চিনে সংক্রমণ-বিপদ! বিমান চলাচলে কি লাগাম টানবে ভারত?

চিনে সংক্রমণ-বিপদ! বিমান চলাচলে কি লাগাম টানবে ভারত?
কলকাতা: অসুস্থতা, সংক্রমণ এবং শ্বাসকষ্ট। এই তিনটি শব্দ ২০২০ সাল থেকে তামাম বিশ্বকে আতঙ্কে রেখেছিল। কোভিডে ধাক্কায় সমাজ থেকে অর্থনীতি- নিমেষে গুঁড়িয়ে গিয়েছিল সবকিছুই। তারপর ধীরে ধীরে সব আগের অবস্থায় ফিরছে। মাঝে কেটে গিয়েছে বেশ কয়েকটি বছর। তারপরে আবার সেই আশঙ্কা? কারণ সামনে এসেছে ওই তিনটি শব্দ- অসুস্থতা, সংক্রমণ এবং শ্বাসকষ্ট। আর এই দুইবারই একটি বিষয় এক বা Common, তা হল চিন (China)।

চিনের উহান প্রদেশ থেকে কোভিড (Covid) সংক্রমণ সারা বিশ্বে ছড়িয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়। যদিও সেই অভিযোগ বারবার উড়িয়ে দিয়েছে চিন। এবারও শ্বাসকষ্টের (respiratory problem) সমস্যা- এবারও চিন। এবার শিশুদের মধ্যে ছড়াচ্ছে এই নিউমোনিয়ার মতো সংক্রমণ। হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যাও বাড়ছে, সেই কারণেই উদ্বেগের জায়গা রয়েছে। যদিও, এখনও যা পরিস্থিতি তাতে কোভিডের মতো উদ্বেগের জায়গা এখনও নেই বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিষয়টি নিয়ে গোড়া থেকেই পদক্ষেপ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। চিনের সংক্রমণের পরিস্থিতি ঠিক কী তা নিয়ে খোঁজখবর নেওয়া শুরু হয়েছে, চিনের কাছ থেকে যাবতীয় তথ্যও চেয়ে পাঠানো হয়েছে। সেই তথ্য মিলেছে বলে জানিয়েছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য় সংস্থা (world heatlh organization)। চিন WHO-কে জানিয়েছিল চেনা বিভিন্ন ভাইরাসের কারণেই সংক্রমণ বেড়েছে।

কেন্দ্রের নির্দেশিকা:
চিনে যখন ঠিক এই পরিস্থিতি, তখন সম্প্রতি চিনের (china pneumonia outbreak) নিউমোনিয়া সংক্রমণ নিয়ে Advisory বা নির্দেশিকা জারি করেছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। দেশের প্রতিটি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রশাসনের কাছে পৌঁছে গিয়েছে সেই নির্দেশিকা (Advisory)। কোভিডের সময় যা যা নজরে রাখতে বলা হয়েছিল, ঠিক সেরকমই নির্দেশ রয়েছে এবারও। কোভিডের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবার যে কোনওরকম ফাঁক বরদাস্ত করা হবে না তা স্পষ্ট। কিন্তু এইখানেই উঠছে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।

মার্কিন মুলুকেও প্রশ্ন:
কোভিডের মতোই শ্বাসকষ্ট সংক্রান্ত সমস্যা, উৎপত্তি বা উৎস বিদেশ, কোভিডের মতো এটাও সংক্রামক। তাহলে বিপদ রুখতে আগেভাগে বিমান যোগাযোগ কি বন্ধ করা হবে? আশঙ্কা যে অমূলক নয়, তা আমেরিকার একটি ঘটনায় স্পষ্ট। চিনের নিউমোনিয়া সংক্রমণের খবর ছড়িয়ে পড়তেই, মার্কিন প্রশাসনের একটি অংশ উদ্বিগ্ন। কোভিডের কথা মনে করিয়ে আমেরিকার বেশ কয়েকজন রিপাবলিকান সেনেটর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের (Joe Biden) কাছে সম্প্রতি একটি আবেদন করেছিলেন। কী ছিল সেই আবেদনে? ওই সেনেটরদের দাবি ছিল, চিনের নিউমোনিয়া সংক্রমণের কথা মাথায় রেখে, এখনই আমেরিকা ও চিনের মধ্যে বিমান যোগাযোগ বন্ধ করা উচিত। এই সেনেটরদের নেতৃত্বে ছিলেন মার্কো রুবিও নামে রিপাবলিকান এক সেনেটর, যিনি মার্কিন সেনেটের ইনটেলিজেন্স কমিটির সদস্য।

