কারাগারের অন্ধকারে আলো ফিরল জীবনে ! রবি ঠাকুরের নাটকের চরিত্রে নৃশংসভাবে খুনে জেলবন্দি মনুয়া

কারাগারের অন্ধকারে আলো ফিরল জীবনে ! রবি ঠাকুরের নাটকের চরিত্রে নৃশংসভাবে খুনে জেলবন্দি মনুয়া
কমলকৃষ্ণ দে, পূর্ব বর্ধমান : প্রেমিকের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে ঠাণ্ডা মাথায় স্বামীকে খুন ! ২০১৭ সালে বারাসাতের হৃদয়পুরের হত্যাকাণ্ড আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল রাজ্যজুড়ে। কয়েকদিনের মধ্যেই কুখ্যাত হয়ে গিয়েছিল মনুয়া মজুমদারের (Manua Mazumdar) নাম। স্বামীর খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত ও সাজাপ্রাপ্ত সেই মনুয়াই এবার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘শ্যামা’র ভূমিকায় ! তাঁর নাচ দেখে তাজ্জব হয়ে গেলেন বর্ধমানের উৎসব ময়দানে হাজির হওয়া মানুষরা।

এই মুহূর্তে বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে বন্দি মনুয়া। কখনও ‘আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে’ আবার কখনও ‘আলোকের ঝর্ণা ধারায়’ থেকে কথনও ‘মধুরী মুরুতি’,’মেড ইন ইণ্ডিয়া’, সাবলীল মেজাজে নাচের ছন্দে মোহিত করলেন মানুষদের। কাউকে বলে না দিলে বোঝার উপায় নেই, হাড়হিম করা হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড ছিলেন এই মনুয়াই !

তাহলে কি কারাগারের অন্ধকারে আলো ফিরল মনুয়া মজুমদারের জীবনে ? কবিগুরুর গানে গলা মিলিয়ে নৃত্যের মাধ্যমে মনুয়া কি বলতে চাইলেন,’ক্ষমা করো নাথ, ক্ষমা করো। এ পাপের যে অভিসম্পাত হোক বিধাতার হাতে নিদারুণতার’! শুক্রবার রবীন্দ্র নৃত্যনাট্যে মনুয়া মজুমদার শ্যামা চরিত্রে অভিনয় করছেন। তবে শুধু রিহার্সালের পর নাচই নয়, মনুয়া লেখালিখির কাজও করছেন আবাসিক থাকা অবস্থায়।

সংশোধনাগারে থাকা আবাসিকদের জীবনের মূল স্ত্রোতে ফেরানোর কাজে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয় রাজ্য কারা দফতর। বর্ধমানের যে সংশোধনাগারে মনুয়া রয়েছেন, সেখানে কাজ করছেন র্ধমানের প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী মেহবুব হাসান। তিনি জানান, মনুয়া এখন নিয়মিত গান ও লেখা নিয়েই ব্যস্ত। রবীন্দ্র রচনাবলি ও রবীন্দ্রনৃত্য নিয়ে তার আলাদা টান রয়েছে। সংশোধনাগারের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সে যেমন নিয়মিত অংশগ্রহন করে ঠিক তেমনি অন্যদের উৎসাহ জোগায়। সম্প্রতি সে নিজে একটি ম্যাগাজিন সম্পাদনা করছে।

২০১৭ সালে পরিকল্পনা করে প্রেমিককে দিয়ে স্বামীকে খুনের অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। ফোনের ওপারে থেকে খুন পর্বের প্রতিটি মুহূর্ত নিজের কানে শুনেছিলেন এই তরুণী। কীভাবে স্বামীকে মারতে হবে সেই টিপসও নাকি তিনিই দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছিল ! যে হত্যাকাণ্ডের খবরে শিউরে উঠেছিল রাজ্যবাসী। মাঝে তারপর পার হয়ে গেছে বহু সময়। কুখ্যাত হয়ে যাওয়া সেই মনুয়াই এখন জেল বন্দিদের কাছে এখন “আইডল”। কে কোন সংগীতের নৃত্যে কী স্টেপ করবে, কবিতার কোথায় ভুলত্রুটি, প্রবন্ধে কোনো চরিত্রটাকে কিভাবে ফুটিয়ে তুলতে হবে তিনি তা নিজে হাতে ধরে শেখাচ্ছে মনুয়া !

বর্ধমান রেঞ্জের ডিআইজি কারা শুভব্রত চট্টোপাধ্যায় জানান, সংশোধানাগারে রাখার উদ্দেশ্য হল, বন্দিদের সমাজের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনা। অপরাধমূলক ভাবনা ছেড়ে তাঁরা যাতে সমাজের আর পাঁচটা মানুষ হয়ে ওঠেন, তার জন্য বিভিন্ন উৎসাহ দেওয়া হয়।মনুয়ার ক্ষেত্রে সেই উদ্দেশ্যে অনেকাংশেই সফল হয়েছে। পুরনো সেই ঘটনা এখন মনেই রাখতে চায় না মনুয়া।নতুন করে পথ চলতে চান।

আইনি বাধায় কথা বলতে চাননি মনুয়া। কিন্তু তাঁর শরীরীভাষা যেন বুঝিয়ে দিয়ে যায়, কুখ্যাত অতীত পিছনে ফেলে এসেছেন তিনি। আপাতত নতুন করে লড়াই চালাচ্ছেন জীবনযুদ্ধে।

(Feed Source: abplive.com)