ইতিমধ্যে উল্লেখযোগ্য হারে সাশ্রয়ী  মূল্যে উপলভ্য।

সাস্টেনেবিলিটিকে অ্যাটেনেবল বানিয়ে তোলা: ভারতের গ্রীন এনার্জি ট্রানজিশন হল আর্থিক বিপ্লবের পথ

Tata Power-এর CEO এবং MD, ডঃ প্রবীর সিংহ তাঁর বক্তব্য পেশ করার সময়ে জোর দিয়ে বলেন যে, বিন্দুমাত্র বিলম্ব না করেই গ্রীন এনার্জি সম্পর্কে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। ক্লিন এনার্জির ক্ষেত্রে ভারতের কৃতিত্ব সম্পর্কে তিনি গর্বের সাথে জানান, তার পাশাপাশি তিনি আশা প্রকাশ করেন যে ভবিষ্যতে ভারতের গ্রীন এনার্জি সেক্টর আরও বহু কৃতিত্ব অর্জন করবে।

“গত ৭০ বছরে, মাথাপিছু বিদ্যুতের ব্যবহার বহুগুণ বেড়েছে, কিন্তু আমরা বিশ্বের গড়ের এক-তৃতীয়াংশ। ভারত যেহেতু বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হচ্ছে, ভারতের শক্তির প্রয়োজন ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হবে। আমরা পুনর্নবীকরণযোগ্য উৎসের মাধ্যমে অতিরিক্ত চাহিদা কীভাবে মেটাব, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ আমাদের কাছে এটাও অপরিহার্য যেন এই সাস্টেনেবল বৃদ্ধির মাধ্যমে আমরা কেবলমাত্র ভোক্তা না থাকি, বরং তার পরিবর্তে যেন ‘উপভোক্তা’ হয়ে উঠতে পারি – যেখানে আমরা প্রত্যেকে শক্তি উৎপাদন করতে পারব, নিজেরাই ব্যবহার করতে পারব এবং সমাজের কল্যাণে ব্যবহার করার মতো ক্ষমতা অর্জন করব।”

তিনি সামগ্রিক ভাবে উন্নতির মাধ্যমে এই ভবিষ্যৎকে সক্ষম করার ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ভূমিকার উপর জোর দিয়েছিলেন – আরও ভাল রসায়নের ফলস্বরূপ ব্যাটারি স্টোরেজের উন্নতি, থার্মাল স্টোরেজ সম্পর্কে নতুন ধারণা, বা পুনর্নবীকরণযোগ্য উৎসের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনে উন্নত দক্ষতা।

তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, গ্রীন এনার্জি ট্রানজিশন আমাদের অর্থনীতিতে আরও অনেক সুবিধা নিয়ে আসবে – আমাদের গ্রহকে ক্ষতিগ্রস্ত না করেই শিল্প বৃদ্ধি থেকে শুরু করে গ্রীন কর্মীবাহিনীতে উচ্চমূল্যের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার মতো নানা উপকার করবে। ডঃ সিংহের হিসাব অনুযায়ী, আগামী ১০ বছরে প্রায় ১০ লক্ষ কর্মসংস্থান তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে। Tata Power অবশ্যই এই বিষয়টি বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি দক্ষতা উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করে চলেছে।

সাস্টেনেবল উপায়ে পরিবেশ গঠন: প্রকৃতির প্রমাণিত সমাধান

ভারতের শহরগুলি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এমনকি ছোট শহরগুলিও হিট আইল্যান্ড এফেক্টের কারণে ভুগতে শুরু করেছে, এই বিবেচনা অনুযায়ী নির্মাণ কাজের মতো ক্ষেত্রকেও জলবায়ু সম্পর্কিত ঝুঁকি কমানোর বিষয়টি যে কোনও কথোপকথনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হওয়া উচিত। CNN-News18-এর স্পেশ্যাল প্রোজেক্টের ম্যানেজিং এডিটর আনন্দ নরসিংহনের সাথে কথা বলার সময়ে এক্সপ্লোরেশন আর্কিটেকচার লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা এবং রিজেনারেটিভ ডিজাইন এবং বায়োমিমেটিক আর্কিটেকচারের গ্লোবাল থট লিডার মাইকেল পওলাইন উল্লেখ করেন যে, ভারতে তিনি যে প্রকল্পগুলি নিয়ে কাজ করছেন, সেগুলি ভবিষ্যতে স্থাপত্য সম্পর্কে আমাদের চিন্তাভাবনাকে অন্য রূপ দিতে পারে।