বিমান নিয়ন্ত্রণ করা কি উচিত?
চিনের এই সংক্রমণ যে কোভিড নয় তাও বলা হয়েছে। তাহলে কি নতুন কোনও সংক্রমণ? এটা এখনও স্পষ্ট নয়। WHO-অনুয়ায়ী চিন জানিয়েছে কোভিড বিধি তুলে নেওয়া এবং এই সময়ে ইনফ্লুয়েঞ্জা (Influenza) ও অন্য কিছু চেনা প্যাথোজেনের কারণে হঠাৎ এই নিউমোনিয়া সংক্রমণ বেড়েছে। পরিস্থিতি যাই হোক, এটা যে ছোঁয়াচে তা স্পষ্ট। এই পরিস্থিতিতে, যদি এই সংক্রমণ নতুন কোনও রোগের ভাইরাস হয়ে থাকে তাহলে তা বিপজ্জনক হতে পারে এমন আশঙ্কাও অমূলক নয়। সেই ক্ষেত্রে কোভিডের কথা মাথায় রেখে আপাতত যতদিন না পর্যন্ত বিষয়টি স্পষ্ট হচ্ছে– ততদিন আন্তর্জাতিক বিমান (International Flight) চলাচলে (India China Flight Ban) নিয়ন্ত্রণ কি করা উচিত নয়? বা চিন থেকে, চিন হয়ে আসা ব্যক্তিদের কোনও রকম স্ক্রিনিং কি প্রয়োজন নয়? এমন প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যাচ্ছে।

নয়াদিল্লি, মুম্বই, বেঙ্গালুরু-সহ ভারতের প্রথম সারির শহরগুলি থেকে চিনের সাংহাই, বেজিংয়ের মতো বিভিন্ন শহরের মধ্য়ে নিত্য বিমান যোগাযোগ রয়েছে। এই দুই দেশের মধ্য়ে আন্তর্জাতিক-রাজনৈতিক সম্পর্ক যতই নরম-গরম হোক না কেন, ব্যবসায়িক সম্পর্ক বেশ ভাল। ২০২২ সালের ভারত ও চিনের মধ্যে ব্যবসা রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছিল। এই বছরের প্রথম ভাবে তার চেয়ে সামান্য কমলেও অঙ্কটা যথেষ্ট বড়। PTI-সূত্রের একটি খবরে প্রকাশিত হয়েছে যে ২০২২ সালে ভারত ও চিনের (India China Business Deal) মধ্যে ১৩৫.৯৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অঙ্কের ব্যবসায়িক লেনদেন (India China Trade) হয়েছে। যা ২০২১ সালের তুলনায় ৮.৪ শতাংশ বেশি। এই তথ্য় এখানে আলোচনা করার কারণ একটাই, দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগের বিষয়টা বোঝানো। ব্যবসা ছাড়াও পড়াশোনার কারণেও এই ২ দেশের মধ্যে যোগাযোগ রয়েছে। এই বছরেই রাজ্যসভায় বিদেশ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছিলেন অন্তত ১০০০০ জন ভারতীয় পড়ুয়া এখন চিনে পড়াশোনা করছেন। বহু ভারতীয় ছাত্র চিনে ডাক্তারি পড়তে যান। এই কারণেই আশঙ্কা রয়ে যাচ্ছে, যদি কেউ ওখানে সংক্রমিত হন, তারপর এদেশে আসেন তাহলে এখানেও সংক্রমণ এসে পৌঁছতে পারে। কোভিডের ধাক্কার পরে আর এমন কোনও ঘটনার চাপ কি নিতে পারবে ভারতীয় অর্থনীতি?

এর আগে কোভিডের সময় ২০২০ সালের মার্চের শেষদিক থেকে আন্তর্জাতিক বিমান চলাচলে পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা চালু করেছিল ভারত সরকার।  এরপর একের পর এক কোভিড ঢেউ এসেছে। প্রথম ও দ্বিতীয় বারের মতো সমস্যা পরের ক্ষেত্রে তেমন একটা হয়নি। ২০২২ সালে কোভিড যখন ফের মাথাচাড়া দেয়, তখন কথা উঠেছিল আবার আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল বন্ধ করা হবে কিনা। যদিও সেই সময় AIIMS এর প্রাক্তন ডিরেক্টর রণদীপ গুলেরিয়া-সহ একাধিক বিশেষজ্ঞ বলেছিলেন ভারতীয়দের কোভিড প্রতিরোধের যা চালচিত্র তাতে এখনই বিমান যোগাযোগ বন্ধের প্রয়োজন নেই। তবে মাথায় রাখতে হবে, ওই সময়টা এমন- যার আগে বহুলোকের এক বা একাধিকবার কোভিড হয়ে গিয়েছে, পাশাপাশি প্রতিষেধকও নেওয়া হয়েছে।

একদিকে অর্থনীতিতে চাপ অন্যদিকে আশঙ্কা! কোন দিকের পাল্লা ভারী?
এটা ঠিকই যে আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল বন্ধ করলে তা অর্থনীতির উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। বাণিজ্য ও অগ্রগতি ধাক্কা খায়। ফলে হঠাৎ করে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়াও যায় না। বিশেষ করে এমন সময় যখন সব সেক্টর কোভিডের ধাক্কা থেকে পুরোপুরি বেরিয়ে আসতেও পারেনি। যদিও আশঙ্কা থেকেই যায়, বিশেষ করে যখন এটা সংক্রামক এবং উৎস চিন। বাংলায় প্রাচীন প্রবাদ, ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ডরায়। সেই প্রবাদ মেনেই কোনও সাধারণ নাগরিক যদি এই সংক্রমণ নিয়ে উদ্বেগে থাকেন তা অমূলক নয়।

(Feed Source: abplive.com)