প্রভাব পড়বে IMEC-I2U2 উদ্যোগে, ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধ-পরিস্থিতিতে কী ক্ষতি ভারতের ?

প্রভাব পড়বে IMEC-I2U2 উদ্যোগে, ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধ-পরিস্থিতিতে কী ক্ষতি ভারতের ?

নয়াদিল্লি : একে অপরকে লক্ষ্য করে চলছে হামলা-পাল্টা হামলা। পরিস্থিতির অবনতি হলে আরও একটি যুদ্ধের দিকে এগোতে পারে বিশ্ব। ঘটনাচক্রে অশান্তির আবহ তৈরি হওয়া এই দুই দেশ- ইরান ও ইজরায়েল (Iran Israel Conflict) উভয়ের সঙ্গেই সম্পর্ক রয়েছে ভারতের। কাজেই, এই দুই দেশের দ্বন্দ্বে প্রভাব পড়বে নয়া দিল্লির উপর। কিন্তু, কী রকম প্রভাব পড়তে পারে ? গত বছর G20 সম্মেলন হয়েছিল ভারতের সভাপতিত্বে। সেখানে ভারত-মধ্যপ্রাচ্য-ইউরোপ আর্থিক করিডর বা IMEC-র ঘোষণা হয়েছিল। লক্ষ্য ছিল, ভারতের সঙ্গে প্রথমে গল্ফভুক্ত ও পরে ইউরোপের দেশগুলিকে জোড়া। ইরান ও ইজরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়লে সেই উদ্যোগে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। প্রথমে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল ইজরায়েলর-হামাসের মধ্যে। যাতে পরে জড়িয়ে যায় ইরান। তাদের আবার লেবাননের জঙ্গিগোষ্ঠী হিজবুল্লাহর প্রতি মদত রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ভারত-ইজরায়েল-সংযুক্ত আরব আমিরশাহী-আমেরিকা (I2U2) সম্পর্ক গড়তে প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে পারে নয়া দিল্লি। এমনই মনে করছেন আমেরিকা ও ইজরায়েলে কাজ করা প্রাক্তন ভারতীয় দূত তথা বর্ষীয়ান কূটনীতিক অরুণ কে সিংহ (Former Indian Ambassador to the US and Israel Arun K. Singh)।

এবিপি লাইভের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এ কে সিংহ বলেছেন, “পশ্চিম এশিয়ায় নিজেদের প্রভাবের কথা মাথায় রেখে “সামনে এগোতে” হবে ভারতকে।” তাঁর বক্তব্য, “নিশ্চিতভাবেই, কিছু উদ্যোগের উপর প্রভাব পড়তে পারে। ভারত-মধ্যপ্রাচ্য-ইউরোপ আর্থিক করিডর, যাতে প্রথম যুক্ত সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহী হয়ে জর্ডন, ইজরায়েল এবং পরে ইউরোপের মধ্যে এই করিডর-উদ্যোগে প্রভাব পড়তে পারে। সৌদি আরব ও ইজরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিককরণের প্রক্রিয়ার উপর এটি খুব বেশি নির্ভরশীল ছিল। প্যালেস্তিনীয় ইস্যুতে প্রতিক্রিয়া ও আমেরিকার কাছ থেকে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা আশা করেছিল সৌদি আরব। এর পাশাপাশি প্রতিরক্ষা ও বেসামরিক পারমাণবিক-সম্পর্ক সংক্রান্ত প্রযুক্তিতে আমেরিকার সঙ্গে পার্টনারশিপের আশাও ছিল তাদের। সেই প্রক্রিয়া এখন ব্যাহত হয়েছে। এটা হবেও না।”

IMEC করিডরের লক্ষ্য, এশিয়া, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে সংহতি গড়ে তোলা। তাতে একাধিক স্টেকহোল্ডারকে জড়িয়ে নেওয়া এবং বর্তমানে এই উদ্যোগ একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এপ্রসঙ্গে এ কে সিংহ (বর্তমানে Carnegie-এ নন-রেসিডেন্ট সিনিয়র ফেলো) বলছেন, “যদি ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধের দ্বি-পাক্ষিক স্তরে সমাধান হয়ে যায় এবং সৌদি আরব ও ইজরায়েলের মধ্যে সমঝোতা হয়, তবেই একমাত্র IMEC পুনরুজ্জীবিত হতে পারে।” তাঁর সংযোজন, “২০২০ সালে আব্রাহাম চুক্তির পর সংযুক্ত আরব আমিরশাহী ও ইজরায়েলের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা গভীর হওয়ার আশায় I2U2 গড়ার কথা ভাবা হয়েছিল…কিন্তু এখন যদি ইজরায়েল ও প্যালেস্তাইনের মধ্যে পরিস্থিতি জটিল হয়, তাহলে আমাদের দেখতে হবে সংযুক্ত আরব আমিরশাহী কীভাবে আরব দুনিয়ার প্রতিক্রিয়াকে মূল্যায়ন করছে। এই মুহূর্তে I2U2-র প্রক্রিয়া ধীরে চলার কোনো বিষয় নেই। কিন্তু, আগামীদিনে কী ঘটে তার উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে।”

এক্ষেত্রে ভারতের বড়সড় স্বার্থ জড়িয়ে রয়েছে। কারণ হিসাবে এ কে সিংহ বলছেন, “তেহরান ও তেল আভিভের মধ্যে বাড়তে থাকা উত্তেজনার কারণে সমস্যার মুখে পড়তে পারে ভারতের জ্বালানি নিরাপত্তা ও বাণিজ্যিক বিষয়। ভারতকে বোঝাতে হবে যে এই ইস্যুতে দেশের স্বার্থ জড়িয়ে রয়েছে এবং যা চলছে তা নিয়ে ভারত রীতিমতো চিন্তিত। আমি অনুমান করতে পারছি যে, এনিয়ে ইরান, ইজরায়েল, উপসাগরীয় দেশ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্যদের সঙ্গে ভারতের অবশ্যই কথোপকথন হবে।”

ভারতের তরফে সেই উদ্যোগ দেখাও গেছে। কারণ, সিরিয়ার রাজধানী দামাস্কাসে ইরানের দূতাবাসে ইজরায়েল আকাশপথে হামলা চালানোর প্রত্যুত্তরে ইরানও ইজরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন নিক্ষেপ করেছে। তার পরই ভারতের তরফে আবেদন করা হয়েছে যাতে এই পদক্ষেপ থেকে তারা সরে আসে, সংযত হয়, হিংসার পথ থেকে গণতন্ত্রের পথে ফিরে আসে। এ কে সিংহ বলছেন, “আমাদের প্রভাবের (পশ্চিম এশিয়ায়) সীমাবদ্ধতা বুঝতে হবে। কারণ, প্রত্যেক দেশই শেষমেশ তাদের নিজেদের স্বার্থের কথা ভেবে পদক্ষেপ করবে। ভারতের অবশ্য এগিয়ে যাওয়া উচিত এবং কীভাবে পরিস্থিতি শান্ত করা যায় তা দেখা উচিত।”

(Feed Source: abplive.com)