রাশিয়ার ওপর পুতিনের দখল শিথিল? প্রিগোগিনের ওয়াগনার সেনাবাহিনীর বিদ্রোহের পর পরিস্থিতি কী তা জেনে নিন

রাশিয়ার ওপর পুতিনের দখল শিথিল?  প্রিগোগিনের ওয়াগনার সেনাবাহিনীর বিদ্রোহের পর পরিস্থিতি কী তা জেনে নিন

লুকাশেঙ্কো শনিবার গভীর রাতে বলেছিলেন যে আমি ওয়াগনার প্রিগোগিন এবং রাশিয়ার মধ্যে একটি চুক্তি করেছি। এর পরে, ওয়াগনার গ্রুপ তার সৈন্যদের পিছু হটতে বলেছে, যাতে রক্তপাত বন্ধ করা যায়। এই গোটা ঘটনায় একটি বিষয় বিশ্বের সামনে উন্মোচিত হল। রাশিয়ার অভ্যন্তরে ভ্লাদিমির পুতিনের খপ্পরে ফাটল দেখা দিতে শুরু করেছে। পুতিন এর আগে বলেছিলেন যে বিদ্রোহীদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে। তারপর নীরবে ওয়াগনার প্রিগোগিনের সাথে একটি চুক্তি করা হয়। এখন রাশিয়ার বার্তা সংস্থা ওয়াগনার গ্রুপের বিরুদ্ধে তদন্ত হবে বলে দাবি করছে। বিদ্রোহের পর রাশিয়া যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে তা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এদিকে রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইউক্রেনে তার সেনাদের সঙ্গে দেখা করেছেন।

রাশিয়ার উন্নয়নের দিকে আমেরিকার নজর
পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে ওয়াগনারের বিদ্রোহের বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। পশ্চিমা দেশটি প্রিগোগিনের বিদ্রোহকে রাশিয়ার উপর পুতিনের দুর্বলতা হিসাবে দেখছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন যে রাশিয়ার দেয়ালে উঠতি ফাটল দেখা যাচ্ছে। 16 মাস আগে তিনি ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ দখল করার জন্য প্রস্তুত থাকাকালীন পুতিনকে তার অভিভাবকদের সেনাবাহিনী থেকে মস্কোকে বাঁচাতে হয়েছিল। একই সঙ্গে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও বলেছেন, রাশিয়ার শূন্যতা সামনে এসেছে।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে আরও অনেক আলোচনা
এদিকে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও এ নিয়ে আরও নানা ধরনের আলোচনা চলছে। এই বিদ্রোহের পেছনে পুতিন নিজেই ছিলেন বলেও বলা হচ্ছে। রাশিয়ান বংশোদ্ভূত প্রাক্তন সিআইএ বিশ্লেষকের মতে, পুতিন এই বিদ্রোহ সম্পর্কে অবগত নন এমনটা সম্ভব নয়। এটি পুতিনের রাজনৈতিক শক্তি এবং যুদ্ধের প্রতি উত্সর্গ বাড়ানোর একটি চক্রান্ত হতে পারে। কেন ওয়াগনার প্রিগোগিনের সেনাবাহিনী হঠাৎ পিছু হটল?

বিদ্রোহ পশ্চিমাদের দ্বারা প্ররোচিত হয়েছিল
এই বিষয়টি থেকে আরও অনেক প্রশ্ন উঠে আসে। প্রশ্ন হল প্রিগোগিনের বিদ্রোহ কি পশ্চিমাদের উসকানি দিয়েছিল? এই বিদ্রোহের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্যাম্প ডেভিডে যাওয়া স্থগিত করেন। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ডেনমার্ক সফর বাতিল করেছেন। রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্রের ওপরও নজর রাখছে মার্কিন প্রশাসন। প্রশ্নগুলো এর থেকেও এগিয়ে যায়। প্রশ্ন হল শক্তিশালী পুতিন পশ্চিমাদের জন্য বেশি বিপজ্জনক নাকি দুর্বল পুতিন? কারণ এই বিদ্রোহের পর পুতিন নিজের দখল প্রমাণের জন্য যে কোনো প্রান্তে যেতে প্রস্তুত থাকবেন।

