কেকে-র আকস্মিক মৃত্যুপ্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে! সচেতন হতে হবে এখনই

কেকে-র আকস্মিক মৃত্যুপ্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে! সচেতন হতে হবে এখনই

#নয়াদিল্লি: ঠিক এক ঘণ্টা আগেও মঞ্চ মাতিয়েছিলেন তিনি। তাঁকে ঘিরে ছিল কয়েক হাজার দর্শকের উন্মাদনাও। একের পর এক নব্বইয়ের দশকের নস্টালজিয়ার হিট গান। কিন্তু অনুষ্ঠানের রেশ ভাঙতে না-ভাঙতেই যেন ছন্দপতন! কিছুক্ষণের মধ্যেই শিল্পীর আকস্মিক মৃত্যুতে স্তব্ধ হয়ে যায় গোটা দেশ! কীভাবে?কেন? এই প্রশ্নগুলিই কুরে কুরে খেতে থাকে ভক্তদের। কারণ মাত্র ৫৩ বছর বয়সে হার্ট অ্যাটাকে থমকে গিয়েছে জনপ্রিয় গায়ক কৃষ্ণকুমার কুন্নাথ ওরফে কেকে-র জীবনের স্পন্দন।
গত ৩১ মে দক্ষিণ কলকাতার নজরুল মঞ্চে অনুষ্ঠান চলাকালীন কেকে কিছুটা অসুস্থ বোধ করেছিলেন বটে! কিন্তু সেটাকে পাত্তা না-দিয়ে চিরাচরিত মেজাজে জমিয়ে দিয়েছিলেন অনুষ্ঠান। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই যে তাঁর জীবনের শেষ সময় উপস্থিত হতে চলেছে, তা বোধহয় টের পাননি স্বয়ং শিল্পীও।

প্রাথমিক ভাবে কেকে-র মৃত্যুর আসল কারণ নিয়ে কিছুটা ধন্দ ছিল। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরে চিকিৎসকেরা কেকে-র মৃত্যুর কারণ হার্ট অ্যাটাক বলেই জানিয়েছেন। কিন্তু আপাত ভাবে ফিট একজন মানুষের কীভাবে এই বয়সে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে, তা নিয়ে সকলেই স্তম্ভিত। চিকিৎসকদের মতে, হার্ট অ্যাটাকের কোনও লক্ষণ উপেক্ষা করা একেবারেই উচিত নয়। আবার তেমনই হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য প্রথম থেকেই সচেতন হওয়া উচিত।

আসলে হার্টের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে জীবনযাত্রা, বয়স, পারিবারিক ইতিহাস তো ঝুঁকি বাড়ায়ই। সেই সঙ্গে দূষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো পরিবেশগত কারণও যথেষ্ট প্রভাব ফেলে। আজকাল ক্রমবর্ধমান ব্যস্ততার জীবন, সেই সঙ্গে মানসিক চাপ এবং টেনশন তো আছেই। আর এসব কারণে আমাদের জীবনযাত্রাতেও বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে। কিংবা বলা ভালো, জীবনযাত্রার পরিবর্তনের কারণে বেশির ভাগ মানুষের মধ্যেই অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস তৈরি হয়েছে। তাই হার্ট ভালো রাখতে প্রতিদিন এক্সারসাইজ করা এবং সারা দিন নিজেকে কাজে ব্যস্ত রাখার মতো স্বাস্থ্যকর অভ্যেস মেনে চলা দরকার।

স্বাস্থ্য সংস্থাগুলি কী বলছে?

ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশনের মতে, সারা দিন নিজেকে সচল রাখলে হৃদরোগ-সহ অনেক রোগের ঝুঁকিই ৩৫ শতাংশ কমে যেতে পারে। অন্য দিকে, শারীরিকভাবে নিষ্ক্রিয় থাকলে বা এক নাগাড়ে অনেকক্ষণ ধরে বসে থাকার ফলে হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের মতো হৃদরোগ ও রক্তচাপ সংক্রান্ত রোগের সম্ভাবনা কয়েক গুণ বেড়ে যায়।

