লড়াই লিঙ্গ-বৈষম্যের বিরুদ্ধে, ‘হাতিয়ার’ নারী শিক্ষার প্রসার; আজ ১০ হাজারের ‘ত্রাতা’ ‘রাস্তার মাস্টার’

লড়াই লিঙ্গ-বৈষম্যের বিরুদ্ধে, ‘হাতিয়ার’ নারী শিক্ষার প্রসার; আজ ১০ হাজারের ‘ত্রাতা’ ‘রাস্তার মাস্টার’

দীপ মজুমদার, কলকাতা : লড়াই কি তিনি জানেন। থুড়ি, ‘হাড়েহাড়ে’ বোঝেন ! তবে, থামতে শেখেননি। কঠিন পরিস্থিতিতেও তিনি অক্লান্ত। যে সংস্কারের জ্ঞান আমাদের অনেকের পাঠ্যবইয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ, মণীষীদের দেখানো সেই পথে হেঁটেই নারী শিক্ষার প্রসারে তিনি সদা সক্রিয়। চ্যালেঞ্জ আছে। প্রতি পদে পদে। সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ- অর্থ। তা সত্ত্বেও তিনি থেমে যাননি। কারণ, লক্ষ্য স্থির পশ্চিম বর্ধমানের জামুড়িয়ার (Jamuria) নন্ডী গ্রামের বাসিন্দা দীপ নারায়ণ নায়েকের (Deep Narayan Nayak)। মহিলাদের মধ্যে আরও বেশি করে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিয়ে সমাজ থেকে লিঙ্গ-বৈষম্য দূর করতে চান তিনি। নিজের জীবন থেকেই মিলেছে সেই অনুপ্রেরণা। তাঁর লড়াইয়ের কাহিনি সকলকে উজ্জীবিত করতে পারে। তাই, তো আজ বিশ্বমঞ্চে সমাদৃত ‘রাস্তার মাস্টার’ (Raster Master)। এবিপি লাইভে একান্ত সাক্ষাৎকার তিনি জানালেন তাঁর এহেন কাজের অনুপ্রেরণার কথা, চ্যালেঞ্জের কথা, কী তাঁর লক্ষ্য…সবকিছু। আবেদন জানালেন, পাশে থাকারও।

প্রশ্ন : কীভাবে যাত্রা শুরু ? পিছিয়েপড়া-অনগ্রসর শ্রেণির বাচ্চা-মা-বাবাদের কাছে শিক্ষার আলো পৌঁছে দেওয়ার চিন্তাটা এল কোথা থেকে ?

