আজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হল। প্রথম দিনে প্রথম ভাষার পরীক্ষা হয়েছে। প্রথম ভাষার মধ্যে বিভিন্ন বিষয় থাকলেও অধিকাংশ পরীক্ষার্থীই আজ বাংলা পরীক্ষা দিয়েছেন। আর এবারের উচ্চমাধ্যমিকের বাংলার (প্রথম ভাষা) প্রশ্নপত্র কেমন হল, ঘুরিয়ে কোনও প্রশ্ন দেওয়া হল নাকি, পড়ুয়াদের কীরকম নম্বর উঠতে পারে, তা নিয়ে বাংলার বিশেষজ্ঞ শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলল ‘হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা’। সেইসঙ্গে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সঙ্গেও ‘হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা’ কথা বলল। তাঁরা কী বললেন, তা দেখে নিন।
শিক্ষক রিভিউ- ১
সিঙ্গুরের আনন্দনগর রমানাথ হাইস্কুলের শিক্ষক প্রেক্ষা ঘোষ বলেন, ‘উচ্চমাধ্যমিকের বাংলার প্রশ্ন মোটের উপর সহজ হয়েছে। তবে ছোট প্রশ্নগুলি খুবই খুঁটিয়ে এসেছে। মানে সাজেশনভিত্তিক পড়াশোনা করলে ছোট প্রশ্নের উত্তর দেওয়া কঠিন হবে- সেটা এমসিকিউ হোক বা এসএকিউ হোক। যারা খুঁটিয়ে বই পড়েছে, তারা উত্তর দিতে পারবে। কয়েকটি প্রশ্ন আবার একদম সোজা এসেছে।’
ভাষাতত্ত্বের প্রশ্ন কেমন এসেছে? সিঙ্গুরের আনন্দনগর রমানাথ হাইস্কুলের শিক্ষক বলেছেন, ‘ভাষাতত্ত্বের অংশ থেকে যে ছোট প্রশ্নগুলি করা হয়েছে, সেগুলি একটু কঠিন হয়েছে। যারা ভাষাতত্ত্বটা বুঝে পড়েছে, তারাই পারবে। ওদের ভাষাতত্ত্ব অংশটা এমনিতেই কিছুটা শক্ত। তবে ভাষাতত্ত্বের বড় প্রশ্ন খুবই সহজ এসেছে।’
সেইসঙ্গে নির্মিতি অংশের প্রশ্নও খুবই সোজা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিঙ্গুরের আনন্দনগর রমানাথ হাইস্কুলের শিক্ষক। তিনি বলেছেন, ‘নির্মিতির অংশটাও সোজা এসেছে। শতবর্ষে মৃণাল সেনের ক্ষেত্রে তো সাজেশনের সঙ্গে হুবহু মিলে গিয়েছে। আগেও একবার উচ্চমাধ্যমিকে মানবজীবনে বিজ্ঞানের প্রভাব এসেছিল। সেটা রিপিট হয়েছে। তাছাড়াও নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারী আসতে পারে বলে অনুমান করা হয়েছিল। সুকুমার রায় এবং উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর মধ্যে একটি লিখতে বলা হয়েছিল। সাধারণত এরকম দেয় না। মোটের উপর প্রশ্ন ভালো হয়েছে। পড়াশোনা করে গেলে স্কোরিং হবে।’
শিক্ষক রিভিউ- ২
কলকাতার যাদবপুর বিদ্যাপীঠের বাংলার শিক্ষক অবন্তিকা অধিকারী বলেন, ‘সার্বিকভাবে প্রশ্নপত্র খুব একটা শক্ত হয়নি। এমসিকিউ অংশটা খুব শক্ত হয়নি। দু’একটা প্রশ্নের ক্ষেত্রে কারও কারও অসুবিধা হতে পারে। তবে খুঁটিয়ে পড়লে কোনও সমস্যা হবে না। এসএকিউ প্রশ্নও খুব সহজ প্রশ্ন এসেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বড় প্রশ্নের ক্ষেত্রে যেমন আশা করা হয়েছিল, তেমনই প্রশ্ন এসেছে। গল্প থেকে যে প্রশ্নগুলি এসেছে, সেগুলি প্রত্যাশিত ছিল। কবিতার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কবিতা ছিল। দুটি থেকেই প্রশ্ন এসেছে। ভারতীয় গল্প এবং আন্তর্জাতিক গল্পের মধ্যে একটি লিখতে হয়। ভারতীয় গল্পের প্রশ্নটা একেবারে সহজ এসেছে। আন্তর্জাতিক গল্প থেকে যে প্রশ্নটি এসেছে, সেটাও সহজ হয়েছে।’
রচনা কেমন ছিল? কোনও কঠিন বিষয় এসেছিল? তিনি বলেছেন, ‘আমার বাংলা অংশে যে যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল, সেখান থেকেই প্রশ্ন এসেছে। ভাষার ক্ষেত্রেও ভালো প্রশ্ন হয়েছে। সাহিত্যের ইতিহাসের ক্ষেত্রে গানের ধারায় দিজেন্দ্রলাল রায় বা অতুলপ্রসাদ সেনের প্রশ্ন এসেছে, সেটাও প্রত্যাশিত ছিল। এবার সুকুমার রায়ের মৃত্যুশতবার্ষিকী চলছে, তাই সুকুমার রায়কে নিয়ে প্রশ্ন আসতে পারে বলে অনুমান করা হয়েছিল। অন্যদিকে, মৃণাল সেনের জীবনীও অত্যন্ত সহজ ছিল। ওটা এমনিতেই পড়তে হয়।’
যাদবপুর বিদ্যাপীঠের বাংলার শিক্ষকের মতে, যা প্রশ্ন এসেছে, সেটা সহজই বলা যায়। যাঁরা উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য ঠিকমতো প্রস্তুতি নিয়েছেন, খুঁটিয়ে পড়েছেন, তাঁদের কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয় বলে জানিয়েছেন যাদবপুর বিদ্যাপীঠের বাংলার শিক্ষক। তাঁর কথায়, ‘সবমিলিয়ে প্রশ্ন যে সেভাবে শক্ত বলা যায় না, সেটা বলা যায় না। খুব সাজেশন-ভিত্তিক যারা পড়েছে, তাদের কিছুটা সমস্যা হতে পারে।’
পড়ুয়ার রিভিউ
কাঁচরাপাড়া ইন্ডিয়ান গার্লস হাইস্কুলের পড়ুয়া মোনালি রাহা বলেন, ‘পরীক্ষা ভালো হয়েছে। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় যেরকম প্রশ্ন আসার কথা, সেরকমই এসেছে। কয়েকটি প্রশ্ন ঘোরানো এসেছে। তবে উচ্চমাধ্যমিকে সেটা তো হবেই। ওই প্রশ্নগুলি ভালোভাবে পড়ে নেওয়ায় গুছিয়ে উত্তর দিতে পেরেছি। অনেক সময় হয় না, প্রশ্নটা কিছুটা ঘোরানো এসেছে। কিন্তু উত্তরটা মোটামুুটি একইরকম লিখতে হবে। সেরকমই কয়েকটি প্রশ্ন এসেছে। সবমিলিয়ে প্রশ্ন ভালো হয়েছে। যে স্কুলে আমাদের সিট পড়েছে, সেখানেও সকলে খুব সাহায্য করেছেন।’
(Feed Source: hindustantimes.com)