সব মিলিয়ে ব্যর্থ বিদ্রোহের পর যে কূটনৈতিক উত্তেজনা দেখা দিয়েছে তাও ইউক্রেন যুদ্ধকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। এই বিষয়ে জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ সচিবালয়ের (এনএসসিএস) প্রাক্তন পরিচালক ডঃ তারা কার্থা বলেছেন, “যখন প্রিগোগিনের মতো ঘটনা ঘটে, তখন স্পষ্টতই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উপর প্রশ্ন ওঠে। এই ধরনের ঘটনা অন্য দেশগুলিকে মনে করে যে পুতিনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। কিছু পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সত্য হল রাশিয়ান সরকার প্রিগোগিনকে সমস্ত সরঞ্জাম এবং অস্ত্র দিয়েছে। তারা নিশ্চয়ই নিজেরা অস্ত্র তৈরি করেনি। প্রশ্ন হল একজন রুশ যোদ্ধাও এই বিদ্রোহ বন্ধ করতে পারত, কিন্তু তা হয়নি। মানে ভিতর থেকে নিশ্চয়ই কিছু সমর্থন ছিল, নইলে এমন বিদ্রোহ হঠাৎ হত না এবং হঠাৎ করে শেষও হত না।

অন্যদিকে প্রাক্তন কূটনীতিক অশোক সজ্জানহার বলেছেন, “আমি বুঝতে পারছি যে এর পেছনে প্রেসিডেন্ট পুতিনের হাত আছে বা কোনও ষড়যন্ত্র রয়েছে যাতে পুতিন এবং প্রিগোজিন মিলিত হয়েছে, তাদের মধ্যে কিছু যোগসাজশ হয়েছে… আমি এই দাবিগুলিকে খুব গ্রহণ করি। সিরিয়াসলি।” আমি বিশ্বাস করার মতো অনেক কিছু মনে করি না। আসলে এমনটা হতে পারে না। এর আগেও প্রিগোগিন রাশিয়ার অফিসার ও নেতাদের সম্পর্কে অনেক কথাই বলেছেন। প্রিগোগিন আরও বলেছেন যে রাশিয়ান সেনাবাহিনী তাকে যুদ্ধ করতে সাহায্য করেনি। এমনকি প্রিগোজিন বলেছেন যে রাশিয়ান সেনাবাহিনীও ওয়াগনারের সেনাবাহিনীকে আক্রমণ করেছিল। আমি বুঝতে পারি যে এই বিষয়ে পুতিন এবং প্রিগোজিনের মধ্যে কোনও যোগসাজশ থাকত না।”

কেন ওয়াগনারের সেনাবাহিনী 24 ঘন্টার মধ্যে পিছু হটল?
কেন ওয়াগনারের সেনাবাহিনী 24 ঘন্টার মধ্যে পিছু হটল? বেলারুশের রাষ্ট্রপতি কী চুক্তি করেছিলেন, যার পরে প্রিগোজিন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন? জবাবে তারা কার্থা বলেছেন যে সোশ্যাল মিডিয়ায় বলা হচ্ছে যে প্রিগোগিন অবশ্যই বেলারুশের রাষ্ট্রপতির করা চুক্তি থেকে অর্থ উপার্জন করেছেন। কিন্তু এটা টাকার ব্যাপার নয়। এটা ক্ষমতার ব্যাপার। ক্রেমলিন যদি প্রিগোগিনকে হত্যা করতে চাইত, তবে এটি কয়েক ঘন্টার ব্যাপার ছিল। তবে পুতিন এবং বেলারুশের প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কো খুব বুদ্ধিমানের সাথে একটি চুক্তি করেছেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই চুক্তিতে ওয়াগনার আর্মির কী হবে। এই ব্যর্থ বিদ্রোহে ইউক্রেনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বিদ্রোহের কারণে রাশিয়ায় দুর্বল প্রমাণিত হচ্ছেন পুতিন?
এই ব্যর্থ বিদ্রোহ কি রাশিয়ায় পুতিনকে দুর্বল প্রমাণ করছে? এই প্রশ্নের জবাবে অশোক সজ্জনহার বলেন, “এই বিদ্রোহ দিয়ে দুটো জিনিসই ঘটতে পারে। পুতিনের সহানুভূতিশীলদের সঙ্গে তার সমর্থকরাও যোগ দেবেন। একই সঙ্গে পুতিনের বিরোধীরাও একটা বার্তা পাবে যে তারাও একজোট হয়ে পুতিনের বিরুদ্ধে কিছু করবে।” “করতে পারে।”

প্রিগোগিনের বিরুদ্ধে চলমান সব ফৌজদারি মামলা বন্ধ হয়ে যাবে
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি এস পেসকভ বলেছেন যে প্রিগোগিনের বিরুদ্ধে চলমান সমস্ত ফৌজদারি মামলা বন্ধ করা হবে। গ্রুপের যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। প্রিগোগিনকে রাশিয়া ছেড়ে বেলারুশে যেতে হবে।

(Feed Source: ndtv.com)