আচমকাই খুদে শিশুর প্রাণ কেড়ে নিতে পারে এই অসুখ! সাডেন ইনফ্যান্ট ডেথ সিনড্রোম কী?

আচমকাই খুদে শিশুর প্রাণ কেড়ে নিতে পারে এই অসুখ! সাডেন ইনফ্যান্ট ডেথ সিনড্রোম কী?

সবে মাত্র পৃথিবীর আলো দেখেছে। মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই আচমকা খুদে শিশুটি অসুস্থ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। আর সেই শিশুর চিকিৎসা যদি না করা যায় তাহলে এর চেয়ে মর্মান্তিক আর কী হতে পারে! পৃথিবীর বেশ কিছু জায়গায় এমনই ঘটনা দেখা যাচ্ছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলা হয় সাডেন ইনফ্যান্ট ডেথ সিনড্রোম।

ঠিক কী ঘটছে?

অস্ট্রেলিয়ার এক দল বিজ্ঞানী আবিষ্কার করেছেন যে সাধারণত রক্তে বুটিরিলকোলিনেসটেরাস (BChE) নামে এক ধরনের উৎসেচক কম মাত্রায় থাকার কারণেই শিশুদের রহস্যজনক সাডেন ইনফ্যান্ট ডেথ সিনড্রোম কিংবা এসআইডিএসের ঝুঁকি থাকে।
এসআইডিএস যা ‘কোট ডেথ’ নামেও পরিচিত সেটি পশ্চিম দেশগুলিতে কয়েকহাজার শিশুর প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। এবিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন (CDC) জানিয়েছে যে প্রত্যেক বছর অপ্রত্যাশিতভাবে ৩,৪০০ জন শিশু আচমকাই মারা যায়। অন্য দিকে, ব্রিটেন জানিয়েছে যে এনএইচএসের তথ্য অনুযায়ী এই ধরনের মৃত্যুতে বছরে প্রায় ২০০ জন শিশুর প্রাণ যায়।
যদিও অসুখটির নেপথ্যের কারণ রহস্যেই রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা অনেক গবেষণা করলেও এখনও পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট মারণ রোগের কারণ চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েনি। যদিও অস্ট্রেলিয়ায় সম্ভাব্যভাবে রোগটির বিষয়ে গবেষণা অনেক দূর এগিয়েছে। কিন্তু এসআইডিএসের প্রকৃত কারণ চিহ্নিত করার আরও অনেক বাকি রয়েছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

তাহলে সাডেন ইনফ্যান্ট ডেথ সিনড্রোম কী?

সাধারণত ঘুমিয়ে থাকার সময়ে এক বছরের কম বয়সী কোনও সুস্থ শিশুর আচমকাই অপ্রত্যাশিতভাবে মৃত্যুকে সাডেন ইনফ্যান্ট ডেথ সিমড্রোম বলে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ১ থেকে ৪ মাস বয়সের মধ্যে বেশিরভাগ এসআইডিএস সম্পর্কিত মৃত্যু হতে দেখা গিয়েছে।
এনএইচএসের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, গর্ভাবস্থায় এবং শিশু জন্মানোর পরে ধূমপান না করে বাবা-মায়েরা শিশুদের এসআইডিএসের ঝুঁকি কমাতে পারেন এবং শিশুরা যেন ঘুমানোর সময়ে তাদের পিঠে ঠিক মতো সাপোর্ট পায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
আবার কয়েকজন চিকিৎসকের মতে শিশুর মস্তিষ্কে অক্সিজেন যাওয়া ও জেগে থাকা নিয়ন্ত্রণ করার অংশের কোনও সমস্যার সঙ্গে এসআইডিএস জড়িত রয়েছে।

নতুন গবেষণা কী বলছে?

