কলেজ জীবনে হারান বাবাকে, পাঁচবার ব্যর্থতা ! তবুও শেষ হাসি ওঙ্কারের

কলেজ জীবনে হারান বাবাকে, পাঁচবার ব্যর্থতা ! তবুও শেষ হাসি ওঙ্কারের

কলকাতা:  রবার্ট ব্রুসের কথা সবাই জানে। হেরে যাওয়ার ভয়ে, যুদ্ধের ময়দান ছেড়ে যেতে নেই। আশা হারাতে নেই। যে শিক্ষা তিনি পাহাড়ের গায়ে মাকড়সার জাল বোনা দেখে শিখেছিলেন। সাতবারে জিতেছিলেন। এই গল্প অনুপ্রেরণা জোগায় হার না মানা অনেককেই। আজকের প্রতিবেদন এমন একজনকে নিয়ে, যিনি WBCS ৫ বার মেইনস ক্লিয়ার করেও, শেষ ধাপে মুখ থুবড়ে পড়েছেন। তবুও হার মানেননি। আজ এরাজ্যেরই একজন সফল WBCS অফিসার তিনি। ওঙ্কারনাথ দত্ত। কীভাবে পড়ে যেতে যেতে ঘুরে দাঁড়ানো তাঁর, সেই কথাই জানাতে এবিপি লাইভ-কে তিনি দিলেন বিশেষ সাক্ষাৎকার।

কঠিন অধ্যবসায়েই সাফল্য, জেনেও অনেকে কেন যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে চলে যান ?

WBCS পরীক্ষায় প্রায় প্রতিবারই বহু ছাত্র-ছাত্রী পরীক্ষা দেন। প্রিলিমিনারি ধাপ পর্যন্ত যান অনেকেই। কিন্তু, তারপরেও অপেক্ষা আরও দুই ধাপের। মেনস এবং পার্সোনালিটি টেস্ট। যারা মেনস ক্লিয়ার করেন, তার মানে এই নয় যে, শেষ ধাপটা সহজ হবে। কিংবা ভাবনা মিলে যাবে। এখানে কোনও শর্টকার্ট নেই। একমাত্র কঠোর অধ্যবসায়ই সাফল্যের চাবিকাঠি। এসব কথাই সবার জানা। তারপরেও অনেকে যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে চলে যান। কেন ? এর নানাবিধ কারণ রয়েছে। এক বয়স। দুই ধৈর্য। অনেকেরই পরীক্ষা দিতে দিতে বয়স পেরিয়ে যায়। এদিকে সাফল্য না আসলেও সংসারের দায়িত্বভার ঘাড়ের উপর এসে পড়ে। এদিকে মন পড়ে থাকে সেই WBCS-এ। বয়সসীমাও পার হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে অন্য পেশা বেছে নিতে হয়। তেমন পরিস্থিতি এসেছিল ওঙ্কারের জীবনেও।

‘তখন আমার বয়স ৩৩..’

দক্ষিণ দিনাজপুরের বাসিন্দা ওঙ্কারনাথ দত্ত। গঙ্গারামপুর হাইস্কুলে পড়াশোনা করেছেন। এরপর ভূগোল নিয়েই উচ্চশিক্ষার পথে এগিয়ে যান তিনি। বেলঘরিয়ার ভৈরব গাঙ্গুলি কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশনের পর সারেন, মাস্টার্স। এই অবধি সব ঠিকই ছিল। আচমকাই এরপর মাথার উপরের ছাদ সরে যায়। বাবাকে হারান তিনি। এদিকে  দু’হাজার বারো সালে মাস্টার্সের পর এক অসীম সমুদ্র সামনে। দু’চোখে স্বপ্ন তাঁর যে,  WBCS এর বড় অফিসার হবেন। সেই শুরু। তবে বাবাকে হারানোর পর, দাদা দূরে থাকলেও, সবসময়ই তাঁর পাশে থেকেছেন। ২০১৪ থেকে চাকরির পড়াশোনা শুরু। ২০১৫ সালেই WBCS মেইনস ক্লিয়ার করেন তিনি। কিন্তু, পার্সোনালিটি টেস্ট -এ গিয়ে আটকে যান। পরপর ৫ বার WBCS মেনস ক্লিয়ার করেছেন তিনি। কিন্তু শেষটায় বারবার এসেছে ব্যর্থতা। ঠিক এই সেই সন্ধিক্ষণ, যেসময়টাই অনেকে হাল ছেড়ে দেন। হার মেনে। কারণ, ওঙ্কারের কথায় , “তখন আমার বয়স ৩৩। চারিদিকে সব বন্ধুদের চাকরি হয়ে গিয়েছে। এদিকে আমার হয়নি। স্বাভাবিকভাবেই নেমে আসে অসীম শূন্যতা। তারপর ?”