দীপ নারায়ণ নায়েক : যখন ছোট ছিলাম, আমার বাবা দিনমজুরের কাজ করতেন। সকালে একটা কাজ করতেন, আর সন্ধের দিকে নাইট গার্ডের কাজ করতেন। আমার চার দিদি, আমি এক ভাই। বাড়িতে আমরা পাঁচজন। দাদু-দিদার একটু শারীরিক সমস্যা ছিল। বড় পরিবার । বাবার একার পক্ষে পুরো পরিবারটা চালানো অনেক বেশি সমস্যাজনক হয়ে যেত। আমি যখন ছোট ছিলাম কখনোই নিজের পড়ার জন্য নতুন বই পাইনি। নতুন ড্রেস পাইনি। সবসময় লোকের পুরনো জিনিস নিয়ে আমার চলেছে। আমি নিজেও তিনবার ড্রপআউট হয়েছি। গ্র্যাজুয়েশনে একবার ফেল করে গেছি। কারণ, সেই সময় বাড়ির এমন অবস্থা, আমাকেও সমস্ত কাজ করতে হত। নিজে সকালে টিউশন করতাম। অন্যান্য দিনমজুরের কাজ করতাম। আর রাতে ক্যাটারিংয়ের কাজ করতাম। তারপর এমএসসি করার আগে ড্রপআউট হয়ে যাই। নিজে যেটুকু টাকা জোগাড় করতে পারি, সেই টাকা নিয়ে আমি এমবিএতে ভর্তি হই। কিন্তু, এক বছর করার পর টাকা শেষ হয়ে যায়। আবার টাকার অভাবে ড্রপআউট হতে হয়। জীবনে কঠিন লড়াই করেছি। চোখের সামনে দেখেছি। একসঙ্গে পাঁচজনে বাড়িতে পড়াশোনা করতাম, তখন বাবার একার পক্ষে চালানো সম্ভব ছিল না। তাই, আমার মেজো দিদি মাধ্যমিক পরীক্ষার আগে আগেই পড়াশোনা ছেড়ে দেন। লোকের বাড়িতে সহযোগিতার কাজে যোগ দেন। আমার সেজো দিদিও উচ্চ মাধ্যমিকের সময় পড়াশোনা ছেড়ে দেন। লোকের বাড়িতে কাজ করতে বাধ্য হন। কেননা, বাড়িতে টাকার অভাব। এরকমভাবে আমার জীবন। আমি এমনিতে পড়াশোনায় ভাল ছিলাম। কিন্তু যত বড় হতে থাকলাম, টাকার অভাবের জন্য একটা সমস্যা তৈরি হতে থাকল। বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার চেষ্টা শুরু করলাম। প্রাইমারি টিচারের পরীক্ষা দিয়ে পেয়ে যাই। চাকরিতে যাই। গ্রামে পোস্টিং হয়। তার আগেও আমি যখন টিউশন পড়াতাম তখন ছাত্রদের দেখেছি, তাদের যেরকম সমস্যা-কষ্ট ছিল, বহুজনকে বিনামূল্যে পড়িয়ে দিতাম। অনেককে বই-খাতা কিনে দিতাম। সহযোগিতা করতাম। স্কুলে যখন গেলাম, তখন দেখলাম সেই একইরকম অবস্থা। ওদেরও খুব খারাপ অবস্থা। একদিন একটা বাচ্চা মেয়ে স্কুলে এসেছে। কোনওমতে ব্যাগ খুলছে না। সবাই লিখছে। তখন অন্যান্য শিক্ষকরা তাকে বকছেন। তখন আমি ওর কাছে গেলাম। ব্যাগটা খুলে বইগুলো বের করতে যাব তো দেখি, ব্যাগের ভেতরে কোনো কিছু নেই। তখন সে খুব কাঁদছে। বলছে, মা-কে বলেছি স্লেট কিনে দিতে। কিন্তু, মা স্লেট কিনে দিচ্ছে না। রোজ বলে কিনে দেব । ওরা দুই বোন ছিল। সেইসময় আমার অতীতটা আমার কাছে এল। তখন ভাবলাম, আমি ছোট ছিলাম। তাই নিজের দিদিদের জন্য কিছু করতে পারিনি। কিন্তু, আজ আমার সময় এসেছে। তাই আমাকে কিছু না কিছু করতে হবে। সেই দু’জনকে নিয়ে রাস্তার ওপরে পড়ানো শুরু করলাম। তাদের নতুন বই-খাতা-স্লেট দিলাম। ধীরে ধীরে অন্যান্য ছাত্ররাও পড়তে থাকল। কিন্তু, অসুবিধা শুরু হল যখন শ’য়ে শ’য়ে বাচ্চারা আমার কাছে পড়তে এল। কারণ, অতজনকে বই-খাতা দেওয়াটা আমার পক্ষে একটু কঠিন হয়ে দাঁড়াল। তখন ভাবতে হল, আর্থিক দিক দিয়ে কীভাবে বিষয়টিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে। তখন তাদের স্কুলের মেঝে, ক্লাবঘরে পড়ানো শুরু করলাম। কিন্তু, বিকালের দিকে সেখানে সবাই খেলাধূলা করত। তাই অসুবিধা হত। সেখান থেকে বেরিয়ে গিয়ে গাছের নীচে পড়ানো শুরু করলাম। কিন্তু, সেখানেও সমস্যা শুরু হল। কীট-পতঙ্গ কামড়ে দিল বাচ্চাদের। সেখান থেকে রাস্তা-বাড়ির উঠোনে চলে গেলাম। তাদের দেওয়ালেই প্রথমে ব্ল্যাকবোর্ড করলাম। প্রথমে বড় বড়। তারপর ছোট করলাম। তারা নিজেদের দেওয়ালেই পড়াশোনা শুরু করল। কয়েক বছর যাওয়ার পর বুঝলাম, শুধু এদের পড়ালে হবে না। এদের মা-বাবাকেও শিক্ষিত করার প্রয়োজন। কারণ, যখনই মেয়েরা ১২-১৪ বছরের হয়ে যাচ্ছে তখনই তাদের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আবার ছেলেরা পড়াশোনা ছেড়ে দিনমজুরের কাজ করছে। এরকম সমস্যা ছিল। এই সমস্যাগুলোর বিষয়ে তাদের বাবা-মায়েরা অতটা সতর্ক ছিলেন না। তাই, তাঁরা ব্যাপারাটা গুরুত্ব দিতেন না। তখন ভাবলাম, মা-বাবাদেরও শিক্ষিত করা প্রয়োজন। সেই থেকে মাথায় এল, Three Generation Learning Model। তিনটি প্রজন্মে শিক্ষা। ছোট বাচ্চা প্রথমে পড়াশোনা করে। তারপর সে তার মা-বাবাদের পড়ায়। তারপর দাদু-দিদাদের পড়ায়। সাধারণত যেটা হয়, বড়রা ছোটদের পড়ায়। কিন্তু, এই জাতীয় যেসব আদিবাসী বা পিছিয়েপড়া জনজাতির বাচ্চা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে একটা ৫ বছরের মেয়ে তার ৫০ বছরের মা-কে পড়াচ্ছে। তাহলে মা-বাবারা কি কিছু শেখায় না ? মা-বাবারাও শেখায়। তারা তাদের পুরনো ঐতিহ্য-সংস্কৃতি ছেলে-মেয়েদের শেখায়। তার ফলে, একদিকে যেমন বাবা-মায়েরা প্রথাগত শিক্ষাটা পাচ্ছে ছেলে-মেয়েদের কাছে। তেমনি অন্যদিকে, ছেলে-মেয়েরা নিজেদের ঐতিহ্য-সংস্কৃতির কথা জানতে পারে বাবা-মায়েদের কাছ থেক। এভাবে বিলুপ্তপ্রায় সংস্কৃতি বেঁচে যায়। এভাবে শিক্ষা ও সংস্কৃতির মেলবন্ধনে পুরো পড়াটা হয়।