চলতি মাসের শুরুর দিকে ইবায়ো মেডিসিন জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, এসআইডিএসে যে সকল শিশুর মৃত্যু হয় তারা সহজাতভাবে কিছুটা ভিন্ন ধরনের হয়। গবেষণাটি পরিচালনাকারী দলটির নেতৃত্বে ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার সিডনির ওয়েস্টমিডের চিলড্রেনস হাসপাতালের ডা. কারমেল হ্যারিংটন, যাঁকে আজ থেকে প্রায় ৩০ বছর আগে এসআইডিএসে নিজের সন্তানকে হারাতে হয়েছিল।
গবেষকরা ৬৫৫ জন সুস্থ শিশুর, এসআইডিএসের কারণে মৃত ২৬ জন শিশু এবং অন্য কোনও কারণে মৃত্যু হওয়া ৪১টি শিশুর শুকনো রক্ত নিয়ে তুলনা করেছিলেন। সংশ্লিষ্ট গবেষণার দলটি লক্ষ্য করে যে এসআইডিএসের কারণে মৃত দশটি শিশুর মধ্যে নয় জনের বিসিএইচই উৎসেচকের মাত্রা অন্য দুটি বিভাগের শিশুদের তুলনায় কম রয়েছে।

বিসিএইচই উৎসেচকের কীসের জন্য দায়ী?

আসলে বিসিএইচই উৎসেচক শিশুকে জেগে থাকা, মাথা ঘোরানো কিংবা শ্বাস নেওয়ার জন্য সংকেত পাঠায়। এটি একটি অটোনমিক সিস্টেমের অংশ এবং রক্তচাপ ও শ্বাস-প্রশ্বাসের মতো শারীরিক কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। এবিষয়ে এর আগেও গবেষণায় উঠে এসেছে যে শরীরে ধূমপানের পরোক্ষ প্রভাবে বিসিএইচই-এর মাত্রা কমে যেতে পারে। তাছাড়া শিশুর জীবনের প্রথম ছয় মাসে অন্যান্য বিভিন্ন বিষয় এবং পরিবর্তনের জন্যেই এই উৎসেচকের মাত্রা কমতে পারে। এপ্রসঙ্গে ডা. হ্যারিংটন জানিয়েছেন যে, “শিশুরা যখন খুশি হয় না তখন আমাদের সেটি জানানোর জন্য তাদের একটি জোরালো প্রক্রিয়া থাকে। সাধারণত, যদি একটি শিশু জীবন-হুমকির পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়, যেমন ঘুমের সময় শ্বাস নিতে অসুবিধা হয় তাহলে তারা ঘুম থেকে জেগে কেঁদে উঠবে। কিন্তু এই গবেষণাটি দেখায় যে কিছু শিশুর এই একই উত্তেজনাপূর্ণ প্রতিক্রিয়া থাকে না।”

সতর্কতার সঙ্গে গবেষণা কেন সম্পর্কিত হতে হবে?

যদিও গবেষণায় উঠে আসা তথ্য যথেষ্ট তাৎপর্য্যপূর্ণ, তবে বিজ্ঞানীদের এখনও এসআইডিএসের কারণ ও রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে কিছু সময় লাগবে। যেমন, গবেষণায় যেখানে সাধারণ শিশুদের তুলনায় এসআইডিএস থাকলে বিসিএইচই-এর মাত্রা কম থাকে বলা হয়েছে, কিন্তু উৎসেচকের সাধারণ মাত্রা কত হওয়া উচিত না বলা হয়েনি।
পাশাপাশি এবিষয়ে অন্তত কয়েক বছর আগে শুকনো রক্তের নমুনা নিয়ে গবেষণায় করা হয়। অর্থাৎ তাজা রক্তের উৎসেচকের সঠিক মাত্রা মাপা যায়নি। এমনকী শিশুদের শরীরে কম বিসিএইচই সনাক্ত হলে চিকিৎসকেরা কোনও নির্দিষ্ট চিকিৎসার পরামর্শও দিতে পারেন নি। তাই আগামী দিনে কীভাবে এসআইডিএস রোগ নিরাময়ের নতুন দিশা পাওয়া যায়, সেটাই দেখার!

(Source: news18.com)