মিঃ পওলাইন সাস্টেনেবল আর্কিটেকচারের বাইরে গিয়ে ভাবনা-চিন্তা করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন, যার লক্ষ্য হল নেতিবাচক প্রভাবগুলি হ্রাস করে পুনরুদ্ধারমূলক স্থাপত্যের দিকে নজর দেওয়া, যা পরিবর্তে ইতিবাচক প্রভাব তৈরি করতে পারে। আমরা কীভাবে আমাদের শহরগুলির পরিকল্পনা করি তার একটি উদাহরণ দিয়ে তিনি বিষয়টি বুঝিয়ে বলেছেন – বিশ্বের সেই অংশে একটি ম্যাচিওর ইকোসিস্টেম কীভাবে কাজ করবে তা বিশ্লেষণ করার মাধ্যমে আমাদের শুরু করতে হবে: সেই জায়গাটি কতটা কার্বন শোষণ করবে, কত সংখ্যক বন্যপ্রাণী সেখানে থাকবে, কতটা অক্সিজেন সেখানে এটি উৎপাদিত হবে, সেখানে কতটা জল ফিল্টার করা হবে, জায়গাটি কতটা খাদ্য উৎপাদন করবে ইত্যাদি। নতুন পরিকল্পিত শহরের ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলিই লক্ষ্যবস্তু হওয়া উচিত।

তিনি ব্যাখ্যা করেছেন, প্রকৃতিকে অনুকরণ করার সুবিধা হল আমরা এখানে সর্বদা সার্কুলারিটি খুঁজে পাব – একটি সিস্টেমের আউটপুট অন্যকে সাহায্য করে। তাছাড়াও, আমরা যদি প্রাকৃতিক ব্যবস্থা ব্যবহার করি তাহলে আর আমাদের নতুন বিপজ্জনক বা বিষাক্ত বর্জ্য পণ্যগুলির মোকাবিলা করতে হবে না।

নিজেদের শিকড়ে ফিরে যাওয়া এবং প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্য খুঁজে পাওয়া

মাইকেল পওলাইনের সাথে মিল রেখে, কেন্দ্রীয় পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী শ্রী ভূপেন্দ্র যাদবও প্রাকৃতিক ছন্দ এবং সমাধান খোঁজার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন। তাঁর বক্তৃতায়, শ্রী ভূপেন্দ্র যাদব জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমনের পাশাপাশি, জীববৈচিত্র্যের উপরে জোর দেওয়ার পক্ষে আবেগপূর্ণ যুক্তি পেশ করেন। আমরা আজ যে জলবায়ু সম্পর্কিত সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছি তার প্রাথমিক কারণ হিসাবে তিনি মূলত উন্নয়ন এবং বৃদ্ধির নৃতত্ত্ব-কেন্দ্রিক মডেল দায়ী বলে মনে করেন। তাঁর মতে – আমরা, একটি প্রজাতি হিসাবে অন্য সবার থেকে অনেক বেশি নিজেদের চাহিদাকে অগ্রাধিকার দিয়েছি।

