মুঠো মুঠো অ্যান্টাসিড খেতেন কেকে! হার্টে সমস্যা আছে কি না, বোঝা যাবে কী করে!

মুঠো মুঠো অ্যান্টাসিড খেতেন কেকে! হার্টে সমস্যা আছে কি না, বোঝা যাবে কী করে!

#নয়াদিল্লি: গানের অনুষ্ঠান করতে কলকাতায় এসে জীবনের মঞ্চ ছেড়েই বিদায় নিয়েছেন গায়ক এবং গীতিকার কেকে (KK)। তাঁর মৃত্যুতে স্বভাবতই শোকের ছায়া নেমে এসেছে দেশ জুড়ে। কিন্তু কেকে-র মৃত্যুর জেরে ইতিমধ্যেই উঠতে শুরু করেছে নানা প্রশ্ন।

মঙ্গলবার রাতে দক্ষিণ কলকাতার নজরুল মঞ্চে অনুষ্ঠান ছিল কেকে-র। অনুষ্ঠান শেষে হোটেলে ফিরে যান তিনি। তার পরে সেখানেই আরও অসুস্থবোধ করেন গায়ক। তার পরেই তাঁর মৃত্যু হয়।

কেকে-র অনুষ্ঠানের যেসব ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে, তাতে দেখা গিয়েছে, অনুষ্ঠান চলাকালীনই অস্বস্তিতে ভুগছিলেন ৫৩ বছর বয়সী গায়ক। আর এই নিয়েই তৈরি হয়েছে বিতর্ক।

অনুষ্ঠানের অব্যবস্থা নিয়ে বারবার অভিযোগ উঠছে। তবে জনপ্রিয় এই গায়কের মৃত্যুর কারণ হিসেবে দায়ী করা হচ্ছে হার্ট অ্যাটাক (Heart Attack) এবং হৃদযন্ত্রের সমস্যাকে (Heart problems)।

কেকে-র ময়নাতদন্তের দায়িত্বে থাকা এক চিকিৎসকের মতে, কেকে প্রচুর অ্যান্টাসিড খেতেন। অনুমান করা হচ্ছে যে, ব্যথা উঠলেও তিনি সেটাকে হজমের সমস্যা ভেবেই অ্যান্টাসিড খেয়ে গিয়েছেন। এই প্রসঙ্গে কলকাতা পুলিশের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক জানিয়েছেন যে, গায়কের স্ত্রী স্বীকার করেছেন যে, কেকে প্রচুর অ্যান্টাসিড খেতেন। এ

র সঙ্গে গায়ক-পত্নী এ-ও জানান যে, তাঁর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার সময় তাঁকে কেকে জানিয়েছিলেন যে, কয়েক দিন ধরেই তিনি হাত এবং কাঁধে ব্যথা অনুভব করছেন।

আসলে আজকাল অনেকেই হার্ট অ্যাটাকের উপসর্গের সঙ্গে হজমের সমস্যার উপসর্গকে গুলিয়ে ফেলেন। এমনটাই জানাচ্ছেন সারদা হাসপাতালের (Sharda Hospital) হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শুভেন্দু মোহান্তি (Subhendu Mohanty)। কিন্তু এক্ষেত্রে তাঁরা কী করেন, সেই প্রসঙ্গে ওই চিকিৎসক বলেন, হার্ট অ্যাটাক না কি হজমের গোলমাল, তা বোঝার জন্য আমরা সাধারণত ঝুঁকির বিষয়গুলো দেখি।

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল বয়স, রক্তচাপ এবং ধূমপানের অভ্যেস প্রভৃতি। যদি কারওর ক্ষেত্রে ঝুঁকির এই বিষয়গুলি থাকে এবং তাঁদের হজম সংক্রান্ত সমস্যার উপসর্গ চোখে পড়ে, তাহলে ধরে নিতে হবে হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। তবে এই ঝুঁকির বিষয়গুলো না-থাকলেও হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

