Henry Kissinger Death: হেনরি কিসিঞ্জার! সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে আমেরিকার ‘প্রাণপ্রিয়’ যুদ্ধবাজের জীবনাবসান

Henry Kissinger Death: হেনরি কিসিঞ্জার! সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে আমেরিকার ‘প্রাণপ্রিয়’ যুদ্ধবাজের জীবনাবসান

জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: স্নায়ুযুদ্ধের সময় মার্কিন বিদেশনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ও মেরুকরণকারী ভূমিকা পালনকারী প্রাক্তন মার্কিন বিদেশমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারের ১০০ বছর বয়সে মৃত্যু হয়েছে।

তিনি নিক্সন এবং ফোর্ড প্রশাসনের সময় আমেরিকার শীর্ষ কূটনীতিক এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৭০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে অফিস ত্যাগ করা সত্ত্বেও, তিনি কয়েক দশক ধরে বিভিন্ন প্রজন্মের নেতাদের পরামর্শ দেওয়ার কাজ করেন।

জার্মান বংশোদ্ভূত প্রাক্তন কূটনীতিকের কানেকটিকাটে নিজের বাড়িতে মৃত্যু হয়।

কী বলছেন সবাই?

তাঁর প্রতিষ্ঠিত পলিসি কনসালটেন্সি, কিসিঞ্জার অ্যাসোসিয়েটস-এর তরফে রাতের বিবৃতি জারি করা হয়। যদিও এতে তাঁর মৃত্যুর কারণ জানানো হয়নি।

প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘বিদেশী বিষয়ে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য এবং স্বতন্ত্র কণ্ঠস্বর হারিয়েছে’।

প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের কন্যা, ট্রিসিয়া নিক্সন কক্স এবং জুলি নিক্সন আইজেনহাওয়ার বলেছেন যে কিসিঞ্জারের জীবনকাহিনী ছিল ‘অনন্য এবং পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আমেরিকান’।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘শান্তিকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে হেনরি কিসিঞ্জারকে তার কাজের জন্য দীর্ঘকাল স্মরণ করা হবে’। সেখানে আরও বলা হয়েছে, ‘কিন্তু এটি তার চরিত্র যা আমরা কখনই ভুলব না’।

কিসিঞ্জারের ইতিহাস

১৯২৩ সালে জার্মানিতে জন্মগ্রহণ করেন। স্কুল শিক্ষকের ছেলে ১৯৩৮ সালে প্রথম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আসেন যখন তার পরিবার নাৎসিদের হাত থেকে পালিয়ে আসে। তিনি কখনই তার বাভারিয়ান উচ্চারণ ভুলে যাননি।

তিনি ১৯৪৩ সালে মার্কিন নাগরিক হন। শুরুতে মার্কিন সেনাবাহিনীতে এবং পরে কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স কর্পসে তিন বছর চাকরি করেন।

স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রী এবং পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের পর, তিনি হার্ভার্ডে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পড়াতেন।

১৯৬৯ সালে, তৎকালীন রাষ্ট্রপতি নিক্সন তাকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত করেছিলেন। এটি এমন একটি পদ যা তাকে মার্কিন বিদেশনীতির উপর বিশাল প্রভাব ফেলতে সাহায্য করেছিল।

১৯৬৯-৭৭ সালের মধ্যে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং বিদেশ সচিব দুই পদ মিলিতে তাঁর আট বছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শেষ পর্যন্ত ভিয়েতনাম যুদ্ধ শেষ করে, চিনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্মুক্ত করে এবং মধ্যপ্রাচ্যে ১৯৭৩ সালের ইয়োম কিপ্পুর যুদ্ধ বন্ধ করে।

