বন্ধ ঘর থেকে উদ্ধার ছেলের দেহ
একটা ঘরে চেয়ারে বসা অবস্থায় রয়েছে পচাগলা মৃতদেহ! প্রচণ্ড দুর্গন্ধের মধ্যেই, ঠিক তার পাশের ঘরে নির্বিকারভাবে শুয়ে রয়েছেন এক বৃদ্ধা! পুলিশ ঘরের দরজা ভেঙে ঢোকার পর, এমনই বীভৎস দৃশ্য দেখলেন প্রতিবেশীরা!
রবিবার, ছুটির সকালে, ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার সাক্ষী হলেন হাওড়ার শিবপুরের প্রসন্ন দত্ত লেনের বাসিন্দারা। ঘটনা উসকে দিল রবিনসন স্ট্রিটের স্মৃতি। বন্ধ ঘর থেকে উদ্ধার হল ছেলের মৃতদেহ। আর অসুস্থ বৃদ্ধা মা-কে উদ্ধার করে পাঠানো হল হাওড়া জেলা হাসপাতালে।
শিবপুরের ওই পরিবারের প্রতিবেশী ও বাসিন্দা তাপস পাছালের কথায়, ‘দুজনেই অনেকদিন ধরে অসুস্থতায় ভুগছিলেন। দু’দিন ধরে দুর্গন্ধ ছাড়ছিল। মনে হচ্ছিল ইঁদুর মরেছে। আজ এই জায়গা দিয়ে পচা রক্ত বেরোচ্ছিল। তা থেকেই বোঝা গেল ঘরের ভিতরে কেউ মারা গেছে।’
লাল্টু সরকারের মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে পুলিশ। শিবপুরে প্রসন্ন দত্ত লেনের এই বাড়িতেই পঁয়ষট্টি বছরের বৃদ্ধা মা মালতী সরকারের সঙ্গে থাকতেন লাল্টু। এদিন বাড়ির সামনে দেখা যায় প্রতিবেশীদের ভিড়। আত্মীয় ও প্রতিবেশী সূত্রে খবর, মা ও ছেলে দু’জনেই দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন।
২০১৬ সালে রেলকর্মী মন্টু সরকার মারা যাওয়ার পর, তাঁর পেনশনের টাকাতেই সংসার চলত তাঁর স্ত্রী মালতী ও ছেলে লাল্টুর। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, লাল্টু কোনও কাজ করতেন না। অসুস্থতাজনিত কারণে প্রতিবেশীদের সঙ্গে মেলামেশা করতেন না তাঁরা। কয়েকমাস পেনশনের টাকা পর্যন্ত তোলা হয়নি। তার জেরে মা ও ছেলে দিনের পর দিন অভুক্ত ছিলেন। কিন্তু ঘরের দরজা এঁটে নিজেদের স্বেচ্ছাবন্দি করে রাখায়, প্রতিবেশীরাও আর সহায়তার হাত বাড়াতে পারেননি।
মৃত লাল্টু সরকারের মামা শৈলেশ মল্লিক বলেন, ‘কেউ দেখার নেই। খায় না, দায় না। শেষ ১০-১৫ দিন বোধহয় খায়নি। অবস্থা শোচনীয়। লাইট কেটে দিয়েছে। দরজা খোলে না।’
ঘটনায় অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করেছে পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, দীর্ঘ অসুস্থতা ও অভুক্ত থাকার কারণেই লাল্টু সরকারের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, হাসপাতালে চেকআপের পর গুরুতর অসুস্থ মাকে এক প্রতিবেশীর বাড়িতে রাখা হয়েছে।
(Feed Source: abplive.com)