জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: প্রতি চার বছর অন্তর ৩৬৫-দিনের ক্যালেন্ডারে ফেব্রুয়ারির শেষে বাড়তি একটি দিন যোগ হয় অর্থাত্ প্রতি চার বছর অন্তর ফেব্রুয়ারি মাস হয় ২৯ দিনের। ২০২৪ সাল সেরকমই একটি বছর। কিন্তু ইতিহাসে শুধুমাত্র একবারই একটি বছর এসেছিল যখন ক্যালেন্ডারে দেখা গিয়েছিল ৩০শে ফেব্রুয়ারি। কেন ৩০শে ফেব্রুয়ারি যুক্ত করতে হয়েছিল সেই ব্যাখ্যার আগে লিপ ইয়ার কেন আসে, কবে থেকে লিপ ইয়ার যুক্ত হয়েছে সেই ইতিহাস জানা প্রয়োজন।
দুই সহস্রাব্দেরও বেশি আগে প্রাচীন রোমের ইতিহাসে জানা যায় যে সেই সময় প্রথম লিপ ইয়ার আবিষ্কার হয়েছিল। রোমানরা যে সৌর ক্যালেন্ডার ধরে বছর গণনা করছেন সেটি সৌর বছরের সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না। তখন রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজার আলেকজান্দ্রিয়ান জ্যোতির্বিজ্ঞানী সোসিজেনেসকে রোমান ক্যালেন্ডারের একটি বিকল্প তৈরির নির্দেশ দেন। যার সঙ্গে যোগ থাকবে সূর্যের চারিদিকে পৃথিবীর পরিভ্রমণের। কিন্তু এই জুলিয়ান ক্যালেন্ডার বেশিদিন টেকেনি। ওই ক্যালেন্ডারে কিছু ফাঁক থাকার কারণে ১৫৮২ সাল থেকে ক্রমান্বয়ে জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের জায়গা প্রতিস্থাপন করে নেয় আজকের গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার।
ভৌগোলিক মত অনুযায়ী পৃথিবী সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করতে কাঁটায় কাঁটায় ৩৬৫ দিন সময় নেয় না। এতে ৩৬৫ দিনের সাথে পাঁচ ঘণ্টা, ৪৮ মিনিট এবং ৫৬ সেকেন্ড বেশি সময় লাগে। সেই বেশি সময় যোগ করেই প্রতি চার বছরে ৩৬৫ দিনের সাথে একটি অতিরিক্ত দিন যুক্ত হয়। জুলিয়ান ক্যালেন্ডারে বছর শুরু হতো মার্চ থেকে। তাই ওই অতিরিক্ত দিনটি যুক্ত করা হয় বছরের শেষমাসে। ল্যাটিন শব্দ লিপের অর্থ মার্চ মাস শুরুর ছয় দিন আগে, অর্থাৎ ২৪শে ফেব্রুয়ারি। সেসময় ২৪ ফেব্রুয়ারি লিপ ইয়ার হিসেবে পালন করা হত। এরকয়েক বছর পরে, ত্রয়োদশ পোপ গ্রেগরি এক ডিক্রি জারির মাধ্যমে ক্যালেন্ডারটিকে ‘নিখুঁত’ করার সিদ্ধান্ত নেন। তখনই ২৪ থেকে এই দিনটি করা হয় ২৯ ফেব্রুয়ারি।
কিন্তু প্রশ্ন হল, কীভাবে ৩০ ফেব্রুয়ারি এল? সুইডেন যখন গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়, তখন তারা হঠাৎ করে ওই দিনগুলোকে একসাথে বাদ দিতে চায়নি। কিন্তু টানা ৪০ বছর সেই ক্যালেন্ডারে জায়গা পায়নি লিপ ইয়ার। ১৭০০, ১৭০৪, ১৭০৮ লিপইয়ার হলেও ফেব্রুয়ারি ছিল ২৮ দিনেরই। কয়েক বছর পরে, সম্রাট দ্বাদশ চার্লস বুঝতে পেরেছিলেন যে সুইডেনের ক্যালেন্ডারটি জুলিয়ান বা গ্রেগরিয়ান কোনটিই নয়। এরপরেই তিনি ক্যালেন্ডারটি সংস্কার করতে চান। তাই তিনি আদেশ দেন যেন ১৭১২ অর্থাৎ আরেকটি লিপ ইয়ারে ২৯শে ফেব্রুয়ারির পাশাপাশি আরেকটি অতিরিক্ত দিন যোগ করা হয়। সুইডেন একটি ডাবল লিপ ইয়ারের অংশ হিসেবে ১৭১২ সালের ক্যালেন্ডারে ৩০শে ফেব্রুয়ারি যুক্ত করে। কিছু বছর পরে অবশ্য সুইডেনও ১৭৫৩ সালে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার গ্রহণ করে।
তবে শুধু সুইডেনেই নয়, আরও অনেক ক্ষেত্রেই ৩০ ফেব্রুয়ারির খোঁজ পাওয়া যায়। ১৯৩০ থেকে ১৯৩১ সালের মধ্যে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নে একটি বিপ্লবী ক্যালেন্ডার চালু করা হয়। যেখানে সব মাস ধরা হয়েছিল ৩০ দিনের। তবে সেই ক্যালেন্ডার স্থায়ীত্ব খুবই কম। রে ব্র্যাডবিউরির ছোট গল্প “দ্য লাস্ট নাইট অফ দ্য ওয়ার্ল্ড”, জন রোনাল্ড রিয়েল টলকিয়েন তার ফ্যান্টাসি উপন্যাস ‘দ্য হবিট এবং দ্য লর্ড অফ দ্য রিংস’-এর মত বিশ্ব সাহিত্যেও এই তারিখের উল্লেখ পাওয়া যায়। এছাড়াও খৃস্টান মনে অনেক মানুষ, যাঁদের মৃত্যু বা জন্মের দিন সঠিক জানা যায় না তাঁদের এপিটাফে ওই তারিখ ৩০ ফেব্রুয়ারি বলেও উল্লেখ করতে দেখা যায়।
(Feed Source: zeenews.com)