সেক্ষেত্রে সম্ভাবনা খুবই কম থাকে, বিশেষ করে বয়স চল্লিশের কম হলে। পরবর্তী ক্ষেত্রে ঝুঁকির কোনও বিষয়গুলোই যদি কারওর না-থাকে, তাহলে হার্টের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই কম।”

ঠিক একই কথা বলছেন বেঙ্গালুরু ফর্টিস হাসপাতালের ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজি বিভাগের ডিরেক্টর ডা. এ গোপী (A Gopi)। তিনি জানিয়েছেন যে, “আমরা সাধারণ হজমের সমস্যা এবং হার্ট অ্যাটাকের মতো গুরুতর সমস্যাকে আলাদা করার জন্য পূর্ব প্রয়োজনীয় সম্ভাবনাগুলো পরীক্ষা করে দেখি। উদাহরণস্বরূপ, রোগী যদি ধূমপায়ী হন কিংবা ডায়াবেটিসে ভোগেন, তাহলে তাঁর হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা প্রবল। কারণ এই বিষয়গুলো হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়। আর এই সব রোগীর ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া উচিত নয়।”

হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে ঝুঁকির বিষয়গুলির মধ্যে অন্যতম মানসিক চাপও। ডা. মোহান্তির বক্তব্য, আজকালকার পরিস্থিতিতে হৃদযন্ত্র বা হার্টের স্বাস্থ্যের উপর মানসিক চাপের বিশেষ প্রভাব রয়েছে। তিনি আরও বলেন, “যদি কোনও ব্যক্তির বাড়িতে অথবা অফিসে মানসিক চাপের নানা কারণ থাকে এবং তার সঙ্গে ব্যক্তি বুকে ব্যথা, জ্বালা-ভাবের মতো উপসর্গ অনুভব করেন, তাহলে বুঝে নিতে হবে এই উপসর্গগুলো হার্টের সমস্যারই ইঙ্গিত দিচ্ছে।”

ডা. গোপী এরই সঙ্গে যোগ করেছেন, “হার্ট অ্যাটাক এবং হজমের গোলমালের ক্ষেত্রে একই ধরনের কিছু উপসর্গ থাকে। যেমন – জ্বালাপোড়া ভাব, পেট ক্র্যাম্প, বুকে ব্যথা ইত্যাদি। আর এর সঙ্গে যদি শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ প্রকাশ পায়, তবে ধরে নিতে হবে, হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনাই বেশি।”

ডা. মোহান্তির মতে, সাধারণ ভাবে হার্ট অ্যাটাক ও হজমের সমস্যার উপসর্গকে আলাদা করার সুনির্দিষ্ট উপায় হল ইসিজি (ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাফি)। তিনি বলেন, “কেউ যদি এই ধরনের সমস্যা অনুভব করেন, তাহলে তার কারণ শনাক্ত করতে ইসিজি করাতে হবে। প্রায় ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে ইসিজি-তে হার্ট অ্যাটাক ধরা পড়ে। যদি গুরুতর অস্বস্তি হয় এবং রোগীর মধ্যে ঝুঁকির বিষয়গুলিও বর্তমান থাকে, তবে তা অবহেলা করলে চলবে না।”

ডা. মোহান্তি আরও জানান, যদি ঝুঁকির বিষয়গুলি না-থাকে, তাহলে উপসর্গ দেখা দেওয়ার পরে ঘণ্টাখানেক অপেক্ষা করাই যায়। অ্যান্টাসিড আদৌ কাজ করছে কি না, সেটা দেখতে চাইলে ক্ষতি নেই। তবে যদি অ্যান্টাসিড খেয়েও অস্বস্তি হয়, অনেকেই ডাক্তারের কাছে যাওয়ার বদলে আরও ওষুধ খেতে থাকেন। তিনি জানান, এক্ষেত্রে প্রথম অ্যান্টাসিডটা খেলেও যদি সমস্যা না মেটে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে ইসিজি করাতে হবে। আরও এক ঘণ্টা দেখি বলে সময় নষ্ট করা উচিত নয়।

Published by:Suman Majumder

(Source: news18.com)