অজয়-মাধবনের দুর্দান্ত অভিনয় মনোরঞ্জন করে, ভয়ও ধরায়, কিন্তু রয়ে গেল খামতি!

অজয়-মাধবনের দুর্দান্ত অভিনয় মনোরঞ্জন করে, ভয়ও ধরায়, কিন্তু রয়ে গেল খামতি!

নয়াদিল্লি: মুক্তি পেয়েছে ‘শয়তান’ ছবি (Shaitaan Review)। যখন এই ফিল্মের ট্রেলার মুক্তি পায় তখনই এর ঘরানা আন্দাজ করা গিয়েছিল। দারুণ ধামাকা হবে মনে হয়েছিল। মাধবন (R Madhavan) ঠিক কী কী করবে, অজয় (Ajay Devgn) কীভাবে নিজের পরিবারকে বাঁচাবে… এই ছবি যদিও ২০২৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত গুজরাতি ছবি ‘বশ’-এর রিমেক তবে হিন্দি দর্শকের বেশিরভাগই সেই ছবি দেখেননি হয়তো, আর সেই কারণেই আরও ‘শয়তান’ ছবির ট্রেলার মুক্তি থেকেই উত্তেজনা ছড়ায়। ফিল্মের প্রথমভাগ তেমনই টানটান, একেবারে সিট ছেড়ে উঠতে পারবেন না। মাধবন একেবারে ভিতর পর্যন্ত কাঁপিয়ে দেয় কিন্তু শেষ পর্যন্ত পৌঁছতে পৌঁছতে ব্যাপারটা কেমন গোলমেলে হয়ে যায়।

ছবির কাহিনি

অজয় দেবগণ তাঁর স্ত্রী ও ছেলেমেয়ের সঙ্গে নিজেদের ফার্মহাউজে ছুটি কাটাতে যাচ্ছে। রাস্তায় এক ধাবায় তাঁরা খাবার খেতে দাঁড়ায়। সেখানে মাধবন তাঁর মেয়েকে এমন কিছু খাইয়ে দেয় যাতে সে সম্পূর্ণ তাঁর বশে চলে যায়। এরপর মাধবন তাঁদের ফার্মহাউজে পৌঁছে যায় এবং তারপর যা হয় তা শিউরে ওঠার মতো। মাধবন তাঁদের মেয়েকে নিজের সঙ্গে নিয়ে যেতে চায় কিন্তু তাতে মা-বাবার সায় থাকতে হবে, এবং কীভাবে মা বাবাও মেয়েকে দান করে দেয়। ওই পরিবারের ওপর প্রবলভাবে নির্যাতন চালাতে থাকে মাধবন এবং শেষ পর্যন্ত অজয় কীভাবে নিজের পরিবারকে বাঁচায়। এবার হিন্দি সিনেমা যখন সেখানে নায়কের জয় তো হবেই, ফলে পরিবারকে বাঁচাতে পারবে সে। এটাই ফিল্মের গল্প।

কেমন এই ছবি

ফিল্মটি শুরু হওয়ার খানিকক্ষণের মধ্যেই মূল বিষয়ে উপস্থিত হয়। মাধবনের প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে আঁচ করতে পারবেন যে এবার কিছু গণ্ডগোল হবে। এবং তা শুরু হতেই হতবাক হওয়ার জোগাড় হবে। সিট ছেড়ে উঠতে ইচ্ছা করবে না। মাধবন যে অজয়ের পরিবারের ওপর নির্যাতন করবে সেই প্রত্যেকটা দৃশ্য একেবারে গায়ে কাঁটা দেওয়ার মতো। ছবির প্রথমার্ধ ভীষণ টানটান। দ্বিতীয় ভাগে যতক্ষণ মাধবন ওদের বাড়িতে রয়েছেন ততক্ষণ গল্পও ঠিক রাস্তায় এগোয়, কিন্তু ছবি যত ক্লাইম্যাক্সের দিকে এগোতে থাকে তত মনে হবে যে ভাল একটা রান্না হচ্ছিল, তাতে ভুল মশলা দিয়ে নষ্ট করে দেওয়া হল। কিছু দৃশ্য একেবারে অপ্রয়োজনীয় মনে হবে। মনে হতে পারে যে এত বড় শয়তানের সঙ্গে এমনটা কী করে হতে পারে। ফিল্মের ক্লাইম্যাক্স খানিক আলগা মনে হবে এবং যার ফলে একটা দুর্দান্ত ছবি ‘ওয়ান-টাইম ওয়াচ’ হয়ে থেকে যেতে পারে। ফিল্মে বারবার কালো জাদু ও বশীকরণের প্রসঙ্গ এসেছে এবং সেই সঙ্গে সতর্কবার্তা দেখানো হয়েছে যে এই ছবি এসব প্রচার করে না, কিন্তু গোটা ছবিটা তৈরিই হয়েছে এই বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে, ফলে কালো জাদু আদৌ আছে কি না, সেই সিদ্ধান্ত দর্শকের ওপর রইল।