অন্য দিকে

ইয়েল ইউনিভার্সিটির ইতিহাসবিদ গ্রেগ গ্র্যান্ডিন, হেনরির জীবনী কিসিঞ্জারস শ্যাডো-র লেখক। তিনি অনুমান করেছেন যে ১৯৬৯ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত কিসিঞ্জারের ক্রিয়াকলাপ, তিন থেকে চার মিলিয়ন মানুষের জীবন শেষ করে। এর মধ্যে রয়েছে ‘অপরাধ কমিশন’। তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন যেমন কম্বোডিয়া এবং চিলিতে হয়েছে। এছাড়া পূর্ব তিমোর এবং ইন্দোনেশিয়ার রক্তপাতকে সবুজ সংকেত দেওয়া। বাংলাদেশে এবং পাকিস্তানের রক্তপাত; এবং কুর্দিদের ব্যবহার এবং তারপর পরিত্যাগ করার একটি আমেরিকান পদ্ধতি শুরু করা।

গ্র্যান্ডিন তাঁর মৃত্যুর আগে বলেন, ‘কিউবানরা বলে যে এমন কোন খারাপ নেই যা একশ বছর স্থায়ী হয়, এবং কিসিঞ্জার তাদের ভুল প্রমাণ করার জন্য দৌড়াচ্ছেন’। তিনি আরও বলেন, ‘কোনও সন্দেহ নেই যে তিনি একজন ভূ-রাজনৈতিক গ্র্যান্ড স্ট্র্যাটেজিস্ট হিসাবে সমাদৃত হবেন, যদিও তিনি বেশিরভাগ সংকটের মুখোমুখি হয়ে সেইগুলিকে বৃদ্ধির দিকে পরিচালিত করেছিলন। তিনি চিনের সঙ্গে সম্পর্ক খোলার জন্য কৃতিত্ব পাবেন, তবে এটি ছিল দে গলের ধারণা এবং উদ্যোগ। তিনি দেতা-র জন্য প্রশংসিত হবেন, এবং এটি সফল ছিল। কিন্তু তিনি নিওকনদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নিজের উত্তরাধিকারকে ক্ষুন্ন করেছিলেন। এবং অবশ্যই, তিনি ওয়াটারগেট থেকে মুক্ত হয়ে যাবেন, যদিও ড্যানিয়েল এলসবার্গের প্রতি তার মোহ অপরাধটি সংগঠনে সাহায্য করেছিল’।

অবশেষে

১৯৬৮ সালের শরৎ এবং সাইগনের পতনের মধ্যবর্তী সময়ে ভিয়েতনামে মৃত্যু হওয়া প্রতিটি ব্যক্তি এবং যারা লাওস এবং কম্বোডিয়াতে মারা গিয়েছে, কিসিঞ্জারের কারণেই তাঁদের মৃত্যু হয়। কম্বোডিয়ান গণহত্যা থেকে শুরু করে অন্যান্য সকল অস্থিরতা সব জায়গাতেই হেনরি এবং নিক্সনকে দায়ী মনে করা হয় কারণ নিক্সন এবং কিসিঞ্জার ক্ষমতা গ্রহণের কয়েক মাসের মধ্যে গোপনে সব যুদ্ধের প্রসার ঘটিয়েছিলেন।

কিসিঞ্জারের কাজের সম্পর্কে তাঁর নিজের মতামত এবং তাঁর কাজকে জাস্টিফাই করার জন্য তাঁর জুতয় পা গলান মানুষ যা বলেছেন তা হয়তো আমরা আমরা শুনে থাক্তেই পারি কিন্তু আসলে কি ঘটেছে তাও আমরা জানি।

আসলে যা ঘটেছিল তা হল কিসিঞ্জার ১৯৬৮ সালে যুদ্ধের সমাপ্তির একমাত্র সুযোগটিকে নষ্ট করেছিলেন যাতে তিনি নিক্সনের প্রশাসন বা হামফ্রের প্রশাসনে নিজের ক্ষমতা নিশ্চিত করতে পারেন। সত্যিকারের হিসাব সম্ভবত কখনোই জানা যাবে না যে কিসিঞ্জার যাতে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হতে পারেন তার জন্য কত প্রাণ গিয়েছে।

(Feed Source: zeenews.com)