সৌমিতা মুখোপাধ্যায়: মায়ানমারের ছবি ‘The Broken Dreams’ নিয়ে কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে হাজির মায়ানমারের পরিচালক বো তেট থোন। ২০২১ সালের সেই নভেম্বর থেকেই মায়ানমার থেকে নির্বাসিত এই পরিচালক। তবে তিনি একা নন, তাঁর সঙ্গে নির্বাসিত আরও আট পরিচালক। একদিন তাঁরা জানতে পারেন, পুলিস তাঁদের খুঁজছে। এর পরই দেশ ছাড়েন তাঁরা। তবে বিদেশেও নিরাপদ নন এই ন’জন পরিচালক– এমনই দাবি বো তেট থোনের।
গত বছর ‘মায়ানমার ডায়রিজ’ নামে একটি ছবি বানিয়েছিলেন তাঁরা। সেই ছবি পুরস্কৃত হয় বার্লিন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে। এর পরেই ‘ব্রোকেন ড্রিমসে’র পরিকল্পনা করেন তাঁরা। এর মধ্যেই থাইল্যান্ডের বেশ কিছু জায়গায় প্রদর্শিত হয়েছে এই ছবি। সেই ছবি নিয়েই এবার কলকাতায় হাজির বো।
কলকাতায় তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সুযোগ হয় ‘জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো’র। ‘জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো’র সঙ্গে ছবি থেকে শুরু করে তাঁর দেশের অভ্যন্তরীণ অবস্থা নিয়ে কথা বললেন ৩৬ বছর বয়সি এই পরিচালক।
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: আপনি কি এখন মায়ানমারে ফিরতে পেরেছেন?
বো তেট থোন: না আমি মায়ানমারে এখন থাকতে পারি না, আমি এখন থাইল্যান্ডে থাকি।
জি : আপনার পরিবার কি মায়ানমারে আছে?
বো: সেটা না বলাই ভালো। গোপন রাখাই মঙ্গল।
জি : এখন আপনার দেশের অবস্থা কী?
বো: আমাদের দেশ এখন পুরোপুরি মিলিটারিদের কর্তৃত্বে। তাদের লোকজনেরাই আমাদের শাসন করছে। সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন দেশবাসী। শাসকের শোষণ, নিষ্ঠুরতা, একনায়কতন্ত্র, অত্যাচারের কাহিনী এখন মায়ানমার জুড়ে।
জি : সেখানে তো আর কথা বলার কোনও স্বাধীনতা নেই, নিশ্চয়?
বো: মিলিটারি শাসনের অন্তর্ভুক্ত যে জায়গা, সেখানে কথা বলার কোনও স্বাধীনতা নেই, এমনকি ছবি তৈরিরও কোনও স্বাধীনতা নেই। তবে, আমি আমার ছবির মাধ্যমে প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমার ছবিতে মায়ানমারের কথা উঠে এসেছে। মায়ানমারের মানুষজনের কথা উঠে এসেছে। তাঁদের চিন্তাধারার কথা উঠে এসেছে। তাঁদের অত্যাচারিত হওয়ার কাহিনি উঠে এসেছে। মায়ানমার মিলিটারিদের অধীন বলে আমরা কোনও ভাবেই মায়ানমারে থেকে সিনেমা তৈরি করতে পারছি না। সিনেমা তৈরির স্বাধীনতা সেখানে নেই।
জি : আপনার এই ছবিটি সম্পর্কে জানতে চাইব?
বো: আমার ছবির নাম ‘ব্রোকেন ড্রিমস’। এতে ন’টা ছোট ছবিকে একসঙ্গে জোড়া হয়েছে। ‘কুপে’র আগমনে বহু স্বপ্ন ভেঙে গিয়েছে। সেরকমই ন’টা বিভিন্ন স্বপ্ন নিয়ে এই ছবি। সেখানে প্রতিবাদীদের কথা আছে।
জি : ছবির মাধ্যমে আপনি কি বাকি দুনিয়াকে কোনও বার্তা দিতে চান?
বো: এটা বলা খুবই কঠিন, কারণ মায়ানমারের মানুষেরা যে অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন সেটা নিয়ে তাঁরা বিশেষ আলোচনাও করতে পারেন না, সেক্ষেত্রেও অনেক বাধা রয়েছে। কারণ, তাঁরা পুরোপুরি মিলিটারি শাসনের অন্তর্ভুক্ত। তাঁরা সব সময় কড়া নজরের অধীনে।
জি : রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আপনি কী বলবেন?
বো: ওঁরা আমাদের আগে থেকেই ভুগছেন। তবে এখন সবারই এক অবস্থা। বর্তমানে জুন্টা থেকে অনেকেই প্রতিবাদীদের দলে যোগ দিচ্ছেন। মাঝে মাঝে হতাশ লাগে। তবে হাল ছাড়লে হবে না। এর শেষ দেখে ছাড়ব।
(Feed Source: zeenews.com)