কোন মিউচুয়ালে ফান্ডে বিনিয়োগ করলে লাভবান হবেন ? জেনে নিন…

কোন মিউচুয়ালে ফান্ডে বিনিয়োগ করলে লাভবান হবেন ? জেনে নিন…

#কলকাতা: ভ্রমণের আগে সাধারণত আমরা ট্র্যাভেল এজেন্টেদের সঙ্গে যোগাযোগ করি এবং তাঁদের পরামর্শ নিয়ে থাকি। ধরা যাক, এজেন্টকে জিজ্ঞেস করলাম, কীসে চড়ে আমি ঘুরতে যেতে পারি? অবশ্যই সেই এজেন্ট প্রথমেই জানতে চাইবেন, আমি কোথায় ঘুরতে যেতে চাইছি। কারণ তার উপরেই নির্ভর করবে আমার পরিবহণের মাধ্যম। ধরা যাক, আমি কাছাকাছির মধ্যেই কোনও জায়গায় যেতে চাইছি, যার দূরত্ব ১০ কিলোমিটার। সে ক্ষেত্রে একটা অটো অথবা বাসেই চলে যাওয়া যেতে পারে। আবার যদি কলকাতা থেকে মুম্বই যেতে চাই, সে ক্ষেত্রে কিন্তু ফ্লাইটে যাওয়াটাই সব চেয়ে ভালো। আরও সহজ ভাষায় বলতে গেলে, দীর্ঘ যাত্রা করার জন্য অটো অথবা বাস নেওয়া ঠিক নয়, কারণ তা বেশি সময় নেবে এবং ব্যয় সাপেক্ষও বটে! আবার অন্য দিকে, কম রাস্তা অতিক্রম করার ক্ষেত্রে ফ্লাইট পাওয়া যায় না। 

ঠিক সে ভাবেই, নিজের জন্য সঠিক মিউচুয়াল ফান্ড (Mutual Fund) বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রেও সব চেয়ে আগে যে প্রশ্নটা আসে, সেটা হল- এই বিনিয়োগের থেকে আমার প্রত্যাশা কী? 

তাই বিনিয়োগ থেকে কেমন এবং কত পরিমাণ রিটার্ন আমরা আশা করছি, সেটা টাকা বিনিয়োগ করার আগে ভালো ভাবে স্থির করা উচিত। একটা নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে তার পরেই পুঁজি ঢালতে হবে। উদ্দেশ্যহীন ভাবে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করলে শেষে দেখা যায় যে, লাভের-লাভ কিছুই থাকে না। তা ছাড়া উদ্দেশ্য নির্দিষ্ট থাকলে বিনিয়োগের জন্য সঠিক ফান্ড বাছাই করতেও সুবিধা হয়। 

মিউচুয়াল ফান্ডে টাকা লগ্নি করার সময় বিনিয়োগকারীদের কয়েকটি বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। আসলে বাজারের সূচকের ওঠা-নামা, সুদের প্রকৃতি-সহ আরও বেশ কয়েকটি বিষয়ের উপর মিউচুয়াল ফান্ডের লাভ এবং লোকসান নির্ভর করে। ফান্ডের পারফরম্যান্স সব সময় এক রকম থাকে না। বর্তমানে যে বিনিয়োগে ভালো লাভ বা রিটার্ন আসছে, পরে আবার তার থেকেই লোকসান হতে পারে। এই জন্য নিয়মিত লগ্নি করা ফান্ডের পারফরম্যান্সের দিকে নজর রাখতে হবে। যদি দেখা যায় যে, যেখান থেকে ভালো রিটার্ন আসছিল, বর্তমানে তার সূচক নিম্নমুখী, তখন পরিস্থিতি বুঝে সঠিক পরামর্শ নিয়ে সঠিক পদক্ষেপের মাধ্যমে ঝুঁকি এড়িয়ে যেতে হবে।   

বিনিয়োগের উদ্দেশ্য:

স্বল্পমেয়াদী না দীর্ঘমেয়াদী– কী উদ্দেশ্যে টাকা লগ্নি করতে চাইছি, কতটা রিটার্ন চাইছি এবং কতটা ঝুঁকি বহন করতে পারব– মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করার সময় এই বিষয়গুলি ভেবে রাখা দরকার। ধরা যাক, আমি ২০ বছরের জন্য টাকা রাখতে চাইছি। তার জন্য লিক্যুইড ফান্ডে (Liquid Fund) (যেখানে বিনিয়োগ করা অর্থ যে কোনও সময় তোলা যায়) টাকা লগ্নি করছি। এই পদক্ষেপ কিন্তু একেবারেই ঠিক নয়। লিক্যুইড ফান্ড সাধারণত স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগের জন্য ব্যবহার করা উচিত। আর দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ইক্যুইটি ফান্ডই (Equity Fund)সব চেয়ে ভালো উপায়। 

