KIFF 2023: কলকাতা দাপাচ্ছে গুজরাতের 'হনুমান', হাজির চলচ্চিত্র উৎসবেও, নন্দনে এ কী কাণ্ড!

KIFF 2023: কলকাতা দাপাচ্ছে গুজরাতের 'হনুমান', হাজির চলচ্চিত্র উৎসবেও, নন্দনে এ কী কাণ্ড!

সৌমিতা মুখার্জি ও অনুসূয়া বন্দ্যোপাধ্যায়: শহর জুড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে এক ‘হনুমান’। ঘুরতে ঘুরতে সে সটান চলে এল ২৯ তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে (29th Kolkata International Film Festival, KIFF 2023)। উঠে বসল নন্দনের এক গাছে! এই মুখপোড়া হনুমানের শরীরের রং ফ্যাকাশে-কমলা। নীচের দিকে কিছুটা হালকা। তবে প্রাইমেট বর্গের অন্তর্গত লম্বা লেজযুক্ত বানর নয় সে। সে আদতে এক মানুষ। নাম ‘মাঙ্কি ম্যান’! হনুমান-মানুষ, মানুষ-হনুমান গুলিয়ে যাচ্ছে তো, তাহলে খোলসা করে বলা যাক!

‘মাঙ্কি ম্যান’-এর আসল নাম হিতেশ ওয়াদওয়ানি। তাঁর ছোটবেলাটা খুবই কষ্টে কেটেছে। ছোটবেলাতেই বাবাকে হারান হিতেশ। অন্যসংস্থানের জন্য সবজি বিক্রি করতেন তিনি। সৌরাষ্ট্রের ভাবনগরের বাসিন্দা হিতেশ। বাড়ি থেকে অনেক দূরে জুনাগরে সবজি বিক্রি করতে যান এবং সেখানে এক সাধুবাবার সঙ্গে তাঁর দেখা হয়। সেই সাধুর আশেপাশে প্রচুর হনুমান থাকত, সেই হনুমানদের চলাফেরা লক্ষ্য করত হিতেশ। তখন তাঁর মনে হয় যে, মানুষ হয়েও হনুমানের মতো জীবনযাপন করলে কেমন হয়! যেমন ভাবা, তেমন কাজ। হিতেশ বলেন, ‘দেখুন আমি যখন এই কাজ শুরু করি, তখন প্রথমে আমার বাবা-মা কেউ মেনে নেননি। কিন্তু পরে আমার জনপ্রিয়তা দেখে, তাঁরা আমাকে মেনে নেন। আমি ভীষণ খুশি এখন আমার পরিবারেরও সবাই খুশি’।

এখন প্রশ্ন ‘মাঙ্কি ম্যান’কি আচমকা চলচ্চিত্র উৎসবে কেন এলেন? নেহাতই পাবলিসিটি স্টান্ট, নাকি নেপথ্য়ে কোনও কারণ আছে। হনুমান-হিতেশে কলকাতায় এসেছেন পরিচালক হায়দার খানের হাত ধরেই। হিতেশকে নিয়ে তিনি ছবি করছেন। নাম দিয়েছেন, ‘লঙ্গুর দ্য় ম্য়ান মাঙ্কি’। বৃহস্পতিবার অর্থাৎ আজ সকাল এগারোটায় শিশির মঞ্চে ৪ ঘণ্টা ৩৪ মিনিটের এই ডকুমেন্ট্রি দেখানো হয়েছে। এবার চলচ্চিত্র উৎসবে এই ছবি ‘কম্পিটিশন অন ইন্ডিয়ান ডকুমেন্ট্রি ফিল্মস’-এ নির্বাচিত হয়েছিল।

হিতেশকে নিয়ে হায়দার লম্বা গল্প শোনালেন। পর্দায় হিতেশের নাম যদিও জ্যাকি, তবে পদবি ওয়াদওয়ানিই রাখা হয়েছে। হায়দার বলছেন, ‘আমি একদিন কাজ থেকে বাড়ি ফিরছি, তখন দেখি যে রাস্তার প্রচুর কুকুর একটা মানুষকে তাড়া করেছে। আর মানুষটা হনুমানের সাজে। আমি ভাবলাম কী ব্যাপার? আমি প্রথমে ভেবেছিলাম যে কোনও জুনিয়র আর্টিস্ট বা রামলীলার লোক হবে। কিন্তু তারপর ভাবলাম, আরে আন্ধেরিতে তো রামলীলাই হয় না, তাহলে হনুমানের সাজে মানুষ কেন? এরপর আমি সব কুকুরদের সরাই। হিতেশ আমাকে দেখে ভয় পেয়ে গিয়েছিল। পরে ও জানায় যে, আমাকে দেখে ও ভেবেছিল আমি নাকি ওকে কিডন্যাপ করতে এসেছি! তারপর আমি হিতেশকে সঙ্গে করে নিয়ে যাই আমার বাড়িতে। তারপর জানতে পারি যে, কেউ ওকে ফোন করে বোকা বানিয়েছে। ওকে বলা হয়েছিল যে আন্ধেরিতে একটা ইভেন্ট আছে। তাই ও মুম্বইতে আসে। যদিও সেখানে কোনও ইভেন্ট ছিল না। তারপর ও বসেছিল এক জায়গায়, তখন পুলিশ ওকে তাড়া করে। তারপরও ছ-সাত ঘণ্টা রাস্তায় ঘুরছিল এবং ওর প্রচণ্ড খিদে পেয়ে গিয়েছিল। তারপর আমি ওর জীবনের গল্প শুনি, তারপর ছবি করার পরিকল্পনা করি। এরপর আমি ভাবনগরে যাই ওর সঙ্গে অনেকদিন থাকি। ও এখনও ২০০ রুটি বানিয়ে নিয়ে যায় এবং ওই হনুমানদের খাওয়ায়। আমিও একদিন গিয়েছিলাম। ওখানে শ্যুট করতে গিয়ে ভয় পেয়ে যাই। কারণ চার-পাঁচটা হনুমান চলে এসেছিল। কেউ এসে ঘাড়ে বসছে, তো কেউ মাথায় বসছে। প্রচুর হনুমান ওখানে। আমি তো এগুলোর সঙ্গে পরিচিত নই। তাই আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। এরপর মুম্বই ফিরে আসি এবং এখানে এসে চিত্রনাট্য তৈরি করি এবং তারপর গিয়ে আবার আমরা শ্য়ুট করি আমার খুব ইন্টারেস্টিং লেগেছে ওর জীবনের গল্প। ওর জীবনের একটাই ইচ্ছা ছিল যে, ওর বাবা-মা ওকে একবার জড়িয়ে ধরুক এবং স্বীকার করুক যে, ও তাঁদেরই ছেলে। ছবির পর সেটাই হয়েছে।’ হিতেশের গল্প বলে হায়দার হিতেশকেই জিতিয়ে দিলেন এদিন।

(Feed Source: zeenews.com)