প্রশ্ন : এরকম একটা কাজের অনুপ্রেরণা কী ?

দীপ নারায়ণ নায়েক : আমার মোটিভেশন বলতে উঠে আসে লিঙ্গ-বৈষম্যের বিষয়টি। আমি পুরুষ বলে যখন ছোট ছিলাম বাড়িতে মনে করল যে ছেলেটাকে তো পড়াতেই হবে। সেইজন্য আমি ড্রপআউট হয়েও কোনওমতে পড়াশোনার মধ্যে থাকতে পেরেছি। কিন্তু পরিবার চালানোর জন্য আমার দিদিদের লোকের বাড়িতে কাজ করে যেতে হয়েছে। তারা বঞ্চিত হয়েছে। তাই আমি মূলত নারী শিক্ষার ওপর বিশেষভাবে জোর দিই। আমার নীতি- মহিলাদের আরও আগে নিয়ে যেতে হবে। লিঙ্গ বৈষম্য দূর করতে হবে। এটাই আমার এখন মূল ফোকাস। আমি যখন ইউনেস্কোতে গিয়েছিলাম, ওখানে একটা সাক্ষাৎকার হয়েছিল। তা তাদের ওয়েবসাইটে রয়েছে। ওরা আমার ক্যাটেগরিটা- লিঙ্গ বৈষম্যের ওপরই রেখেছে। শিক্ষা কী করে ? আমার যখন জ্ঞান চলে আসবে তখন আমার অধিকারটা বুঝতে পারব। কী আমার করা উচিত, কী আমার করা উচিত নয়। কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল তা বোঝা যায়। শিক্ষার আর একধাপ ওপরে হচ্ছে- লিঙ্গ বৈষম্য। যখন সে নিজের অধিকার জেনে যাবে তখন সে বুঝবে অন্যের অধিকার খর্ব করা যাবে না। এটা আমার স্বাধীনতা, ওটা ওর স্বাধীনতা। সেজন্য শিক্ষার একধাপ ওপরে লিঙ্গ-বৈষম্য। আর তার একধাপ ওপরে হচ্ছে- বিশ্ব শান্তি। এখন আমি মূলত- লিঙ্গ বৈষম্যের বিরুদ্ধে বেশি কাজ করছি। আজ সকলের আশীর্বাদে উত্তরবঙ্গ থেকে শুরু করে একেবারে দক্ষিণবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড থেকে শুরু করে বাংলাদেশ পর্যন্ত ‘রাস্তার মাস্টারের’ কাজ চলছে। ৬০-৭০টি মতো গ্রামে এই কাজ ছড়িয়ে পড়েছে। আমরা আশাবাদী, ২০২৫-এ আমরা ১০০টি গ্রামকে কভার করব। ২ জন থেকে শুরু করে আজ এটা ১০ হাজারে পৌঁছে গেছে। এরকমভাবেই কাজ চলছে।

প্রশ্ন : ১০ হাজার জনের পঠন-পাঠনের দায়িত্ব ঘাড়ে ! এই ‘মহাযজ্ঞে’ আর কি কেউ আপনার সঙ্গে সামিল হয়েছে ?