তিনি শ্রোতাদের প্রাচীন ভারতীয় নীতি “প্রকৃতি রক্ষিতে রক্ষিতাহ”-এর কথা মনে করিয়ে দেন। প্রকৃতি তখনই আমাদের রক্ষা করবে, যখন আমরা আমাদের চারপাশে সব ধরণের প্রাণকে রক্ষা এবং লালন করব। এই প্রাচীন নীতি আমাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে, সকলের সাথে মিলেমিশে বসবাস করার মনোভাব-সহ আমাদের পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ জীবনযাপন করার আমন্ত্রণ জানায়। জাতির উদ্দেশে তাঁর বার্তা হল, আমাদের ঐতিহ্যগতভাবে পরিবেশ সচেতন অনুশীলন এবং চিন্তাধারা মেনে চলতে হবে। “আমরা যে পরিবর্তনগুলি আনতে চাই তা নিজ থেকে ঘটবে না এবং শুধুমাত্র সরকার বা শুধুমাত্র একটি সত্তার অধীনে হওয়া কোনও ভাবেই সম্ভভ নয়, – এটি অবশ্যই একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টা, যেখানে সমগ্র জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য সরকার, সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদল এবং নিজেদের একটি ভারসাম্যের মধ্যে ফিরিয়ে আনতে হবে।”

জলবায়ু সম্পর্কিত কথোপকথনের মান উন্নয়ন: কীভাবে বলবেন

চূড়ান্ত প্যানেল আলোচনায়, আনন্দ নরসিংহনের সাথে ছিলেন অভিনেতা রাহুল বোস, গ্র্যামি পুরস্কার বিজয়ী সঙ্গীত প্রযোজক এবং পরিবেশবাদী রিকি কেজ এবং সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার ও UNDP, ইয়ুথ ক্লাইমেট চ্যাম্পিয়ন, প্রাজক্তা কলি। তাঁদের আলোচনার মূল বিষয় ছিল জলবায়ু সংক্রান্ত ক্রিয়াকলাপ এবং এই বিষয়ক তথ্য কীভাবে জনসাধারণের জন্য আরও সোজা ভাষায় উপস্থাপনা করা যেতে পারে।

রাহুল বোস তাঁর বক্তব্য পেশ করার মাধ্যমে স্পষ্টভাবে আমাদের দেশের মহিলাদের উপরে জলবায়ু পরিবর্তনের অদেখা নেতিবাচক প্রভাবের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন – অপুষ্টি থেকে শুরু করে পতিতাবৃত্তি পর্যন্ত অসুস্থতার একটি ভয়াল চক্র, গ্রাম বসবাসের অযোগ্য হয়ে গেলে এই বিষয়গুলি মহিলাদের জর্জরিত করে তোলে। বর্তমানে জলবায়ু অভিবাসন কত বড় সমস্যায় পরিণত হয়েছে তিনি সেই বিষয়ে আলোকপাত বলেন, কারণ এটি শুধুমাত্র ভবিষ্যতের সমস্যা নয়। তিনি শ্রোতাদের কাছ থেকে ইনপুট নিয়ে গণনা করে বলেন, একটি ছোট্ট পরিবর্তনের মাধ্যমে শুধুমাত্র দিল্লিতে প্রতিদিন ৩,৭৫,০০০ লিটার কলের জল বাঁচানো যেতে পারে। তার জন্য শুধুমাত্র একটি ছোট কাজ করতে হবে, যা আমাদের সকলের পক্ষে করা সম্ভব।

রাহুল যখন সরল, কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন, তখন প্রাজক্তা এমনভাবে সচেতনতা ছড়ানোর কথা বলেছেন, যা ভীতি প্রদর্শন করবে না। তিনি অল্প বয়স্ক শ্রোতাদের সচেতন করার একটি উপায় হিসাবে তিনি সংখ্যাতত্ত্বের পরিবর্তে গল্প বলার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে কথা বলেছেন। রিকি কেজ এই পদ্ধতির সাথে একমত – তাঁর নিজস্ব পদ্ধতি হল এমন ভাবে কোনও জিনিস সম্পর্কে কথা বলা, যা ভালোবাসার অনুপ্রেরণা জোগায়। তিনি একে ‘ডেভিড অ্যাটেনবরো পদ্ধতি’ বলে অভিহিত করেছেন, যা প্রকৃতির প্রতি আমাদের ভালবাসার উপর নির্ভরশীল করবে, কারণ এটি হল প্রকৃতিকে রক্ষা করার জন্য সবচেয়ে বড় চালিকাশক্তি। প্রকৃতিকে ভালোবাসলেই একমাত্র তাকে রক্ষা করার জন্য দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব।