অভিনয়

এই ছবির প্রাণ হচ্ছেন আর মাধবন। অজয়ের পরিবারের ওপর নির্যাতন করার দৃশ্যগুলি চোখে দেখতে সমস্যা হতে পারে। ‘রহেনা হ্যায় তেরে দিল মে’ ছবির ম্যাডি যে দর্শকের মনে নরম স্থান হয়ে রয়েছে, তাঁকে এই ছবিতে দেখে রাগ হবে। ওঁকে দেখে রীতিমতো অস্বস্তি হবে এবং সেখানেই তাঁর চরিত্রের সাফল্য। নেতিবাচক চরিত্রেও মাধবন তুখোড়। অজয় দেবগণও প্রত্যেকবারের মতো খুব ভাল। এখানেও তিনি চোখ দিয়ে অভিনয় করেন এবং এই চরিত্রের জন্য একেবারে মানানসই। অজয়ের স্ত্রীয়ের চরিত্রে জ্যোতিকা খুব ভাল। অজয়ের মেয়ের চরিত্রে দেখা গেছে জানকি বোডিওয়ালাকে। এই ছবির আসল সংস্করণ ‘বশ’-এও তিনিই এই চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন এবং দারুণ কাজ করেছেন। এই ছবির দুই মুখ্য চরিত্র বলা যেতে পারে মাধবন ও জানকিকে। অজয়ের ছেলের চরিত্রে অঙ্গদ রাজ মিষ্টি, এবং তাঁকে দেখে ভাল লাগে।

পরিচালনা

বিকাশ বহেলের পরিচালনা বেশ ভাল কিন্তু কৃষ্ণদেব যাজ্ঞিক যদি দ্বিতীয়ার্ধের চিত্রনাট্যে আরও একটু মন দিতেন তাহলে ফিল্মটা আরও ভাল হত। মাধবনকে এই ছবিতে বিকাশ যেভাবে ব্যবহার করেছেন তা প্রশংসনীয়। একজন তুখোড় অভিনেতাকে আরও ভাল একজন তুখোড় পরিচালকই করতে পারেন, এবং বিকাশ তা করে দেখিয়েছেন। ছবির ৮০ শতাংশই একটি ঘরের মধ্যে ঘটছে এবং আপনি নড়তে পারবেন না। এর গোটা কৃতিত্ব পরিচালকেরই পাওয়া উচিত কিন্তু বাকি ২০ শতাংশ আপনার আশায় জল ঢালবে এবং তার দায়ও পরিচালকেরই হওয়া উচিত।

কতটা ভয়াবহ এই ছবি

এই ধরনের ছবির ক্ষেত্রে এই প্রশ্নই আসে যে কতটা ভয়ানক এই ছবি, কিন্তু জবাব হচ্ছে যে হ্যাঁ, ভয় তো লাগবেই। যাঁদের হরর ছবি দেখতে ভয় লাগে, তাঁদের এই ছবি দেখেও ভয় লাগবে। যদি দুর্বল হৃদয় হন, তাহলে যাওয়ার আগে ভেবে নেবেন।

(Feed Source: abplive.com)