বোমা নয়তো রোগের অভিঘাত, ‘জীবন্ত নরক’ গাজার পরিস্থিতি নিয়ে তীব্র উৎকণ্ঠা রাষ্ট্রপুঞ্জের

বোমা নয়তো রোগের অভিঘাত, ‘জীবন্ত নরক’ গাজার পরিস্থিতি নিয়ে তীব্র উৎকণ্ঠা রাষ্ট্রপুঞ্জের
নয়াদিল্লি: ‘জীবন্ত নরক’, গাজা সম্পর্কে হুবহু এই ভাষাতেই উৎকণ্ঠা জানাল রাষ্ট্রপুঞ্জের প্যালেস্তিনীয় শরণার্থী বিষয়ক সংগঠন (UN Agency For Palestinian Refugees)। ইজরায়েলি বোমাবর্ষণ নাগাড়ে চলছে। সংঘর্ষবিরতির লক্ষণটুকু নেই। চার দিকে হয় ধ্বংসস্তূপ নয়তো ব্লাড ডায়ারিয়া, জন্ডিস, অ্যাকিউট হেপাটাইটিসে আক্রান্তেরা ছটফট করছেন। নিহতের সংখ্যা ১৮ হাজারের বেশি, দাবি করেছে প্যালেস্তাইনের স্বাস্থ্যমন্ত্রক। বিদেশি এবং জখম হাতেগোনা কয়েকজন প্যালেস্তাইনি ছাড়া পানীয় জল, খাবার, ওষুধের তাড়নায় ধুঁকতে থাকা গাজা থেকে সে অর্থে কেউ বেরোতে পারেননি। অসমর্থিত সূত্রের মতে, একফালি স্ট্রিপে এই মুহূর্তে আটকে পড়া মানুষের সংখ্যা ২০ লক্ষ। কী হবে এঁদের?

বিশ্ব স্বাস্থ্য় সংস্থার হুঁশিয়ারি…
ইজরায়েলি বোমাবর্ষণ থেকে কোনওক্রমে বেঁচে গেলেও রোগভোগে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাওয়া একরকম নিশ্চিত গাজার বড় অংশের বাসিন্দাদের, হুঁশিয়ারি বিশ্ব স্বাস্থ্য় সংস্থার। একচিলতে স্ট্রিপের স্বাস্থ্যব্যবস্থা টিমটিম করে টিকে রয়েছে, জানাচ্ছে ‘হু’। তবে যে কোনও মুহূর্তে সেটিও ভেঙে পড়তে পারে। গত রবিবার,বিশ্ব স্বাস্থ্য় সংস্থার ডিরেক্টর তেদ্রস আধানম ঘেব্রেইয়েসুস জানিয়েছিলেন, গাজার ৩৬টি হাসপাতালের মধ্যে এখন মোটে ১৪টি সচল। তার মধ্যে দুটি, নিজেদের কার্যক্ষমতার থেকে ৩ গুণ বেশি চাপ নিয়ে কাজ করছে। ‘হু’-র সতর্কবার্তা, এর মধ্যেই ব্লাড ডায়ারিয়া এবং জন্ডিস মহামারীর পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে বলে ইঙ্গিত। অ্যাকিউট ভাইরাল হেপাটাইটিস, মিসলস, চিকেনপক্স এবং মেনিনজাইটিসের দাপটও বাড়ছে। ৫ বছরের কমবয়সি বাচ্চাদের মধ্যে ডায়ারিয়ার অন্তত ১ লক্ষ ৬০ হাজারটি ‘কেস’ পাওয়া গিয়েছে বলে ‘হু’-র দাবি। সাধারণ সময়ের নিরিখে এই পরিসংখ্যান বহু গুণ বেশি।
এখনও পর্যন্ত কলেরা সংক্রমণের কোনও ‘কেস’ নথিভুক্ত হয়নি ঠিকই। তবে ডক্টর্স উইদাউট বর্ডারস জানাচ্ছে, পরিশ্রুত পানীয় জলের এতই অভাব যে কাতারে কাতারে মানুষ লবণাক্ত জল বা দূষিত জলই পান করছেন। ফলে যে কোনও মুহূর্তে কলেরা সংক্রমণ দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে ধ্বংসস্তূপে ধুঁকতে থাকা একচিলতে স্ট্রিপের ছবি কী দাঁড়াবে, ভেবে শিউরে উঠছেন সকলে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া…
রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভা মঙ্গলবার ফের তাদের জরুরি অধিবেশন চালু করে। হালেই নিরাপত্তা পরিষদে মানবিক কারণে সংঘর্ষিবরতির প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছিল আমেরিকা। তার পর আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিস্তর তোলপাড় হয়। এদিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মুখেও শোনা যায়, ‘নাগাড়ে বোমাবর্ষণ করে ইজরায়েল এবার সমর্থন হারাতে শুরু করছে।’ আন্তর্জাতিক মহলের ধারণা, গাজার এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতেও যে ভাবে সংঘর্ষবিরতির প্রস্তাবে আমেরিকা ‘ভেটো’ দেয়, তাতে নিজের দলেই চাপে পড়েছেন ‘ডেমোক্র্যাট’ বাইডেন। তাই সুর নরম। কিন্তু ইজরায়েলকে ১ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের সামরিক অনুদান প্যাকেজ দিতে এখনও পিছপা নয় আমেরিকা। সব মিলিয়ে ওয়াশিংটনের নীতি নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে।
এদিকে এদিন গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানায়, সেখানকার কমল অদওয়ান হাসপাতালেও ঢুকে পড়েছে ইজরায়েলের সেনা। রাতের দিকে সংঘর্ষবিরতির প্রস্তাবে সায় দিয়ে বিবৃতি দেয় অস্ট্রেলিয়া, কানাডা এবং নিউ জিল্যান্ড। হামাসও জানিয়েছে, সংঘর্ষবিরতি না হওয়া পর্যন্ত পণবন্দিদের মুক্তি নিয়ে আর কোনও আলোচনা নয়। সব মিলিয়ে ধুন্ধুমার পরিস্থিতি।

(Feed Source: abplive.com)