যুদ্ধবিধ্বস্ত প্যালেস্তাইনে শিক্ষার আলো দেখাচ্ছে AI Teachers, সৌজন্যে Otermans Institute

যুদ্ধবিধ্বস্ত প্যালেস্তাইনে শিক্ষার আলো দেখাচ্ছে AI Teachers, সৌজন্যে Otermans Institute

কলকাতা: মুড়িমুড়কির মতো বোমা-গুলি আছড়ে পড়ে অনেক কিছু তছনছ করে ফেলেছে। তবু যুদ্ধবিধ্বস্ত প্যালেস্তাইনি পড়ুয়াদের লেখাপড়া পুরোপুরি থমকে যায়নি। নিয়ত, তাঁদের অনেকের জন্য পঠনপাঠনের বিষয়বস্তু তৈরি করা, ক্লাস নেওয়া এবং মূল্যায়ন–এককথায় একজন শিক্ষকের যা যা কাজ, তার সবটা পালন করে চলেছে ‘ওরা’। ‘ওরা’ মানে ‘আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স টিচার্স।’ সোজা বাংলায়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি এমন শিক্ষক, ‘যাঁকে’ দেখতে-শুনতে পুরোপুরি মানুষের মতো। কিন্তু আদতে সে প্রযুক্তির কারিকুরি মাত্র। এমন ‘আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স টিচার্স’-র তৈরি করে প্যালেস্তাইনি পড়ুয়াদের মধ্যে শিক্ষার আশাটুকু বাঁচিয়ে রেখেছেন Otermans Institute-র প্রযুক্তিবিদেরা।

বিশদ…
লন্ডনের Otermans Institute একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা। এটির দুই সহ-প্রতিষ্ঠাতা, ডক্টর পল্ডি ওটরম্যানস এবং দেব আদিত্য বললেন,’আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে বিশ্বের ৪০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য স্থির করেছি। তবে পাশাপাশি, এটিও খেয়াল রাখছি যে যাঁদের এই পরিষেবা নেওয়ার মতো সামর্থ্য নেই, তাঁদের কাছেও এটি পৌঁছে দেওয়া যায় কিনা।’ প্যালেস্তাইনে গত নভেম্বর থেকে AI Teachers-র পরিষেবা দিতে শুরু করেছে Otermans Institute। এবং সেখানে নিখরচাতেই এই পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে, জানালেন সংস্থা কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি, কেনিয়া এবং জাম্বিয়ার মতো দেশে অল্পবয়সি মেয়েদের পাশে দাঁড়াতেও হাত বাড়িয়ে দিয়েছে Otermans Institute।

