আরব সাগরের তীরে দাঁড়িয়ে রয়েছে তাজ, এরই স্থাপত্যে ছিল বিরাট ‘ভুল’

আরব সাগরের তীরে দাঁড়িয়ে রয়েছে  তাজ, এরই স্থাপত্যে ছিল বিরাট ‘ভুল’

ভারতের খ্যাতনামা হোটেলগুলির মধ্যে অন্যতম হল তাজ মহল প্যালেস। মুম্বইয়ের সমুদ্রের তীরবর্তী এই হোটেলে বিভিন্ন সময়ে দুনিয়ার তাবড় ব্যক্তিত্বেরা অতিথি হিসেবে উঠেছেন। এঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা থেকে ফেসবুকের মার্ক জুকারবার্গ। তবে ২৬/১১ জঙ্গি হানায় এই হোটেল বিদীর্ণও হয়েছে। এমনকী সারা বিশ্বের সামনে তা চর্চায় উঠে এসেছে। তা সত্ত্বেও এক নিদর্শন হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে তাজ মহল প্যালেস। এই বিলাসবহুল হোটেল তৈরি হওয়ার সময়কার বিভিন্ন কাহিনীও প্রচলিত রয়েছে।

সবথেকে প্রচলিত কাহিনীটি হল ব্রিটিশ শাসনকালের। শোনা যায়, ব্রিটিশ রাজের চলাকালীন একবার জামশেদজি টাটাকে তৎকালীন বম্বের এক প্রিমিয়াম হোটেলে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। কারণ ওই হোটেলে ভারতীয়দের প্রবেশের অনুমতি ছিল না। আসলে ওই সময়টায় ভারতীয়দের অবজ্ঞা করা হত, এমনকী তাঁদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করত ব্রিটিশরা। এই পরিস্থিতি দাঁড়িয়ে টাটা একটি বিলাসবহুল হোটেল তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেন। আর এই হোটেলে কোনও রকম বৈষম্যমূলক নীতি অনুসরণ করা হয় না। যেমন ভাবা তেমন কাজ। ৯৯ বছরের লিজে একটি জমি অধিগ্রহণ করেন টাটা। আর হোটেল বাননোর কাজে নেমে পড়েন তিনি। যদিও বিষয়টা ততটাও সহজ ছিল না। একজন জ্যোতিষীর নির্দেশে ১৯০৩ সালে হোটেলটি খোলা হয়েছিল। তবে পুরোপুরি চালু করা হয়নি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি বদলায় এবং শীঘ্রই তা বিলাসব্যসনের একটা মানদণ্ড হয়ে ওঠে। আর মজার বিষয় হল, যে হোটেলটি এক দিন টাটাকে প্রবেশের অনুমতি দেয়নি, সেই হোটেলটির তুলনাতেও উৎকৃষ্ট মানের হয়ে ওঠে তাজ মহল প্যালেস। যদিও এই কাহিনী টাটা-র তরফ থেকে কখনওই যাচাই করা হয়নি।

এ তো গেল একটা কাহিনী, এছাড়াও আরও একটা আকর্ষণীয় গল্প রয়েছে। আসলে হোটেলটির পিছনের অংশটা ছিল সাগরমুখী। অর্থাৎ সামনের দিকের অংশের তুলনায় পিছনের অংশটা ছিল বেশি সুন্দর। এর সম্ভাব্য কারণ ছিল আলাপ-আলোচনার ঘাটতি। ইতালীয় অথবা ফরাসি স্থপতি এই হোটেলের নকশা তৈরি করেছিলেন। সেই স্থপতি নীল-নকশাটি তৎকালীন বম্বেতে ফেলেই বাড়ি ফিরে যান। এবার তা নির্মাণকারীদের হাতে আসে এবং তাঁরা ভুল বোঝেন। আর হোটেলটিও ভুল ভাবে তৈরি করা হয়। গোটা এই ঘটনায় হতভম্ব হয়ে আত্মঘাতী হন ওই স্থপতি। তবে হোটেলের গায়ে তেমন আঁচ লাগেনি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর নকশা কিংবা ট্রেন্ডও বদলেছে। আজ এর আকর্ষণীয় ডিজাইন দেখার মতো।

যদিও টাটাদের কাছে এই ভুল শুধরে নেওয়ার সুযোগ হাতে আসবে। তাজের পাশেই একটা হোটেল রয়েছে, যার নাম গ্রিনস। যা তৈরি করা হয়েছিল তাজের অনেক আগে। হোটেল তৈরির জন্য এই গ্রিনস হোটেলকে অধিগ্রহণ করে টাটা। আর তাজকে আরও বাড়ানোর জন্য হোটেলটিকে ভেঙে ফেলা হয়। এবার তাজের প্রবেশ পথ বদলে ফেলা হয়। অপরিচ্ছন্ন রাস্তার বদলে প্রবেশপথ চলে যায় হোটেলের পিছনের দিকে। আরব সাগরের ঠিক সামনের অংশে। শুধরে ফেলা হয় আগের ভুল।

যদিও এই কাহিনী কতটা সত্য, তা নিয়ে বেশ সংশয়ই রয়েছে। কারণ টাটাদের এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তারা সব সময়ই এই কাহিনীকে অস্বীকার করে এসেছে।

(Feed Source: news18.com)