দিনটা ছিল ২০১৯ সালের ৭ সেপ্টেম্বর। ঠিক বছর চারেক আগে এই দিন ব্যর্থ হয়েছিল ভারতের চন্দ্রাভিযান-২। ইসরোর যে কন্ট্রোল রুম বুধবার আনন্দ-উল্লাস দেখল, সেই কন্ট্রোল রুমেই সে দিন শিবন চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি। চন্দ্রাভিযান-২-এর নেতৃত্বে ছিলেন ইসরোর প্রাক্তন প্রধান কৈলাসাভাড়িভু শিবন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁকে জড়িয়েও ধরে সান্ত্বনা জানান কিন্তু তাতেও চোখের জল বাঁধ মানেনি তাঁর।
মঙ্গলবার তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা আগেরবারের ভুল থেকে শিখেছি। সেগুলি মেরামত করেছি। শুধু তা-ই নয়, আরও বেশ কয়েক ধাপ এগিয়ে এবারের পরিকল্পনা করা হয়েছে। তাই এবার আমরা সফল হবই।’ তবে, গতকাল চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে চন্দ্রযান-৩ অবতরণের পর সবথেকে জ্বলজ্বল করছিল তাঁর মুখ। ইসরোর কন্ট্রোল রুমে না থাকলেও প্রত্যকটা মূহুর্তের খবরে তাঁর নজর ছিল। বুধবার, বিক্রম চাঁদে পা রাখার পরে মুছে গেল চার বছর আগের মনোবেদনা, যন্ত্রণা, ক্লেশ।
মুখে চাওড়া হাসি নিয়ে শিবন বললেন, ‘আমরা চাঁদে পৌঁছেছি, এই মুহূর্তে দেশের জন্য সবথেকে সুইট খবর হলো এটাই। গোটা দেশ চার বছর ধরে অপেক্ষা করেছে। আমি কতটা খুশি, ভাষায় বোঝাতে পারব না। দেশের জয়। আমি এই সাফল্যের জন্য দেশবাসীকেই অভিনন্দন জানাচ্ছি।’
চলতি বছরের চন্দ্রযান-৩ অভিযান নিয়ে আগ্রহ ছিল সমগ্র দেশবাসীর। হয়ত অনকেই জানিনা চাঁদের অভিযান সফল হলে কতটা উপকৃত হবে দেশ। কিন্তু এই আনন্দ ভারতের বিশ্বকাপ জেতার আনন্দের মতো। কারুর চোখে জল আবার কেউ উচ্ছ্বাসে জড়িয়ে ধরল পাশের অচেনা মানুষকে। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটা ভারতের সাফল্য ঠিকই। কিন্তু গোটা পৃথিবী-এর সুফল পাবে। যে তথ্য আমরা পাব, তা শুধু আমাদেরই নয়, চাঁদ নিয়ে পৃথিবীর বিজ্ঞানীদের সামনে নতুন দিশা খুলে দিতে পারে। এই তথ্য থেকে অনেক নতুন নতুন জিনিস আবিষ্কার করতে পারবেন তাঁরা।’
চাঁদের দক্ষিণ মেরু আবিষ্কারের কৃতিত্ব পেল ইসরো। মহাকাশ বিজ্ঞানে নতুন ইতিহাস গড়ল ভারতের ৷ নির্দিষ্ট সময়েই চাঁদের বুকে নামল চন্দ্রযান-৩ ৷ চূড়ান্ত পর্যায়ের এই অবতরণ প্রক্রিয়ায় ১৯ মিনিট সময় লেগেছে। চাঁদের দক্ষিণ মেরু এখনও সবার কাছেই অজানা। পৃথিবীর আর কোনও দেশ সেখানে পৌঁছতে পারেনি। সেখানেই পৌঁছে নতুন কীর্তি গড়ল ভারত। তৈরি হল ইতিহাস ৷ দেশের তালিকায় চতুর্থ স্থান, আমেরিকা, রাশিয়া এবং চিনের পরেই নাম লেখাল ভারত।