প্যালেস্তাইনে যে ভাবে পঠনপাঠন…
হামাস-ইজরায়েলের সংঘর্ষ শুরু হয় গত অক্টোবরে। তার পরের মাস থেকে প্যালেস্তাইনের বিভিন্ন জায়গায়  AI Teachers-কে পৌঁছে দেওয়ার কাজ শুরু হয়ে যায়। এখন, দস্তুরমতো ‘নাইন-লেসন মডিউল’ পড়াচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় তৈরি ‘শিক্ষকরা’। এরা যে শুধু মানুষের মতো কথা বলতে ও শুনতে পারে, তা-ই নয়। আর পাঁচটা ক্লাসরুমে যেমন কোনও সমস্যা হলে আমরা সে সম্পর্কে শিক্ষককে জিজ্ঞাসা করি বা তা নিয়ে ক্লাসে আলোচনা হয়, ঠিক সেই ভাবেই আলোচনা করতে পারে এই AI Teacher। অর্থাৎ এখানে পঠনপাঠন আর একপেশে নয়। প্রযুক্তিগত ভাবে এমন ভাবেই এই শিক্ষকদের তৈরি করা হয়েছে যাতে পড়ুয়াদের সমস্যা বুঝে সেই মতো আলোচনাও করতে পারে তারা। শুধু তাই নয়। পড়ুয়াদের লেখাপড়ার জন্য কী ভাবে উৎসাহ জোগাতে হয়, এরা সেটিও জানে। প্যালেস্তাইনের এক পড়ুয়াই যেমন বললেন, ‘অর্গানাইজেশনাল স্ট্র্যাটেজি এবং প্রবলেম সলভিং নিয়ে অত্যন্ত বিশদ ও গভীরে বোঝাতে পারে এই শিক্ষকরা। পাঠ্যবস্তুই যে শুধু চোখ খুলে দেওয়ার মতো ছিল, তা নয়। যে ভাবে সেই ভাবনাচিন্তা বোঝানো হয়েছে, তাও অসাধারণ।’
এই উন্নত মানের AI Teacher তৈরির নেপথ্য়ে OIAI নামে একটি অত্যন্ত উন্নত ‘ল্যাঙ্গুয়েজ’-র হাতযশ রয়েছে। ‘OIAI’ Otermans Institute-রই তৈরি করা একটি ল্যাঙ্গুয়েজ। এটি এমন ভাবেই তৈরি করা হয়েছে যাতে পড়ুয়াদের মূল্যায়ন ও তাঁদের গ্রেড দেওয়ার পাশাপাশি একেবারে ব্যক্তিগত স্তরে, তাঁদের প্রয়োজন-অপ্রয়োজন বুঝে পরামর্শ দিতে পারে। নির্মাতাদের বক্তব্য, বাকি AI টিচিং মডেলের থেকে এখানেই আলাদা ‘OIAI’।

বর্তমানের ছবি এক ঝলকে…
প্যালেস্তাইনের ‘হাসিব সাবাঘ আইটি সেন্টার অফ একসেলেন্স’-র তরফে রাদওয়ান মোসা বলেন, ‘গত ১৪ মার্চ থেকে আর এক দল পড়ুয়া এই আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স প্রোগ্রামে পঠনপাঠন শুরু করেছে।’ তাৎপর্যপূর্ণভাবে, বিশ্বের বাকি অংশে যেখানে ফ্রি ডিজিটাল অনলাইন কোর্স শেষ করার গড় হার ৭-১০%, যুদ্ধবিধ্বস্ত প্যালেস্তাইনে সেই হার ৬৪%। এভাবে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে পারে খুশি  ডক্টর পল্ডি ওটরম্যানস। বললেন, ‘শিক্ষা ও সঠিক দক্ষতায় শান দেওয়া কোনও বিশেষাধিকার হতে পারে না। এটা সকল পড়ুয়ার অধিকার হওয়া উচিত।’ Otermans Institute-র ম্যানেজিং ডিরেক্টর দেব আদিত্যর কথায়,’প্য়ালেস্তাইনের পড়ুয়াদের পড়ানো এখনও পর্যন্ত আমাদের সবথেকে ভাল অভিজ্ঞতা।’আরব আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘হাসিব সাবাঘ আইটি সেন্টার অফ একসেলেন্স’-র প্রোজেক্ট ম্যানেজার রাদওয়ান মোসার মতে, ‘…এই উদ্য়োগ এখানকার পড়ুয়াদের প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজারের জন্য তৈরি করে।’পড়ুয়াদের মধ্যেও যথেষ্ট ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া। কেউ বলছেন, ‘এখানে যা যা শিখলাম, ভবিষ্যতে চাকরি পেতে কাজে দেবে।’ কারও আবার বক্তব্য, ‘নিজেকে উন্নত করতে দারুণ ভাবে কাজে দিয়েছে এটি।’
মানুষ হোন বা প্রযুক্তি, শিক্ষক মানেই আশার আলো। যুদ্ধের মধ্যেও শেখার ইচ্ছা। Otermans Institute-র হাত ধরে সেটি আরও ভাল করে বুঝিয়ে দিচ্ছে AI Teachers।

(Feed Source: abplive.com)