দীপ নারায়ণ নায়েক : আমার অনেকগুলো মডেল আছে। যেমন – তিনটি প্রজন্মের শিক্ষার মডেল। যেখানে তিনটি প্রজন্ম একসঙ্গে শিক্ষিত হচ্ছে। Door Step Education Model-এ বাচ্চা যেমন নিজের দরজায় পড়বে, তেমনি শিক্ষকও নিজের দরজায় পড়াবেন। যেমন- আমি তো বাংলাদেশে গিয়ে পড়াতে পারব না। ওখানকার মানুষদের নিজস্ব কিছু ঐতিহ্য আছে। সেখানে আমি যদি একটা বাচ্চা মেয়েকে পড়াই, তাহলে সে তার মা এবং তাঁর আগের প্রজন্মকে সেই শিক্ষা পৌঁছে দিতে পারবে। যা সহজেই সম্ভব। দূরের স্কুলে যাওয়াটাও সমস্যার হয়ে যায়। সেজন্য সেখানে যাঁরা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পার করছেন, তাঁরা এটার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। তাঁরাই এক একটা গ্রামকে শিক্ষিত করার জন্য ‘রাস্তার মাস্টারের’ সঙ্গে থেকে কাজ করছেন। তাঁদের জন্য আমরা অনলাইন ও অফলাইন আলাদাভাবেল প্রশিক্ষণও দিচ্ছি। তাঁদের দেখাচ্ছি, আমাদের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা কীভাবে সফল হচ্ছে। কী মডেলে পড়াতে হবে। যেমন- কোনো ৫০ বা ৬০ বছরের মহিলাকে পড়ানো হবে তার জন্য তো কোনও পাঠ্যক্রম নেই। কিন্তু, একজন ৬০ বছরের মা জীবনে প্রথম বর্ণপরিচয় পড়ছেন, তাঁর জন্য কী কারিকুলাম হবে, তার জন্য কী সাইকোলজি হওয়া উচিত, কী প্রশিক্ষণ থাকা উচিত- এসব বিষয় কিন্তু কোথাও নেই। এটা একেবারে বিশ্বে প্রথম কাজ হচ্ছে। আমি মনে করি, শিক্ষাকে কোনো কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে বেঁধে রাখা যাবে না। সীমানা ভাগ করা যায়। কিন্তু, শিক্ষা ভাগ করা যায় না। সেজন্য পৃথিবীর যেখানেই কোনও জনজাতি, পিছিয়েপড়া শিশু বা মা থাকবে, যে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন তাঁকে শিক্ষা দেওয়ার পথে নিয়ে যাব। এটা শুরু হয়েছে এখান থেকে। আগামীদিনে নেপাল, ভুটান, মায়ানমার, উগাণ্ডা, আফগানিস্তান…বিভিন্ন জায়গায় আমাদের কথাবার্তা চলছে। আমরা আশাবাদী, ২০২৫ সালের মধ্যে আন্তত ১০টি দেশে এই কাজটি করে উঠতে পারব। কারণ, রিসোর্সের অভাব নেই। ছাত্ররা রয়েছে। প্রচুর মানুষ রয়েছেন যাঁরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। এখানে খরচের কোনো ব্যাপার নেই। আর সময়সাপেক্ষ।
আমার বিভিন্ন দেশে বন্ধু রয়েছে। যাঁরা ইংরেজি বোঝেন, তাঁদের সঙ্গে ইংরেজিতে কথা বললাম। যাঁরা ইংরেজিটাও বোঝে না সেইসব দেশে আমার যে বন্ধুরা রয়েছেন, তাঁদের নেওয়া হয়। সেখানে যাঁরা কাজ করবেন, তাঁদের অনলাইনে মিটিং করে বন্ধুর মাধ্যমে বোঝানো হয়। তাঁরা যদি বুঝে যান, তাহলে আর ভাষাগত কোনো সমস্যাও থাকে না।

প্রশ্ন : কোভিডের সময় কীভাবে পাঠদান করেছেন ?

