৩ পয়েন্ট ছাড়া কোনও লক্ষ্য নেই-AFC Cup-এর জোড়া হার ভুলে ফেরান্দোর ফোকাস এখন ISL

৩ পয়েন্ট ছাড়া কোনও লক্ষ্য নেই-AFC Cup-এর জোড়া হার ভুলে ফেরান্দোর ফোকাস এখন ISL

আইএসএলে এখনও একটি ম্যাচেও হারেনি মোহনবাগান। চারটি ম্যাচ খেলে চারটিতেই জিতেছে। তবে তারা এএফসি কাপে পরপর দুই ম্যাচ হেরে গ্রুপ পর্ব থেকেই ছিটকে গিয়েছে। এএফসি কাপের ম্যাচের আগে ১৫টির মধ্যে ১৩টিতে জিতে চলতি মরশুমে শক্তিশালী সূচনা করেছিল। কিন্তু এএফসি কাপে পরপর দুই ম্যাচে হারের ধাক্কাটা বড় বেশি জোরে লেগেছে সবুজ-মেরুন শিবিরে। এবার আইএসএলে সেই ধাক্কাটাই তারা কাটিয়ে উঠতে চায়। ভুলে যেতে চায় ওড়িশা এফসি-র কাছে ঘরের মাঠে পাঁচ গোল খাওয়ার যন্ত্রণাটা।

এর মাঝেই আবার কলকাতা লিগের ডার্বিতে আইএফএ-কে দায়ী করে বৃহস্পতিবার দল নামায়নি বাগান ব্রিগেড। এই নিয়ে চলছে তীব্র বিতর্ক। তবে এই সব কিছু পিছনে ফেলে, শনিবার আইএসএলের ম্যাচে হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে ফের ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া জুয়ান ফেরান্দো ব্রিগেড। এক মাস পরে ফের ইন্ডিয়ান সুপার লিগের ম্যাচ খেলতে নামছে গতবারের কাপ চ্যাম্পিয়নরা। এখনও পর্যন্ত তারাই এই লিগের একমাত্র দল, যাদের সাফল্যের শতকরা হার একশো শতাংশ।

গত মাসে আইএসএলে মাত্র একটি ম্যাচ খেলেছে মোহনবাগান। ডিসেম্বরে তাদের ছ’টি ম্যাচ রয়েছে। অর্থাৎ ঠাঁসা সূচি। তবে মোহনবাগানের কাছে চিন্তার কারণ হল, হঠাৎ চোট-আঘাতে জর্জরিত হয়ে পড়ায় এবং কয়েক জন নির্ভরযোগ্য ফুটবলারের পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা না থাকায় তাদের নিয়ে প্রত্যাশা ক্রমশ নামতে শুরু করেছে। এই অবস্থায় সবুজ-মেরুন শিবির আইএসএলে সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারবে কি?

জবাবে বাগান কোচ ফেরান্দো বলেন, ‘আমরা পেশাদার। আমরা সামনের দিকে তাকাতে চাই। যা হয়েছে, তা নিয়ে আর বেশি কথা বলে লাভ নেই। এএফসি কাপে ব্যর্থতা খুবই হতাশাজনক। এতে আমাদের সবারই মন খারাপ হয়েছে। এখন আমাদের সামনে হায়দরাবাদ এফসি-কে হারিয়ে তিন পয়েন্ট জেতা ছাড়া আর কোনও লক্ষ্য নেই।’

মরশুমের শুরুতেই আশিক কুরুনিয়ান ভারতীয় দলের হয়ে খেলতে গিয়ে চোট পান। কার্যত গোটা মরশুমের জন্যই ছিটকে গিয়েছেন তিনি। আশিকের পর চোট পান আনোয়ার আলিও। তিনিও কবে মাঠে ফিরবেন, এখনও কেউ নিশ্চিত নন। যিনি ক্রমশ ফর্মে ফিরছিলেন, সেই মনবীর সিংও চোট পেয়ে ছিটকে গিয়েছেন। অস্ট্রেলীয় স্ট্রাইকার দিমিত্রি পেত্রাতোসও চোটের তালিকায় নাম লেখান। সব মিলিয়ে প্রথম দলের প্রায় চার জন ফুটবলারকে পাচ্ছে না সবুজ-মেরুন শিবির।

এই নিয়ে ফেরান্দো বলেন, ‘যে খেলোয়াড়রা সুস্থ রয়েছে, তাদের নিয়েই পরিকল্পনা করছি। চোট-আঘাত ফুটবলে হয়েই থাকে। কোনও এক জন-দু’জনের নাম নিয়ে ভাবছি না। আমরা একটা দল হিসাবে কাজ করি। কখনও সফল আসবে, কখনও ব্যর্থতা। তবে গত দু’টি ম্যাচে আমাদের পারফরম্যান্সে আমি হতাশ। দিমিত্রির জন্য আরও দু’দিন অপেক্ষা করব। আমার হাতে তো জাদু নেই। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করব। মেডিক্যাল স্টাফ কাজ করে চলেছে। কারা খেলার অবস্থায় আছে বা কারা নেই, এর ব্যাখ্যা দেওয়া কঠিন। এটা জানার জন্য খেলা শুরু হওয়ার ২-৩ ঘণ্টা আগে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় আমাদের। এ ক্ষেত্রেও করব।’

