আন্দিজ পর্বতমালার পূর্ব দিকে উপানো উপত্যকায় বিগত কয়েক দশক ধরেই গবেষণা চালাচ্ছিলেন প্রত্নতত্ত্ববিদরা। এযাবৎ সেই গবেষণায় তেমন কিছু হাতে না এলেও, সম্প্রতি প্রযুক্তির সাহায্য নিতে শুরু করেন তাঁরা। ফরাসি গবেষকদের নেতৃত্বে লেজার ম্যাপিং প্রযুক্তির সাহায্যে শুরু হয়ে তল্লাশি। আকাশপথ থেকে আলো ফেলে গবেষণা চলে একদিকে, অন্য দিকে চলে মাটি খোঁড়াখুঁড়ির কাজও। তাতেই সড়কপথে সংযুক্ত পাঁচটি শহরের খোঁজ মিলেছে।
গবেষকরা জানিয়েছেন, বিস্মৃত ওই কৃষিভিত্তিক সভ্যতার ১০০০ বর্গকিলোমিটার এলাকার খোঁজ মিলেছে। ইকুয়েডরের পূর্বে, আন্দিজ পর্বতমালার পাদদেশে উপানো উপত্যাকা অঞ্চলে এই আবিষ্কার হয়েছে। French National Center for Scientigic Research-এর গবেষক স্টিফেন রোস্তেন জানিয়েছেন, এই আবিষ্কার ‘এল ডোরাডো’র খোঁজ পাওয়ারই সমতুল্য। মাটির বাড়ি, পাকা বাড়ি, কৃষিকার্যের নিদর্শন মিলেছে। সেকালে বাড়িতে বসানো ফায়ারপ্লেস, চিনেমাটির বয়াম, ভুট্টা থেকে তৈরি বিয়ারের পাত্র, শিল-নোড়াও পাওয়া গিয়েছে মাটি খুঁড়ে।গবেষকদের মতে, নেহাত হারিয়ে যাওয়া কোনও গ্রাম নয়, আস্ত ভূচিত্রের খোঁজ মিলেছে, যেখানে মানুষের বাস ছিল।
গবেষণা চলাকালীন। ছবি: ছবি: আন্তর্জাতিক Science জার্নাল।
গবেষকরা জানিয়েছেন, আমাজনের গহীন অরণ্যে চাপা পড়ে যাওয়া ওই সভ্যতা, কিলামোপে এবং উপানো সংস্কৃতিকে ভিত্তি করে উঠেছিল। কিছু সময় পর হুয়াপুলা সংস্কৃতি ওই সভ্যতার উপর প্রভাব বিস্তার করে। বিস্মৃত ওই সভ্যতার অংশ, ১৫টি বসতি এলাকাকেও চিহ্নিত করা গিয়েছে। বেশ কিছু টিলাও রয়েছে। খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ থেকে ৩০০ এবং ৬০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সেখানে মানুষের বাস ছিল বলে দাবি গবেষকদের।
যে ‘এল ডোরাডো’র প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন স্টিফেনস সেটি একটি কাল্পনিক শহর, যেখানে সোনার গোপন ভাণ্ডার রয়েছে বলে হাজারো উপাখ্যান রয়েছে। স্পেনীয় শব্দ ‘এল ডোরাডো’র অর্থও ‘যেটি সোনা’। দক্ষিণ আমেরিকায় একসময় সোনার একটি দেশ ছিল বলে লোককথায় দাবি করা হয়। কাল্পনিক ওই শহরের খোঁজে শত শত মানুষের ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়ার রয়েছে উদাহরণও। এমন দুঃসাহসী অভিযানেরও ভূরি ভূরি আখ্যান রয়েছে স্পেনীয় সাহিত্যে। আমাজনের গহীন অরণ্যে আবিষ্কৃত প্রাচীন সভ্যতাকে ‘এল ডোরাডো’র সঙ্গেই তুলনা করছেন গবেষকরা।
(Feed Source: abplive.com)