‘আপনি কি অন্যদের সঙ্গে সুবিচার করেছেন ?’ বিডিওকে প্রশ্ন হাইকোর্টের, বহাল সাসপেনশনের নির্দেশ

‘আপনি কি অন্যদের সঙ্গে সুবিচার করেছেন ?’ বিডিওকে প্রশ্ন হাইকোর্টের, বহাল সাসপেনশনের নির্দেশ

সৌভিক মজুমদার, কলকাতা : সিঙ্গল বেঞ্চের পর কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) ডিভিশন বেঞ্চেও ধাক্কা উলুবেড়িয়ার বিডিও নীলাদ্রিশেখর দে-র। বিচারপতি অমৃতা সিনহার নির্দেশে হস্তক্ষেপ করল না ডিভিশন বেঞ্চ। আপনি কি অন্যদের সঙ্গে সুবিচার করেছেন ? বিডিওকে প্রশ্ন করে আদালত। সাসপেনশনের নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে যান বিডিও। কিন্তু  মামলা ফেরত গেল বিচারপতি সিন্হার কাছেই। ৩ অগাস্ট বিচারপতি অমৃতা সিন্হার এজলাসে পরবর্তী শুনানির সম্ভাবনা।

পঞ্চায়েত ভোটের মাঝে দুর্নীতিতে যুক্ত থাকার অভিযোগ উঠেছিল উলুবেড়িয়ার বিডিও-র বিরুদ্ধে। প্রাক্তন বিচারপতির এক সদস্যের কমিশন সব তথ্য খতিয়ে দেখে দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছিল। তাঁর পক্ষ থেকে হাইকোর্টে নজিরবিহীনভাবে বিডিও, এসডিওকে সাসপেন্ড করার সুপারিশ করেছিলেন কমিশন। যারপরই নির্বাসনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। বিচারপতি অমৃতা সিন্হার যে নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করেন উলুবেড়িয়ার বিডিও। বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হন তিনি।

যেখানে এদিন সওয়াল জবাবে বিচারপতির কী চান প্রশ্নে বিডিও-র আইনজীবী উত্তর দেন সুবিচার চাই। যারপরই বিচারপতি বলেন আপনি কি অন্যদের সঙ্গে সুবিচার করেছেন? বিডিওকে প্রশ্ন আদালতের। ‘সংবিধান আপনাকে ভরসা করেছিল,কিন্তু আপনি কি সেই ভরসা রেখেছেন?’ আপনি প্রতারণা করেছেন বলে অভিযোগ, মন্তব্য বিচারপতি অপূর্ব সিনহা রায়ের। আমার বক্তব্য শোনা হোক, আজমল কাসভের বক্তব্যও শোনা হয়েছিল, সওয়াল বিডিও-র আইনজীবীরা।

এবারের পঞ্চায়েত ভোটে (Panchayat Election 2023) বেনজিরভাবে কারচুপির অভিযোগ উঠেছে বিডিওদের বিরুদ্ধেও। এবার এক সিপিএম প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বিকৃতির মামলায় সংশ্লিষ্ট BDO-SDO সহ কয়েকজন আধিকারিককে সাসপেন্ডের সুপারিশ করেছে কলকাতা হাইকোর্ট নিযুক্ত কমিটি। তাঁদের বিরুদ্ধে FIR করতে হবে বলেও সুপারিশ করেছে ওই কমিটি।

ঠিক কী হয়েছিল ? গত ২১ জুন হাওড়ার বহিরা ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিএম প্রার্থী কাশ্মীরা বেগম খান ও ধূলাসিমলা গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিএম প্রার্থী তনুজা বেগম মল্লিক কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) দ্বারস্থ হন। মামলাকারী কাশ্মীরা বেগম খানের তরফে আদালতে অভিযোগ করা হয়, তাঁদের মনোনয়নপত্র বিকৃত করেছেন উলুবেড়িয়া ১ নম্বর ব্লকের বিডিও নীলাদ্রিশেখর দে। যার ফলে স্ক্রুটিনিতে তাঁদের নাম বাদ গেছে।

এই মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিন্হা CBI তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন। বিচারপতি সিন্হার এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে যায় রাজ্য সরকার। ডিভিশন বেঞ্চ সিবিআই তদন্তের নির্দেশের উপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দেয়। সম্প্রতি, এর তদন্তে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি দেবীপ্রসাদ দে-কে নিয়ে ১ সদস্যের কমিটি তৈরি করেন বিচারপতি অমৃতা সিন্হা।

অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি দেবীপ্রসাদ দে অনুসন্ধান রিপোর্ট দিয়ে বলেন, ষড়যন্ত্র করে মনোনয়নপত্র বিকৃত করা হয়েছে। BDO, SDO এই কাজে ষড়যন্ত্র করে থাকতে পারেন। একইসঙ্গে এই চক্রে যুক্ত থাকতে পারেন অনগ্রসর শ্রেণির দফতরের অফিসার। তাদের তিনজনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত করে পদক্ষেপ করতে হবে। দেবীপ্রসাদ দে পর্যবেক্ষণে জানান, কাশ্মীরার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো তৃণমূল প্রার্থী লুৎফানেসা  বেগমের OBC সার্টিফিকেট জাল। কিন্তু, SDO অভিযোগ পাওয়ার পরও কোনও পদক্ষেপ না করে আবেদনকারীকে নথি দিতে বলেন।

কমিটির অনুসন্ধান অনুযায়ী এদিন আদালত পর্যবেক্ষণে জানায়, উলুবেড়িয়া-১ নম্বর ব্লকের বহিরা-১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত আসনটি ওবিসি সংরক্ষিত।সিপিএম প্রার্থী কাশ্মীরা বেগম খান ওবিসি সম্প্রদায়ের। কিন্তু, তদন্তে তৃণমূল প্রার্থী লুৎফানেসা বেগম ওবিসি সম্প্রদায়ের নন বলে স্বীকার করে নেন।অসত্য তথ্য দিয়ে তাঁকে ওবিসি সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছিল। অর্থাৎ, তৃণমূল প্রার্থীর ওই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার যোগ্যতাই নেই। তথ্য বিকৃত করে সিপিএম প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন তৃণমূল প্রার্থী। আর এই পুরো ঘটনায় সরকারি আধিকারিকরা যুক্ত।

(Feed Source: abplive.com)