সাধারণ সর্দি-কাশি ভেবে অবহেলা করছেন, নিউমোনিয়া নয় তো?

সাধারণ সর্দি-কাশি ভেবে অবহেলা করছেন, নিউমোনিয়া নয় তো?

নিউমোনিয়া (Pneumonia)। নামটা শুনলেই ভয়। সর্দি-কাশি বেশি হলেই, অনেককে বলতে শোনা যায়, বুকে বসে গিয়ে নিউমোনিয়া না হয়ে যায় ! বিশেষত বয়স্কদের। নিউমোনিয়া হওয়ার আতঙ্ক অনেক বেশি। কোভিডকালে আমরা বহু আক্রান্তকেই নিউমোনিয়ায় ঘায়েল হতে দেখেছি। কী এই অসুখ ? কেনই বা এত আতঙ্ক ? আলোচনা করলেন চিকিৎসক অর্পণ চক্রবর্তী (Critical care and ECMO Physician at Apollo Multispecialty Hospital)। 

চিকিৎসক জানালেন, নিউমোনিয়া হল ফুসফুসের ইনফেকশন। আমাদের ফুসফুসের মধ্যে থাকে আলভিওলি বা ছোট ছোট বায়ু থলি। সেখানে জীবাণুর সংক্রমণ হলে এই  ইনফেকশন হয়। এটি ব্যাকটেরিয়া বাহিত বা ভাইরাস ঘটিত, দুইরকমই হতে পারে। বয়স্ক লোকেদের মধ্যে এই রোগের প্রকোপ বেশি। আবার ৫ বছরের নিচের বাচ্চাদেরও বেশি ঘায়েল করে নিউমোনিয়া। শুধু ভারত নয়, সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই নিউমোনিয়ার প্রকোপ রয়েছে। মাঝে মাঝে হাসপাতালে অন্য কোনও অসুখ নিয়ে ভর্তি হওয়ার পরও নিউমোনিয়া সংক্রমণ হতে পারে, আবার হাসপাতালের বাইরেও নিজের বাড়িতে থেকেও কেউ সংক্রমিত হতে পারেন। এখন প্রশ্ন, নিউমোনিয়া চিন্তার কারণ কেন। কারণ, নিউমোনিয়া মৃত্যুর কারণও হতে পারে চিকিৎসায় দেরি হলে। সারা বিশ্বে যে সব রোগের কারণে বেশি সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয়, তার মধ্যে নিউমোনিয়াও একটি। আর শুধু আমাদের, দেশে নয় , বিভিন্ন দেশেই নিউমোনিয়ার থাবা বেশ চওড়া। 

নিউমোনিয়া সাধারণত সর্দি-কাশির উপসর্গ নিয়ে আসে। তাই সাধারণ মানুষের মনে একটা প্রশ্ন জাগেই। সর্দি-কাশি আর নিউমোনিয়ার মধ্যে ফারাক বুঝব কী করে। 

সর্দি-কাশি আর নিউমোনিয়ার মধ্যে ফারাক ( Symptoms )

ভাইরাল নিউমোনিয়ার ক্ষেত্রে সর্দি-কাশি, নাক দিয়ে জল পড়ার মতো উপসর্গ ( danger signs of pneumonia)দেখা যায়। কিন্তু তার সঙ্গে যদি বুকে ব্যথা, চাপ ধরা, শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, ক্লান্ত ভাব, সবুজ রঙের সর্দি বোর হওয়ার মতো উপসর্গ যুক্ত হয়, তাহলে নিউমোনিয়া সন্দেহ করতে হবে। বয়স্কদের ক্ষেত্রে নিউমোনিয়া হলে ভুল বকার প্রবণতাও দেখা যায়। এর সঙ্গে বমি বমি ভাব হতে পারে। 

বেশ কিছু নিউমোনিয়ার ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। যত তাড়াতাড়ি অ্যান্টিবায়োটিকের কোর্স শুরু করা যায়, তত তাড়াতাড়িই সুস্থতার পথে এগোনো সম্ভব। মনে রাখতে হবে, নিউমোনিয়া কিন্তু বাড়াবাড়ি হলে মৃত্যুর কারণও হতে পারে। 

ব্যাকটেরিয়াল নিউমোনিয়ার ( Bacterial pneumonia ) ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক খুব ভাল কাজ করে।  Streptococcus,Haemophilus এই ব্যাকটেরিয়াগুলি দ্বারা নিউমোনিয়া হলে , তার উপর অ্যান্টিবায়োটিক খুব ভাল কাজ করে। এছাড়া lobar pneumonia , multilobar pneumonia র ( যখন নিউমোনিয়া এক বা একাধিক লোব-কে আক্রান্ত করে)  ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি করার দরকার পড়ে। 

বয়স ৭০ এর বেশি হলে বা ৫ বছরের কম বাচ্চাদের ক্ষেত্রে বিশেষ সাবধাণতা জরুরি। কিছু কিছু নিউমোনিয়া আটকাতে ভ্যাকসিন বিশেষভাবে কাজ করে। যেমন কোভিডের সময় কোভিড নিউমোনিয়া আটকাতে ভ্যাকসিনের ব্যবহারে অনেকটা ফল পাওয়া গিয়েছিল। কোনও কোনও ক্ষেত্রে ইনফ্লুয়েঞ্জা ফ্লু ভ্যাকসিনও অনেকটা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিউমোনিয়ার ঝুঁকি বেশি হয়, তাদের ক্ষেত্রে বেশি সাবধান হতে হবে। যেমন – 

    • ৬৫ বা ৭০ বছরের বেশি বয়সীরা
    • ৫ বছরের কম বয়সী শিশুরা
    • অন্তর্নিহিত স্বাস্থ্যের অবস্থা বা দুর্বল প্রতিরোধ ব্যবস্থা যাঁদের , তাঁরা
    • কেমোথেরাপি নেন যাঁরা, তাঁদেরও নিউমোনিয়া থেকে সাবধানে থাকতে হবে।
    • যাঁদের ফুসফুসের অসুখ রয়েছে, সিওপিডি রয়েছে, তাঁদের থাকতে হবে সাবধানে।
    • কিডনির অসুখ থাকলে নিউমোনিয়া থেকে সাবধানে থাকতে হবে।
    • লিভারের অসুখ থাকলে নিউমোনিয়া থেকে সাবধানে থাকতে হবে।
    • হাঁপানির সমস্যা থাকলে নিউমোনিয়া থেকে সাবধানে থাকতে হবে।
    • ছোট্ট বাচ্চারা যাঁরা ঘিঞ্জি এলাকায় থাকে, যারা মায়ের দুধ তেমন ভাবে পায়নি, তাদেত্রে নিউমোনিয়া থেকে সাবধানে থাকতে হবে।

(Feed Source: abplive.com)