পঞ্চায়েত ‘পাখির চোখ’? সিঙ্গুর থেকে শিল্প বার্তা মমতার! যা বললেন মুখ্যমন্ত্রী…

পঞ্চায়েত ‘পাখির চোখ’? সিঙ্গুর থেকে শিল্প বার্তা মমতার! যা বললেন মুখ্যমন্ত্রী…

#সিঙ্গুর: সিঙ্গুরের মাটিতে দাঁড়িয়ে আবার শিল্পের বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee)। সিঙ্গুরের বাজেমেলিয়ায় মন্দির উদ্বোধনের এক অনুষ্ঠানে মমতা বলেন, “সিঙ্গুরের মানুষ জমি ফিরে পেয়েছে। আন্দোলনের প্রতি অদম্য মানসিকতার জন্য সুপ্রিম কোর্টে জিতেছেন। আবার, এখানে শিল্প হবে। কৃষি ভিত্তিক শিল্প (অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রির) পাশাপাশি হিন্দ মোটরে কাজ শুরু হবে। কোটি কোটি টাকার বিনিয়োগ হবে। কৃষি এবং শিল্প সিঙ্গুরকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যাবে (Mamata At Singur)।”

আগামীবছর রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন। ২০১১-র বিধানসভা নির্বাচনের আগে, রাজ্য রাজনীতির ‘হাওয়া মোরগ’ ছিল সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম। কৃষি জমি বাঁচাও আন্দোলনই ২০০৮ এর পঞ্চায়েত নির্বাচনে পূর্ব মেদিনীপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার মত দুটি জেলা পরিষদে জয় পায় তৃণমূল। তৃণমূলের দিক থেকে এই জয় ছিল দিক নির্দেশকারী। বিরোধীদের অভিযোগ, মমতার জমির আন্দোলনের জেরে, সিঙ্গুরের (Mamata At Singur) মানুষ জমি ফিরে পেলেও, রাজ্যের শিল্পায়ন নিয়ে ভুল বার্তা গিয়েছিল দেশের শিল্পপতিদের কাছে। শিল্পের সেই ক্ষরা কোনদিনই কাটিয়ে উঠতে পারেনি রাজ্য। উল্টে ২০১১ তে রাজ্যে সরকারে এসে প্রতিটি নির্বাচনের আগে মমতাকে নিয়ম করে ‘সিঙ্গুরে শিল্প বিদায় ‘নিয়ে বিরোধীদের সমালোচনার জবাব দিতে হয়েছে।

কিন্তু, ২০২১ এ তৃতীয় বারের জন্য রাজ্যের ক্ষমতায় আসার পর, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee) বুঝতে পারছেন, শিল্পায়ন ছাড়া রাজ্যের আর্থিক অবস্থা ও কর্মসংস্থানে গতি আনা সম্ভব নয়৷ দলের এক প্রবীন সাংসদ ও নেতার মতে, ২৪ এর লোকসভা ভোটের আগে, ২৩ এর পঞ্চায়েত নির্বাচন তৃণমূলের কাছে ‘অ্যাসিড টেস্ট’। এখনও গ্রামীন মানুষের সমর্থনই তৃণমূলের জনভিত্তি। ফলে, গ্রামীন মানুষের ভোটব্যাঙ্ক ধরে রাখতে হলে, শুধু দুয়ারে সরকার বা কন্যাশ্রী, যুবশ্রীর মত প্রকল্প দিয়ে হবে না। তার জন্য দরকার, শিল্প ও কর্মসংস্থানে আশা জাগানোর মত কিছু করে দেখানো। তৃণমূল নেতাদের কথায়, “এই মূহুর্তে বিধানসভায় আমরা নিরঙ্কুশ। বিরাট জনসমর্থন আমাদের সঙ্গে রয়েছে। ফলে, মমতা সঠিক সময়ে, সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছেন।”

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, দু বছর ধরে কোভিড পরিস্থিতির জন্য রাজ্যের অর্থনীতি খাদের কীনারে এসে দাঁড়িয়েছে। কর্মসংস্থানের কোনও দিশা না থাকায় তরুণ প্রজন্মের কাছে হতাশা বাড়ছে। সরকারি চাকরির বিশেষত শিক্ষক নিয়োগের মত ইস্যুতে, দলের একাংশের দূর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার মত ঘটনা, তৃণমূল ও রাজ্য সরকারের প্রতি মানুষের আস্থায় চিড় ধরিয়েছে। একমাত্র, শিল্পায়ন ও কর্ম সংস্থানের সম্ভবনাই পারে এই পরিস্থিতিতে দলকে অনুকূল জায়গায় টেনে আনতে।

২০১১ তে সিপিএমের শ্লোগান ছিল, “কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যত। কিন্তু, সিঙ্গুর, নন্দীগ্রামকে দেখে বামেদের সরিয়ে, মমতার আন্দোলনের ওপরেই সেদিন ভরসা রেখেছিল রাজ্যবাসী। কিন্তু, ১০ বছর পরে রাজ্যের তরুণ প্রজন্মের কাছে কর্মসংস্থানের দাবি আজ আর নিছক শ্লোগান সর্বস্ব রাজনৈতিক আন্দোলন নয়, রুঢ বাস্তবতা। সময়ের সেই দাবিকে মাথায় রেখেই পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে রাজ্যে শিল্প বার্তা মমতার।

Published by:Sanjukta Sarkar