এএফসি কাপে শেষ দুই ম্যাচে হারের হতাশার মধ্যেও অবশ্য ইতিবাচক দিক খুঁজে পেয়েছেন তাদের স্প্যানিশ কোচ। দলের খেলোয়াড়দের লড়াই করার মানসিকতা। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘গত ম্যাচে ছেলেদের লড়াকু মনোভাব দেখে আমার ভালো লেগেছে। আমরা হারছি, টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যাব জেনেও শেষ দিকে ওরা যে ভাবে প্রতিপক্ষকে চাপে রেখেছিল, তা খুবই ইতিবাচক ও লড়াকু মানসিকতার পরিচয় দেয়। ওই সময় ওই লড়াইটা করা খুব কঠিন ছিল।’

লিগ তালিকার এগারো নম্বরে থাকা হায়দরাবাদ এখনও পর্যন্ত কোনও ম্যাচে জয় পায়নি। তিনটি ড্র এবং চারটি হারের হাত ধরে মাত্র তিন পয়েন্ট সংগ্রহ করতে পেরেছে। তবু হায়দরাবাদকে সমীহ করছেন ফেরান্দো। ফেরান্দো বলেন, ‘কেরালার বিরুদ্ধে হায়দরাবাদ খুবই ভালো খেলেছে। ওরা একটা ছোট্ট ভুলের জন্য একটা গোল খায়। চেন্নাইয়িনের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে ওরা ম্যাচ জেতার প্রচুর সুযোগ পেয়েছিল। গত দু’টি ম্যাচে ওরা হয়তো খুব সহজ কোনও সুযোগ পায়নি। তবে ওদের ভালো দল এবং ভালো খেলছেও। ওরা একই পরিকল্পনা নিয়ে খেলে যাচ্ছে। একই কৌশল বজায় রাখছে। ফলে এই ম্যাচটা বোধহয় আমাদের পক্ষে কঠিন হবে। এই লিগে অ্যাওয়ে ম্যাচ সব সময়ই কঠিন। জামশেদপুরে খেলার সময়ও আমরা অনেক সমস্যায় পড়েছিলাম। হায়দরাবাদের বিরুদ্ধেও তা হতে পারে। খেলার নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখাই আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তা হলেই তিন পয়েন্ট আসতে পারে।’

দলে গোল করার লোকের অভাব দেখা দিচ্ছে। গত দুই ম্যাচে সবুজ-মেরুন বাহিনী যেখানে সাত গোল খেয়েছে, সেখানে দিয়েছে মাত্র তিন গোল। জেসন কামিন্স, আর্মান্দো সাদিকুরা দলকে সেই ভাবে সাহায্য করতে পারছেন না, যে ভাবে তাদের কাছে প্রত্যাশা ছিল সবুজ-মেরুন সমর্থকদের। মনবীর ফর্মে ফিরতে শুরু করলেও, লিস্টন কোলাসোর পারফরম্যান্সে ধারাবাহিকতা নেই। সাহাল সম্পর্কেও একই কথা বলা যায়। তিনি কোনও কোনও ম্যাচে জ্বলে উঠলেও, বেশির ভাগ ম্যাচেই নিষ্প্রভ থাকছেন।

তবে ফেরান্দোর দাবি, ‘কোনও ক্ষেত্রেই কোনও একজনের উপর দায়িত্ব থাকে না। আমরা আক্রমণে জায়গা তৈরি করছি। প্রত্যেকেই জায়গা তৈরি করতে পারছি। দলের স্ট্রাইকারের প্রথম কাজই হল জায়গা তৈরি করে, তাকে কাজে লাগিয়ে আক্রমণ করা। এই কাজটাই সবচেয়ে জরুরি। কে গোল করল, সেটা কিন্তু বড় কথা নয়।’

শনিবার হায়দরাবাদের হোম ম্যাচ হলেও তা হবে ভুবনেশ্বরের কলিঙ্গ স্টেডিয়ামে। ফলে কোনও দলই পুরোপুরি ঘরের মাঠের সুবিধা পাবে না। তবে এর ফলে তারা কোনও বাড়তি সুবিধা পাবে বলে মনে করেন না ফেরান্দো। তিনি বলেছেন, ‘নিরপেক্ষ ভেন্যুর জন্য কোনও সুবিধা হবে না। এএফসি কাপেও একটা ম্যাচ আমরা ওখানে খেলেছিলাম। তাতে সুবিধা কিছু হয়নি। সুবিধা একমাত্র ঘরের মাঠে খেললেই হয়, যেখানে নিজেদের সমর্থকেরা সবাই উপস্থিত থাকে। আমাদের দু’পক্ষের কাছেই ম্যাচটা কঠিন হবে। দুই দলেরই তিন পয়েন্ট দরকার।’

(Feed Source: hindustantimes.com)