চার বছর আগে ভয়ঙ্কর বিমানকাণ্ডে রক্ষা পেলেও এড়াতে পারলেন না অতল জলে বিপদ৷ অতলান্তিকের গভীরে প্রাণ হারালেন পাকিস্তানি ধনকুবের শাহজাদা দাউদ৷ সঙ্গে ছিলেন তাঁর ছেলে সুলেমানও৷ টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে গিয়ে টাইটান ডুবোজাহাজে সওয়ার হয়েছিলেন পিতাপুত্র৷ আমেরিকা ও ইংল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করা শাহজাদা দাউদের সংস্থা ‘এনগ্রো’ পাকিস্তানের নামী কর্পোরেট সংস্থাগুলির মধ্যে অন্যতম৷ তাঁর বাবা হুসেইন দাউদও নিয়মিত থাকতেন ধনী পাকিস্তানি তালিকায়৷ এছাড়াও ওই যানে ছিলেন ব্রিটিশ ধনকুবের হ্যামিশ হার্ডিং৷ উড়ান শিল্পে তাঁর নাম ও সংস্থা প্রথম সারির একটি প্রতিষ্ঠান৷ দুঃসাহসিক অভিযানে অংশ নেওয়ার জন্য ইতিমধ্যে তাঁর নামের পাশে উজ্জ্বল একাধিক গিনেস রেকর্ড৷ বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যবাসী ৫৮ বছর বয়সি হার্ডিং এর আগে পাঁচ বছর ছিলেন বেঙ্গালুরুতেও৷ তাঁর সংস্থা দুবাই ও লন্ডনে বিমান কেনাবেচা করে৷
টাইটানিকের মতোই সলিলসমাধি হল টাইটান-এর। অতলান্তিকের গভীরে টাইটানিকের ধ্বংসাবাশেষ দেখতে গিয়ে এই ডুবোজাহাজের ভিতরে চিরঘুমে ঘুমিয়ে পড়লেন অভিযাত্রীরা। বৃহস্পতিবার দূর নিয়ন্ত্রিত বা রিমোট কন্ট্রোল্ড একটি যান টাইটানিকের সূচালো অগ্রভাগ বা বো-এর থেকে ১৬০০ ফুট (৫০০ মিটার) দূরে একটি ডুবোজাহাজের ধ্বংসাবশেষ চিহ্নিত করে। মার্কিন উপকূলরক্ষী বাহিনী নিশ্চিত করে এটাই টাইটান ডুবোজাহাজের ভগ্নাবশেষ। কেন শেষ হয়ে গেল টাইটান? ধ্বংসাবশেষ পরীক্ষা করে মার্কিন উপকূলরক্ষীর তরফে জানানো হয়েছে দুর্ঘটনার কারণ ‘catastrophic implosion’৷ অর্থাৎ, বিপর্যয়ে চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে গিয়েছে ডুবোজাহাজ টাইটান৷ বিশেষজ্ঞদের ধারণা, মহাসাগরের গভীরে জলস্তম্ভের চাপেই এই পরিণতি টাইটানের৷
টাইটান দুর্ঘটনার পর শাহজাদার স্ত্রী ক্রিস্টিন দাউদের মনে পড়ে গিয়েছে ২০১৯ সালের ভয়াবহ বিমানকাণ্ডের কথা৷ সে বার তাঁর বিমান প্রবল ঝড়ের মুখে পড়েছিল৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত অক্ষত ছিলেন শাহজাদা৷ ক্রিস্টাইন জানিয়েছেন, আকাশে ঝড়ের মধ্যে পড়ে প্রায় ৩ থেকে ৫ মিটার নীচে নেমে এসেছিল বিমানটি, যা খুবই ভয়াবহ এবং অস্বাভাবিক৷ ক্রিস্টিন লিখেছেন,‘‘যাত্রার সূত্রপাত ছিল স্বাভাবিক৷ উড়ানের বেশিরভাগ অংশই ছিল মসৃণ৷ কিন্তু হঠাৎই সিটবেল্ট পরার সতর্কবাণী দেওয়া হয়৷ আচমকাই বিমান নেমে আসে অনেকটাই৷ পরে জেনেছি যতই ঝড়ে পড়ুক না কেন, বিমান কখনওই ৩ থেকে ৫ মিটার নীচে নামে না৷ কিন্তু সে সময় সাঙ্ঘাতিক ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম৷ বিমানের কেবিন জুড়ে তখন শুধুই বাঁচার আর্তি৷ ’’
এর পর বিমান আরও কিছুটা নীচে নেমে যায়৷ তার পর ডান এবং বাঁ দিকে কাত হয়ে যায়৷ ক্রিস্টিনের কথায়, তাঁর মনে হতে থাকে যেন বালির বড় বস্তায় একটা দানাশস্যের মতো ওলটপালট খাচ্ছেন৷ অথবা একজন বক্সার যেন চারদিক থেকে ক্রমাগত মুষ্টির আঘাতে কোণঠাসা হয়ে পরাজিত হচ্ছেন৷ তিনি বাঁচার জন্য আসনের হাতল খামচে ধরে ছিলেন৷ মনে হয়েছিল ওই অবলম্বনটুকুই বাঁচাতে পারবে তাঁকে৷ শেষ পর্যন্ত নিরাপদে বিমানটি অবতরণ করে৷ তার পরও ক্রিস্টিনের মনে হচ্ছিল যেন দমবন্ধ পরিস্থিতি তাঁকে ঘিরে আছে৷
এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি থেকে নিরাপদে ফিরতে পেরেছিলেন ধনকুবের দাউদ দম্পতি৷ কিন্তু অতলান্তিকের গভীরে টাইটান ডুবোজাহাজ কেড়ে নিল ধনকুবের শাহজাদা ও তাঁর ছেলে সুলেমানের প্রাণ৷