দীপ নারায়ণ নায়েক : কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে কাজ করাটা চ্যালেঞ্জিং। তবে, আমি যেহেতু দীর্ঘদিন কাজ করছি, তাই পুলিশ-প্রশাসনের অনেক আধিকারিক এসে আমার কাজটা দেখে গেছেন। কোভিডের আগের কথা। তাই সকলেই জানত, আমি এজাতীয় কাজ করি। কোভিডের সময় শুধু পড়াশোনা নয়, পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে প্রথম পঞ্চায়েত ও পুর এলাকায় স্কুলস্তরে কমিউনিটি কিচেন করেছিলাম। পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে প্রথম। হয়তো কেউ কেউ কমিউনিটি কিচেন অন্য জায়গায় করেছেন। কিন্তু, স্কুল স্তরে কমিউনিটি কিচেন কেউ করেনি। সেইজন্য সবাই জানত যে আমি এজাতীয় কাজ করি। প্রশাসনের তরফে আমাকে জানানো হয়েছিল, কাজ করছি ঠিক আছে, কিন্তু সাবধানে করতে। একজন বাচ্চা থেকে অন্য বাচ্চার দূরত্ব রাখতে হবে এবং বদ্ধ ঘরের মধ্যে পড়ানো যাবে না। সরকারের প্রত্যেকটি নির্দেশ মানা হয়েছে। প্রত্যেক বাচ্চাকে করোনাকালে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেওয়া হত, মাস্ক দেওয়া হত। তাদের সাবান দেওয়া হত। যাতে তারা বাড়ি গিয়ে ভাল করে হাত ধুতে পারে।

প্রশ্ন : ঝড়-বৃষ্টি-রোদে কীভাবে সামলান ?

দীপ নারায়ণ নায়েক : এসব সময়ে একটু অসুবিধা তো হয়। সেইসময় যাঁদের বড় জায়গা থাকে বা ক্লাবঘরে বা গ্রামে কারো বড় বাড়ি থাকলে সেখানে ব্যবস্থা করা হয়। এটা একটু চ্যালেঞ্জিং। তবে, কিছু না কিছু ব্যবস্থা হয়ে যায়। এখন বর্ধমান, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বীরভূম, জলপাইগুড়ি, সুন্দরবন, ঝাড়খণ্ড, বাংলাদেশের ফরিদপুর, ঢাকাতেও চলছে কাজ।

প্রশ্ন : কাজের জন্য আপনি বিশ্বমঞ্চে সমাদৃত হয়েছেন। সেপ্রসঙ্গে কিছু বলুন ?

দীপ নারায়ণ নায়েক : Global Teacher Prize 2023 (ইংল্যান্ডের Varkey Foundation, UNESCO ও Dubai Cares-এর যৌথ উদ্যোগে এই পুরস্কার দেওয়া হয়) পেয়েছি। ৪২তম জেনারেল অ্যাসেম্বলিতে প্যারিসে UNESCO-র হেড কোয়ার্টারে এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল। আমাকে সেখানে ডাকা হয়েছিল। আমি সেখানে গিয়েছিলাম। ১০ জন ফাইনালিস্টের মধ্যে ছিলাম। ভারতে থেকে শিক্ষক হিসাবে ছিলাম। বিশ্বমঞ্চে ভারতের মুখ উজ্জ্বল করার চেষ্টা করেছি। সেখান থেকে আমাদের গোল্ড মেডেল, সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে। যেটা দেশের জন্য অনেক বড় একটা বিষয় বলে মনে করি।

তবে, আজ লড়াইটা অনেক বড় হয়ে গেছে। কারণ, বেড়েছে সংখ্যার বহড়। এই পরিস্থিতিতে কেউ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলে কাজ আরও অনেক মসৃণভাবে এগোবে। কয়েক লক্ষ টাকা ঋণের বোঝা নিয়েই শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন রাস্তার মাস্টার। কারণ, বিভিন্ন বিষয় ছাড়াও, রাস্তার মাস্টারের উদ্যোগে অপুষ্টির ওপর কাজ হয়। ছাত্র-ছাত্রীদের- দুধ , পাউরুটি, কলা, বিভিন্ন ঋতুতে বিভিন্ন খাবার দেওয়া হয়। এত বাচ্চাকে ম্যানেজ করা চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে । সমস্ত কিছু তাঁকেই জোগাতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে তিনি আশা করছেন, কেউ এগিয়ে আসবেন। বিভিন্ন জায়গায় যাওয়া আসাটাও আর্থিক বোঝার অন্যতম কারণ। অথচ, সর্বত্র শিক্ষার আলো প্রসারে তিনি নিবেদিত, অক্লান্ত।

‘রাস্তার মাস্টার’-এর সঙ্গে যোগাযোগ করা যেতে পারে এই নম্বরে- 09732129445

(Feed Source: abplive.com)