সাস্টেনেবল ইজ অ্যাটেনেবলকে সকলের কাছে উপলভ্য করে তোলা

শ্রী ভূপেন্দ্র যাদব বলেন, এটি কোনও একটি সংস্থা বা একটি সরকার বা একটি দেশের কাজ নয়। ভূগোল ও সংস্কৃতির বিভাজন এবং বিপুল শিক্ষা ও ধারণার সেতুবন্ধন প্রয়োজন। এই কাজের জন্যই সাস্টেনেবল ইজ অ্যাটেনেবল ফেস্টের স্থানটি প্রদান করা হয়েছে: একটি প্ল্যাটফর্ম হিসাবে পরিবেশন করা এবং এই ধরনের কথোপকথন, ধারণা বিনিময় এবং নতুন সহযোগিতা গঠনের একটি সুযোগ তুলে ধরা।

ডাঃ প্রবীর সিনহা বলেছেন, “আমরা আমাদের সন্তানদের কাছে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে দায়বদ্ধ। এই শক্তির পরিবর্তন বা এনার্জি ট্রানজিশন যাতে সফল হয় তা নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব এবং কর্তব্য। এই পরিবর্তনটি শুধুমাত্র এবং শুধুমাত্র তখনই ঘটবে, যদি আমরা এর দায়িত্ব গ্রহণ নিজেদের কাঁধে তুলে নিই; এবং এমন নয় যে এর জন্য সরকার আমাদের অনুরোধ করছে বা কেউ বলেছে যে আমাদের একসাথে হাতে হাত মিলিয়ে পার্থক্য গড়ে তুলতে হবে। আমরা যখন একটি সবুজ, স্বাস্থ্যকর এবং সাস্টেনেবল বিশ্বের উত্তরাধিকার তৈরি করব, তখন আমরা প্রত্যেকে এই বিশাল পরিবর্তন নিয়ে আসার ঘটনায় অনুঘটকের ভূমিকা পালন করব এবং পরিস্থিতি বদলে দিতে সক্ষম হব।”

ইতিহাসের পাতায় ইতিবাচক ভূমিকা পালনকারী হিসেবে পরিচিতি লাভের জন্য আমরা প্রত্যেকে অনেক কিছু করতে পারি। আমরা সর্বোপরি, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য উদ্বিগ্ন। সুখবর হল যে, সেই প্রযুক্তি বিদ্যমান। রাজনৈতিক ইচ্ছাও বিদ্যমান আছে। আমাদের সকলের জন্য এই গ্রহ যেন ভবিষ্যতেও বাসযোগ্য থাকে, তা নিশ্চিত করতে সংস্থাগুলি বর্তমানে কিছু খরচসাপেক্ষ পরিবর্তন করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।  বৃহত্তর স্বার্থের কথা ভেবে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতে আপনি কেন পিছিয়ে থাকবেন? প্রত্যেক ব্যক্তির ছোট ছোট পদক্ষেপ যুক্ত হয়ে গণ আন্দোলনের রূপ ধারণ করতে পারে। এই পদক্ষেপগুলি খুব নাটকীয় বা নায়কোচিত হওয়া জরুরি নয়। সেগুলি খুব একটি খরচসাপেক্ষ বা জটিল হওয়ার প্রয়োজন নেই। এর জন্য প্রয়োজন কিছু অনুপ্রেরণা, বা আপনাকে এই সমাধানগুলি সম্পর্কে এবং আপনি বর্তমান পরিস্থিতিতে কী রকম পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন সেই বিষয়ে আরও জানতে হবে, যাতে নিশ্চিত করা যায় যে Sustainable is Attainable। আপনি এখানে সম্পূর্ণ ভিডিও দেখে নিতে পারেন, এবং এই বার্তা আরও অনেকের কাছে পৌঁছে দিতে পারেন।

(Feed Source: news18.com)