নেই বরফ, আগে তুষারের চাদরে ঢেকে থাকা গুলমার্গ এবার ন্যাড়া মাঠ, ২০২৫-তে কী হবে?

নেই বরফ, আগে তুষারের চাদরে ঢেকে থাকা গুলমার্গ এবার ন্যাড়া মাঠ, ২০২৫-তে কী হবে?

জানুয়ারিতে গিয়ে সাদা বরফের উপত্যকায় নিজেকে উজাড় করে দেব – গুলমার্গ ট্যুরের যখন টিকিট কেটেছিলেন, হোটেল বুকিং করেছিলেন, তখন প্রত্যেকেই নিশ্চয়ই এটাই ভেবেছিলেন। কবে সাদা বরফের চাদরে হারিয়ে যাবেন, সেটার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত যখন জানুয়ারি এল, তখন সেই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেল। কারণ জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে এবার বরফের দেখা নেই গুলমার্গে। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে যে এলাকাটা পুরো বরফে ঢাকা ছিল, সেটাই এক বছর পর কার্যত ‘ন্যাড়া’ হয়ে পড়ে আছে। পর্যটকদের হা-হুতাশে বিবর্ণ ঘাসটা যেন আরও বিবর্ণ হয়ে উঠেছে। দেখে মনে হবে যেন সবুজ ঘাস উঠে যাওয়া খেলার মাঠে দাঁড়িয়ে আছেন।

অথচ এবারের মতো ছবিটা সাধারণত জানুয়ারিতে দেখা যায় না বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের বক্তব্য, গত ২১ ডিসেম্বর থেকে ‘চিল্লা-ই-কালান’ (কাশ্মীরের প্রবল ঠান্ডার ৪০ দিন, স্থানীয়রা সেই নামে ডাকেন) শুরু হয়ে গিয়েছে। চলবে আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। কিন্তু জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেও গুলমার্গ-সহ কাশ্মীরের একাধিক পর্যটন কেন্দ্র ‘ন্যাড়া’ হয়ে থাকায় দুশ্চিন্তায় ভুগছেন স্থানীয় বাসিন্দা থেকে শুরু করে পরিবেশবিদ, পর্যটন ব্যবসায়ীরা।

কারণ বছরের এই সময়টার জন্য তাঁরা অপেক্ষা করে থাকেন। প্রতি বছর বরফের টানে প্রচুর পর্যটক আসেন গুলমার্গে। ২০২৩ সালেই ১৬.৫ লাখের বেশি পর্যটক এসেছিলেন ‘ফুলের উপত্যকা’-য়। যদি এখনই তুষারপাত না হয়, তাহলে সেই সংখ্যাটা এবার হুড়মুড়িয়ে কমতে পারে বলে আশঙ্কাপ্রকাশ করছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। যা গুলমার্গের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। স্থানীয় বাসিন্দাদের রুটিরুজিও ধাক্কা খাবে বলে মত তাঁদের।

বিষয়টি নিয়ে গুলমার্গ পর্যটনের সহকারী অধিকর্তা জাভেদ-উর-রহমান বলেন, ‘গুলমার্গের কোথাও বরফ নেই। পাহাড়ের ঢাল দেখে পুরোপুরি ফাঁকা হচ্ছে। পুরো উপত্যকায় একই অবস্থা। ইউরোপের রিসর্টগুলিও একই পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছে।’ সেইসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যদিও এখনও পর্যন্ত পর্যটনের উপর সেটার প্রভাব পড়েনি। কিন্তু আগামিদিনে নিশ্চিতভাবে সেটার প্রভাব পড়বে। যদি শুষ্ক আবহাওয়া বজায় থাকে, তাহলে প্রচুর (বুকিং) বাতিল হয়ে যাবে।’

আপাতত যা পরিস্থিতি, তাতে সেই আশঙ্কা ক্রমশ বাড়ছে। কারণ আগামী ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত তেমন তুষারপাতের কোনও সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন শ্রীনগর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা মুখতার আহমেদ। তিনি বলেছেন, ‘গত তিন-চার বছর ধরে আমরা দেখেছি যে সময়ের আগেই তুষারপাত হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এবার সেটা হয়নি। এখনও পর্যন্ত সেরকমভাবে তুষারপাত হয়নি।’

কিন্তু এবার এরকম অবস্থা কেন?

বিষয়টি নিয়ে শ্রীনগর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা মুখতার আহমেদ জানিয়েছেন, গুলমার্গ-সহ কাশ্মীরের বিভিন্ন অংশ যে এবার তুষারহীন হয়ে আছে, সেটার জন্য যে কারণগুলি দায়ি, সেগুলির মধ্যে অন্যতম হল ‘এল নিনো’। যা নভেম্বর থেকে গলার কাঁটা হয়ে বিঁধে রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আগামী মাস পর্যন্ত এল নিনোর প্রভাব থাকবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। সাধারণত এল নিনোর বছরের তুষারপাত কম হয়। ঘাটতি দেখা যায়। কিন্তু এটাও ঠিক যে এল নিনোর বছরে সবসময় শুষ্ক আবহাওয়া থাকে না (অর্থাৎ তুষারপাত হয়)।’

আর সেটাই ‘স্বস্তি’ দিচ্ছে পর্যটকদের, যাঁরা ইতিমধ্যে ভেবে রেখেছেন যে ২০২৫ সালের জানুয়ারিটা গুলমার্গে কাটাবেন। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে কেমন তুষারপাত কেমন হবে, সেটা এখনই হলফ করে বলা না গেলেও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যে গুলমার্গের আবহাওয়া পুরোপুরি পালটে গিয়েছে এবং জানুয়ারিতে আর তুষারপাত হবে না, সেটা বলা যায় না। শ্রীনগর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা বলেছেন, ‘এবার প্রথম এরকম শুখা মরশুমের সাক্ষী থাকলাম না আমরা। ২০২২ সাল, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর-জানুয়ারি, ২০১৫ সালের জানুয়ারি এবং ২০১৪ সালের ডিসেম্বরেও এরকম হয়েছিল।’

(Feed Source: hindustantimes.com)