‘সীমান্ত আলাদা, হৃদয় নয়’ – ১৯ বছরের পাকিস্তানের তরুণীর বুকে ভারতীয় হৃৎপিণ্ড!

‘সীমান্ত আলাদা, হৃদয় নয়’ – ১৯ বছরের পাকিস্তানের তরুণীর বুকে ভারতীয় হৃৎপিণ্ড!

পাকিস্তানি কন্যার বুকে ভারতীয় হৃদয়। দেশ আলাদা, সীমান্ত আলাদা, মানুষ আলাদা, ধর্ম আলাদা, কিন্তু মানবিকতা সবসময়ই একই সুতোয় গেঁথে রাখা যে কতটা প্রয়োজনীয়, তারই প্রমাণ মিলেছে গত ৩১ জানুয়ারি। পাকিস্তানের ১৯ বছর বয়সী আয়েশা রাশান পাঁচ বছর ধরে হৃদরোগে ভুগছিলেন। তাঁর হার্ট ট্রান্সপ্লান্ট করার কথা ছিল। ডাক্তাররা ছিলেন একজন হার্ট দাতার অপেক্ষায়। অবশেষে ৩১ জানুয়ারি আয়েশার সুদিন এসেছিল। তাঁর হার্ট ট্রান্সপ্লান্ট করা হয়েছে এবং এখন মেয়েটি সম্পূর্ণ সুস্থ। এই হার্ট ট্রান্সপ্লান্ট কিন্তু ভারতে হয়েছিল। আয়েশাকে দেওয়া হৃদয়টিও একজন ভারতীয়ের।

এখন কেমন আছেন আয়েশা! অন্যের হৃদয়ে কতটা স্বাচ্ছন্দ্য খুঁজে পেয়েছেন তিনি! প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে মেয়েটি জানিয়েছেন, এখন আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পারছি। আমি করাচিতে আমার স্কুলের পড়া শেষ করার পরিকল্পনা করছি। আমি একজন ফ্যাশন ডিজাইনার হতে চাই।

পাকিস্তানি আয়েশার ভারতীয় হৃদয়ের গল্প

২০১৯ সালে আয়েশা প্রথম ভারতে এসেছিলেন। এই সময়ে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট এবং হার্ট ফেইলিউরের শিকার ছিলেন তিনি। আদিয়ার মালার হাসপাতালের সিনিয়র কার্ডিয়াক সার্জন ডাঃ কে.আর. বালাকৃষ্ণন হার্ট ট্রান্সপ্লান্টের পরামর্শ দিয়েছিলেন তাঁকে। রাষ্ট্রীয় অঙ্গ রেজিস্ট্রিতে তাঁকে এর জন্য ওয়েটিং লিস্টে রাখা হয়েছিল। এরপর ডাক্তারদের থেকে একটি বাম ভেন্ট্রিকুলার, যা বাম ভেন্ট্রিকেলে রক্ত ​​পাম্প করতে সাহায্য করে, এই যন্ত্র সঙ্গে করে পাকিস্তানে ফিরে গিয়েছিলেন আয়েশা।

এরপর ২০২৩ সালে, আয়েশার হার্টের ডান দিকের অবনতি শুরু হয়েছিল। তাঁর ডান দিক কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল। আয়েশার মা সনোবর রাশান এ প্রসঙ্গে বলেছেন, মেয়েকে এভাবে কষ্ট পেতে দেখে খুবই খারাপ লেগেছিল। আমরা সার্জনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। আমাদের অস্ত্রোপচারের সামর্থ্য ছিল না। ডাক্তাররা আমাদের ভারতে আসার কথা বলেছিলেন। এরপর পাকিস্তান থেকে তামিলনাড়ুর চেন্নাইয়ের এমজিএম হেলথ কেয়ারে নিয়ে আসা হয়েছিল আয়শাকে।

এরপর ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে, ডাঃ বালাকৃষ্ণানের টিম তাঁকে বলেছিল যে হার্ট ট্রান্সপ্লান্টই একমাত্র বিকল্প। বেশ কয়েকবার হাসপাতালে যাওয়ার পর ৩১ জানুয়ারি হাসপাতাল থেকে ফোন পেয়েছিল আয়েশার পরিবার। তবে, হার্টটি ছিল ৬৯ বছর বয়সী ব্রেন ডেড ব্যক্তির, তাই অনেক সার্জন এটি ট্রান্সপ্ল্যান্ট করা নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন। শেষমেশ কোনও উপায় না দেখে অস্ত্রোপচার করেছিলেন ডাক্তাররা।

ইনস্টিটিউট অফ হার্ট অ্যান্ড লাং ট্রান্সপ্লান্ট এবং মেকানিক্যাল সার্কুলেটারী সাপোর্টের সহ-পরিচালক ডাঃ কেজি সুরেশ বলেছেন যে আমরা আংশিকভাবে ঝুঁকি নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম কারণ দাতার হার্টের অবস্থা মোটামুটি ভাল ছিলম আর আমরা জানতাম যে আয়েশার জন্য এটাই একমাত্র সুযোগ। কারণ, সমগ্র দেশে যখন কোনও সম্ভাব্য প্রাপক না থাকে তখনই বিদেশীদের জন্য হার্ট বরাদ্দ করা হয়। অবশেষে, অস্ত্রোপচার ভালোভাবে সম্পন্ন হয় এবং কয়েকদিন পর আয়েশাকে লাইফ সাপোর্ট থেকেও বের করে আনা গিয়েছিল।

এই হার্ট ট্রান্সপ্লান্ট করার খরচ হয়েছে প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকা। তাই পরিবারের কাছে প্রথমে এত টাকা দেওয়ার সামর্থ না থাকায় এনজিও ঐশ্বরিয়া ট্রাস্ট, প্রাক্তন রোগী এবং ডাক্তারদের কাছ থেকে পুলিংয়ের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ করা হয়েছিল। রাশানের পরিবার ১৭ এপ্রিল হাসপাতাল ছাড়ার আগে হাসপাতালের বিল পরিশোধ করে দিয়েছিল।

(Feed Source: hindustantimes.com)