আবার নিউইয়র্কের স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে যে, প্রায় ৩৫% রোগীর করোনারি হৃদরোগের কারণে মৃত্যু হয় শুধুমাত্র শারীরিক নিষ্ক্রিয়তার কারণেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বছরে সাত লক্ষেরও বেশি মানুষের হৃদরোগে মৃত্যু হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, শারীরিক ভাবে সচল মানুষদের তুলনায় অসচল মানুষদের মৃত্যুর ঝুঁকি ২০% থেকে ৩০% বেশি থাকে। আবার সম্প্রতি এনভায়রনমেন্ট ইন্টারন্যাশনালে প্রকাশিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক সপ্তাহে ৩৫-৪০ ঘণ্টা কাজ করার তুলনায় ৫৫ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় ধরে কাজ করলে প্রায় ৩৫% বেশি স্ট্রোকের এবং ইস্কেমিক হৃদরোগের মৃত্যুর ঝুঁকি ১৭% বেশি থাকে।

নিয়মিত এক্সারসাইজ হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কতটা কমায়?

হৃৎপিণ্ড একটি পেশি। যা অন্য যে কোনও পেশির মতো ব্যায়ামের মাধ্যমেই ভালো রাখা উচিত। একটি সুস্থ হার্ট কম পরিশ্রমেই শরীরের বেশি রক্ত পাম্প করতে পারে। সেক্ষেত্রে নিয়মিত ব্যায়াম করলে হার্ট ভালো থাকা পাশাপাশি রক্ত সঞ্চালন এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
তবে শুধু শারীরিক নয়, এক্সারসাইজ মেজাজও ভালো রাখে, মানসিক চাপ কমায়, স্মৃতিশক্তি বাড়ায় এবং এতে ঘুমও ভালো হয়। আর এভাবেই এক্সারসাইজ সার্বিকভাবে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। সেক্ষেত্রে যে কোনও এরোবিক ব্যায়াম, যেমন – হাঁটা, সাঁতার কাটা কিংবা নাচ করা যেতে পারে। তবে শারীরিক ভাবে সচল থাকার অর্থ এই নয় যে, রোজ জিমে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে কসরত করে ঘাম ঝরাতে হবে কিংবা ম্যারাথনে দৌড়তে হবে। চাইলে দৈনন্দিন ঘরের কাজ কিংবা বাগান পরিচর্যা করার মাধ্যমেও ফিট থাকা যায়।

এক্সারসাইজে কতটা সময় দেওয়া উচিত?

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মিনিট মাঝারি তীব্রতার এক্সারসাইজ করা উচিত। এক্ষেত্রে এমন কিছু এক্সারসাইজ করতে হবে, যা আমাদের হৃদস্পন্দন এবং শ্বাসপ্রশ্বাসের গতি বাড়িয়ে দেয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য – দ্রুত হাঁটা অথবা সাইকেল চালানো ইত্যাদি। আবার পেশির জোর বাড়ানোর জন্য দৈনিক ছোট ছোট কসরত করতে হবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সিঁড়ি দিয়ে ওঠা-নামা, বাগান করা, ভার উত্তোলন করা ইত্যাদি।

অন্য উপায়ে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমানো:

রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর মতো করোনারি হার্ট ডিজিজ (CHD)-এর ঝুঁকি কমানোর আরও কয়েকটি উপায় রয়েছে। যেমন – ডায়াবেটিস থাকলে সিএইচডি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে, তাই রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

আরও পড়ুন: দু-চোখে বিজ্ঞানী হওয়ার স্বপ্ন! মনের জোরে পায়ে লিখেই মাধ্যমিকে ৯০% মুর্শিদাবাদের আলম রহমানের

এছাড়া ধূমপান এথেরোস্ক্লেরোসিসের মতো অসুখের ঝুঁকির একটি প্রধান কারণ। এর ফলে ৫০ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই করোনারি থ্রম্বোসিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই হার্ট ভালো রাখতে ধূমপান ত্যাগ করা গুরুত্বপূর্ণ। একই সঙ্গে মদ্যপানের অভ্যেস ত্যাগ করা উচিত। তবে মদ্যপান করলেও তা পরিমিত পরিমাণে করাটা জরুরি। সেক্ষেত্রে সপ্তাহে ১৪ ইউনিটের বেশি মদ্যপান করা উচিত নয়।

Published by:Uddalak B

(Source: news18.com)