ফান্ড ম্যানেজার:

অনেকেই ফান্ড ম্যানেজার খোঁজার সময় ‘আলফা’ নামের একটি শব্দের মুখোমুখি হতে পারেন। এই আলফার নিরিখেই ম্যানেজারের সাফল্য ও ব্যর্থতা নির্ধারণ করা যায়। অর্থাৎ আলফা হল, মিউচুয়াল ফান্ড ম্যানেজারের পারফরম্যান্স সূচক। ম্যানেজারের হাতে থাকা ফান্ডে ভাল রিটার্ন এসেছে কি না, তা আলফা রেটিং দেখে বুঝে নেওয়া যায়। যদি আলফা সূচক ‘পজিটিভ’ হয়, তবে বুঝতে হবে যে, ফান্ডে লাভ হয়েছে। আর আলফা সূচক ‘নেগেটিভ’ হলে বুঝতে হবে যে, ফান্ডের পারফরম্যান্স ভালো হয়নি। প্রতি তিন মাস অন্তর এই রেটিং দেওয়া হয়। কোনও ফান্ডে বিনিয়োগ করার আগে ফান্ড ম্যানেজারের আগের কয়েকটি ‘পজিটিভ’ এবং ‘নেগেটিভ’ রেটিং দেখে নেওয়া উচিত। 

ফান্ডের পুঁজি:

মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নি করার আগে দেখে নিতে হবে যে, যিনি তহবিলে বিনিয়োগ করছেন, তার পুঁজি যেন মোটা অঙ্কের হয়। অর্থাৎ, ফান্ডের স্থিতিশীলতা যেন ১-২ জন লগ্নিকারীর উপর নির্ভর না-করে। কম অঙ্কের ফান্ড থেকে কোনও বিনিয়োগকারী পুঁজির একটা বড় অংশ সরিয়ে নিলে সম্পূর্ণ তহবিলে তার প্রভাব পড়বে। এই জাতীয় সমস্যা এড়াতে বেশি পুঁজি রয়েছে, এমন ফান্ডে অর্থ বিনিয়োগ করা উচিত। 

রিটার্ন বিশ্লেষণ

তহবিল চয়ন করার সময় রিটার্নের মাপকাঠি বিশ্লেষণ করে দেখতে হবে। কী ভাবে রিটার্ন যাচাই করা হবে? কোনও মিউচুয়াল ফান্ড যদি আগের বছর ভালো সাফল্য পেয়ে থাকে, তার মানে সেটিই সেরা। আবার একই ভাবে, কোনও ফান্ড যদি আগের বছর ভালো রিটার্ন আনতে না-পারে, তার মানে কি সেটি বিনিয়োগযোগ্য নয়? না, গত বছর ভালো রিটার্ন এনেছে মানেই এই বছরও ভালো হবে, তা নিশ্চিত নয়। ফান্ড ম্যানেজারের পাশাপাশি মার্কেটের উপরেও লাভ-ক্ষতি নির্ভর করে। দীর্ঘ, স্বল্প এবং মাঝারি মেয়াদে একটি ফান্ড আগের কয়েক বছরে কেমন রিটার্ন দিয়েছে এবং একই শ্রেণির অন্যান্য তহবিলগুলির পারফরম্যান্সের কেমন– তার একটা তুলনামূলক চিত্র ছকে ফেলতে হবে। যত সময়ের জন্য টাকা লগ্নি করা হচ্ছে, সেই মেয়াদে আগে কেমন সাফল্য এসেছে, সেই বিষয়েও যাচাই করে দেখতে হবে। এই সমস্ত বিষয়গুলি বিশ্লেষণ করলে সহজেই লগ্নিযোগ্য এবং তুলনামূলক নিরাপদ ফান্ড বেছে নেওয়া যাবে। 

সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং ভালো রিটার্ন দেবে, এই রকম মিউচুয়াল ফান্ড খুঁজে বার করার কোনও বিজ্ঞানসম্মত উপায় নেই। কারণ বাজারের পাশপাশি দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উপর সূচকের ওঠা-নামা নির্ভর করে। তবে ভালো পরামর্শদাতা এবং দক্ষ ফান্ড ম্যানেজার থাকলে ভালো লাভ আশা করা যেতে পারে।

Published by:Dolon Chattopadhyay

(Source: news18.com)