‘কুতুব মিনার সৌধ, পূজা-অর্চনার জায়গা নয়’, আদালতে বলল ASI

‘কুতুব মিনার সৌধ, পূজা-অর্চনার জায়গা নয়’, আদালতে বলল ASI

নয়াদিল্লি: তাজমহল থেকে জ্য়ানব্যাপী মসজিদ, ঐতিহাসিক সৌধ নিয়ে আইনি টানাপোড়েন চলছেই। সেই তালিকায় সংযোজন ঘটেছে কুতুব মিনারেরও (Qutub Minar Row)। সেই নিয়ে কাটাছেঁড়ার মধ্যেই আদালেত নিজেদের অবস্থান জানিয়ে দিল ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ব সমীক্ষা বিভাগ (Archaeological Survey of India/ASI)। কুতুব মিনারে হিন্দু এবং জৈন দেবদেবীর মূর্তি পুনর্স্থাপনের দাবির সাপেক্ষে ASI সাফ জানিয়ে দিল, কুতুব মিনার একটি ঐতিহাসিক সৌধ, পূজা-অর্চনার জায়গা নয়। তাতে কোনও রদবদল ঘটানো যাবে না।

কুতুব মিনার নিয়ে টানাপোড়েন আদালতে

এই প্রসঙ্গে ভারতীয় সংবিধানে লিপিবদ্ধ আইনের উল্লেখও করেছে ASI। সৌধ সংক্রান্ত ভারতের আইন উদ্ধৃত করে তারা জানায়, নাগরিকের পূজা অর্চনার মৌলিক অধিকার কেন্দ্রীয় নিরাপত্তাপ্রাপ্ত সৌধের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। ১৯১৪ সালে কুতুব মিনার যে সময় ASI সংরক্ষণের অন্তর্ভুক্ত হয়, সেই সময়ও কোনও ধর্মের লোকজনই কুতুব মিনার বা কুতুব মিনার চত্বরে পূজা-অর্চনা করতেন না বলে জানিয়ে দেওয়া হয় সংগঠনের তরফে।

তৎকালীন ২ লক্ষ দেলিওয়াল (কয়েন) খরচ করে ২৭টি মন্দিরের জায়গায় কুতুব মিনারের নির্মাণ হয়েছিল বলে দাবি করেছেন সেখানে পূজা-অর্চনার দাবিতে আদালতের দ্বারস্থ হওয়া মামলাকারীরা। এ দিন সেই বিতর্ক নিয়েও নিজেদের অবস্থান জানায় ASI। আদালতে তারা জানায়, কুতুব মিনার চত্বরের নির্মাণের কিছু অংশ মন্দির থেকে সংগৃহীত বলে উল্লেখ পাওয়া গেলেও, তা স্থানীয় মন্দির থেকেই সংগ্রহ করা হয়েছিল, নাকি বাইরে থেকে আনা হয়েছিল, তা প্রমাণ করার কোনও উপায় নেই। কারণ এই সংক্রান্ত কোনও নথিই নেই কারও কাছে। মন্দির ভেঙে সেগুলি সংগ্রহ করা হয়েছিল, কোনও রেকর্ডেই তার উল্লেখ নেই বলে জানায় ASI।

কুতুব মিনারের লৌহস্তম্ভটিও যে গোড়া থেকেই সেখানে রয়েছে, মামলাকারীরা যেটিকে বিষ্ণুস্তম্ভ বা মেরুধ্বজ বলে দাবি করছেন, সেটিও যে গোড়া থেকেই ওই জায়গাতেই অবস্থিত ছিল, তা নিশ্চিত করা যায় এমন রেকর্ডও নেই বলে জানানো হয় ASI-এর তরফে।

এ দিন শুনানি চলাকালীন, আদালত জানায়, মামলাকারীরা সৌধটিকে পূজা-অর্চনার জায়গায় পরিণত করতে চাইছেন। ৮০০ বছর আগে সেখানে মন্দির ছিল বলে দাবি করছেন। অথচ তার সাপেক্ষে কোনও আইনি প্রমাণ বা নথি দেখাতে পারেননি তাঁরা। তাই কোন যুক্তিতে কুতুব মিনারকে মন্দিরে প্রতিপন্ন করার চেষ্টা চলছে জানতে চায় আদালত। খানিকতা শ্লেষের সুরেই বিচারককে বলতে শোনা যায়, “৮০০ বছর যদি পূজা-অর্চনা ছাড়াই কাটিয়ে দিয়ে থাকেন দেব-দেবীরা, এখন হঠাৎ তাতে সমস্যা হচ্ছে কেন?” আগামী ৯ জুন এই মামলার পরবর্তী শুনানি। তার আগে সব পক্ষকে চূড়ান্ত নথি জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

তাজমহল, জ্ঞানব্যাপীর পাশাপাশি কুতুব মিনার নিয়েও বিতর্ক

কুতুব মিনার নিয়ে বিতর্ক সম্প্রতি। মামলাকারীদের দাবি, কুতুব মিনার চত্বরে গণেশ, বিষ্ণু, যক্ষ-সহ হিন্দু দেবতাদের ছবি স্পষ্ট বোঝা যায়। মন্দিরে যেমন কুয়ো, কলসি, পদ্মের থাকে, সেখানেও তা দেখতে পাওয়া যায়। কুতুব মিনারের স্তম্ভের জায়গায় বিষ্ণু, ঋষভ দেব, শিব, গণেশ, সূর্ষ, গোরী, জৈন তীর্থযাত্রীর পাশাপাশি নক্ষত্রের সমাবেশে বিরাট উঁচু মন্দির ছিল বলেও দাবি মামলাকারীদের।

(Source: abplive.com)