Success Story: কলেজ জীবনে হারান বাবাকে, পাঁচবার ব্যর্থতা ! তবুও শেষ হাসি ওঙ্কারের

 ৫ বার WBCS-এ ব্যর্থতা, বেকারত্বের জ্বালা, তারপর..

সাল ২০২০। ষষ্ঠবার মেইনস ক্লিয়ার করেছেন তিনি। তবুও হাতছানি দেয় পিছনের ফেলে আসা ব্যর্থতার পাহাড়। কীভাবে ? ঠিক কীভাবে তিনি পেরোবেন সেই পাহাড় ? আরও একবার কি ব্যর্থ হবেন ? নিজেকে সত্যিই কি এত সময় দেওয়া যায় ? অবশেষে এই দ্বন্দ্বের মাঝেই ওঙ্কার জানিয়েছেন, ‘আমি এরপর যে কী করব, খানিকটা দিশেহারা। কারণ যে ভুগোল নিয়ে পড়াশোনা করেছি। তা থেকে অনেকটা দূরে। গত কয়েক বছরে শুধুই WBCS এর পড়াশোনা করেছি। তাই ডিগ্রি কোর্সে যে পড়াব সেই ভরসাও পুরো পাচ্ছি না। এদিকে এতবছর একটানা বসে আছি..’, প্রাইভেট সেক্টরেও আসে বাধা ওঙ্কারের জন্য। এখানে অন্যতম আরও এক যন্ত্রণা হয়ে দেখা দেয় তার জীবনে। কারণ ২০২০ হল সেই বছর, যেবছর এসেছিল কোভিড পর্ব। পরপর এসেছে তিনটে ঢেউ। অবশেষে, ২০২৩ সালে PSC পরীক্ষায় বসেন ওঙ্কার। সেখানেও শেষ অবধি ব্যর্থ হন তিনি। বেকারত্বের জ্বালা পুড়িয়ে খাক করে দিতে থাকে তাঁকে।

তেইশের শেষ বদলাল সময়

তবুও হার মানেননি ওঙ্কার। ২০২৩ সালই শেষ অবধি তাঁকে জয় এনে দেয়। তেইশ সালেই ফল বেরোয় WBCS 2020-র। তাঁর জেদ আর ধৈর্যই তাঁকে জিতিয়ে দেয়। মেনস ক্লিয়ারের পর ইন্টারভিউতেও সফল হন তিনি। ২০২৪ তাঁর জীবনে আশীর্বাদ। চলতি বছরেই Assistant Commercial Tax Officer -পদে কাজে যোগ দিয়েছেন ওঙ্কারনাথ দত্ত। বর্তমানে তিনি উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বাসিন্দা।  ওঙ্কারের কথায়, ‘আমি একদম মধ্যম মানের ছাত্র। প্রথমেই একটা লক্ষ্য সেট করে নিতে হবে, সরকারি চাকরি, সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তিন চার বছর পর না হলে অনেকেই হাল ছেড়ে দেয়। হাল ধরে রাখা খুব কঠিন কাজ।’ অতএব জয়ী হতে গেলে কোনওভাবেই যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে গেলে চলবে না। অন্ধকারের শেষটাতেই যে আছে আলো, তা মেনে লড়াইয়ে থাকতে হবে। ওঙ্কার জানিয়েছেন, সাবজেক্ট বুঝে বই পড়তে হবে। ধারাবাহিকভাবে বই পড়ে যাওয়ার বিকল্প নেই। তবে সমকালীন পরীক্ষার্থীদের জন্য তিনি অনলাইনে পড়াশোনাকেও প্রাধান্য দিয়েছেন।

Success Story: কলেজ জীবনে হারান বাবাকে, পাঁচবার ব্যর্থতা ! তবুও শেষ হাসি ওঙ্কারের

পাহাড়ে ঘুরতে ভালবাসেন, পছন্দ করেন রান্না করতেও

চাকরির পড়াশোনার মাঝে কি অন্য কোনও শখকে প্রশয় দেওয়া যায় ? ওঙ্কার জানিয়েছেন, দেওয়া যায়। দিলে স্ট্রেস রিলিফ হয়। ফাঁকা থাকলে তিনি ভ্রমণ কাহিনীর বই পড়তে ভালোবাসেন। পাহাড়ে ঘুরতে যেতে ভালবাসেন। রান্না করতেও পছন্দ করেন তিনি। তবে মায়ের হাতের খাবার পেলে কথাই নেই। রবীন্দ্রসঙ্গীত তাঁর অন্যতম পছন্দের। কঠিন অধ্যবসায়ের মাঝে সিনেমা দেখতেও ভোলেন না। তাঁর অন্যতম পছন্দের সিনেমা থ্রি ইডিয়টস।

(Feed Source: abplive.com)