ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধে হুথিদের যোগদান বিপদ বাড়াচ্ছে কয়েকগুণ, কারা এই ‘হুথি’ জানেন

ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধে হুথিদের যোগদান বিপদ বাড়াচ্ছে কয়েকগুণ, কারা এই ‘হুথি’ জানেন

ইজরায়েলের সঙ্গে গাজার সংঘাত চলছে প্রায় একমাস হতে চলল। যদিও ইজরায়েল এই আক্রমণ হামাসের বিরুদ্ধে বলে দাবি করেছে। এরই মধ্যে ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা আনুষ্ঠানিক ভাবে এই সংঘর্ষে যোগ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। তাদের দাবি, তারা প্যালেস্তাইনের সমর্থনে ইজরায়েলি লক্ষ্যবস্তুতে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হানা শুরু করেছে।

টাইমস অফ ইজরায়েলে দাবি করা হয়েছে, হুথি গোষ্ঠীর মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারিয়া বলেছেন, ‘ক্রমবর্ধমান মানবিক সঙ্কটের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গাজার জনগণের জন্য ধর্মীয়, নৈতিক, মানবিক এবং জাতীয় দায়িত্ববোধের কারণে বিমান হামলা চালানো হয়েছে।’

গত মঙ্গলবার, হুথিদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ব্যর্থ করে দিয়েছে ইজরায়েলি অ্যারো-৩ অ্যান্টি-ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধে হুথিদের যোগ দেওয়ার বিষয়টি খানিকটা প্রত্যাশিতই ছিল। এতে যে মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে উত্তেজনা বাড়বে, তাও প্রায় নিশ্চিত। তবে হুথিদের ক্ষেপণাস্ত্র ইজরায়েলের উন্নত বিমান প্রতিরক্ষায় তেমন দাগ কাটতে পারবে না বলেই বিশেষজ্ঞ মহলের ধারণা।

তার আগে সোমবার রাজধানী জেরুজালেমে, ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সরাসরি ইরানের দিকে আঙুল তুলে বলেন, ‘ইরান চাইছে ইরাক, ইরান সিরিয়া, লেবানন এবং ইয়েমেনকে ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে ইজরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণ চালাতে। এটি বড়, খুবই বড় বিপদ।’

ইরান সরকারের সঙ্গে হুথিদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে বলে অভিযোগ। এই অঞ্চলে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের সঙ্গে তাদের বিরোধ রয়েছে। গত কয়েক বছরে হুথিরা সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, সৌদি আরবের বিরুদ্ধে কার্যক্রম চালাচ্ছে। ফলে তারা আমেরিকা ও ইজরায়েলের বিপক্ষে।২০২২ সালে জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, ‘হুথিরা জলপথে বিস্ফোরক এবং সামুদ্রিক মাইন ব্যবহার করে লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক নৌবহরে হামলা চালিয়েছে।’

হুথিরা কারা?

১৯৯০-এর দশকে হুসেন বদরুদ্দিন আল-হুথির অধীনে এরা একটি ধর্মতাত্ত্বিক গোষ্ঠী হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। এরা আনুষ্ঠানিক ভাবে ‘আনসার আল্লাহ’ (ঈশ্বরের সমর্থক) নামে পরিচিত, শিয়া সম্প্রদায়ের জায়িদি শাখার প্রতিনিধি। সুন্নি ওহাবি মতাদর্শ থেকে জায়িদি শিয়া অধিকার রক্ষা করাই তাদের লক্ষ্য। তবে, গত কয়েক বছরে তারা ইয়েমেনের রাজনীতিতে ক্ষমতা কায়েম করেছে।

হুথিদের উত্থান

২০১১ সালের আরব বসন্তের পর ইয়েমেনের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাকে পুঁজি করে, হুথিরা দ্রুত এগোয়। ২০১৪ সালে রাজধানী সানা দখল করে। বিদ্রোহী মিলিশিয়া গোষ্ঠীকে পরাজিত করে। লোহিত সাগরের গুরুত্বপূর্ণ বন্দর-শহর, হোদেইদা থেকে উত্তরাংশের পার্বত্য প্রদেশ, সবই তাদের হাতে। দুর্গম ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য তাদের অজেয় করে রেখেছে।

অস্ত্রসম্ভার

ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র থেকে শুরু করে ড্রোন, হুথিদের তূণীরে রয়েছে নানা ‘বাণ’। এ সব অস্ত্র আসে ইরান থেকে। তাছাড়া, ২০১৪ সালে ইয়েমেন দখল করেও অস্ত্র হাতিয়েছে তারা। এই সব অস্ত্র রিয়াধ এবং আবু ধাবি-সহ ১৩০০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনে শক্তি পরীক্ষা করেছে হুথিরা। তাদের কাছে ২৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার মতো ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। এর সাহায্যে তারা তাদের ঘাঁটি সানায় বসেই ইজরায়েলি শহরে আঘাত হানতে পারে। এর আগে সৌদি ভূখণ্ডের অনেক ভিতরে হামলা চালিয়েছে হুথিরা। মনে করা হচ্ছে হুথিদের প্রায় এক লক্ষ শক্তিশালী সদস্য রয়েছে। এরা বেশির ভাগই স্থানীয় উপজাতির মানুষ। আর রয়েছে দলত্যাগী ইয়েমেনি সামরিক দলের সদস্য।

(Feed Source: news18.com)