রেকর্ড যাত্রী, এসি কামরায় ‘টিকিটবিহীনদের ভিড়’, বিয়ের সানাইতে কান ঝালাপালা রেলের

রেকর্ড যাত্রী, এসি কামরায় ‘টিকিটবিহীনদের ভিড়’, বিয়ের সানাইতে কান ঝালাপালা রেলের

এপ্রিলের প্রথম তিন সপ্তাহে ভারতীয় রেলের মোট যাত্রী সংখ্যা ছিল ৪১.১ কোটি। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে এপ্রিলের প্রথম তিন সপ্তাহের সময়কালের জন্য এটা ভারতীয় রেলের জন্য রেকর্ড বলে জানা গিয়েছে। এমনিতেই এই সময়কালে স্কুলগুলিতে গ্রীষ্মকালীন ছুটি থাকার কারণে রেলের ওপরে চাপ থাকে। পাশাপাশি এই সময়কালে বিয়ের মরশুমও থাকে। তাই সেই কারণেও রেলের যাত্রীসংখ্যায় বিশাল লাফ দেখা যায়। তবে এই বছরে অন্য বছরগুলির তুলনায় যাত্রী সংখ্যা বেশি হওয়ায় পরিষেবা প্রদানে হিমশিম খাচ্ছে রেল কর্তৃপক্ষ। আর এই আবহে বারংবার সোশ্যাল মিডিয়ায় রেল কমরার বিশৃঙ্খলার দৃশ্য ফুটে উঠেছে। কোনও কোনও ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে, এসি কামরার মেঝেতে বসে আছে প্রচুর ‘টিকিটহীন’ যাত্রী। আবার কোনও ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে, টিকিট পরীক্ষক হাতজোড় করে আছেন, কী করবেন, তা বুঝতে না পেরে। আবার কোনও ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে, সংরক্ষিত টিকিট কেটেও যাত্রী তাঁর নির্দিষ্ট আসনে বসতে পারছেন না।

উল্লেখ্য, পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ২০২৩ সালে এপ্রিলের প্রথম তিন সপ্তাহে রেলের মোট যাত্রী সংখ্যা ছিল ৩৭ কোটি। এদিকে ২০১৯ সালে এই সংখ্যাটা ছিল ৩৫ কোটি। ২০২০ থেকে ২০২২ সালে এপ্রিলের প্রথম তিন সপ্তাহে কোভিডের জন্য যাত্রী সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে কম ছিল। এই আবহে এই বছরের পরিসংখ্যান দিয়ে রেল বোর্ডের এক কর্তা জানান, ২০২৪ সালে ১ থেকে ২১ এপ্রিল ভারতীয় রেলের মোট যাত্রী সংখ্যা ছিল ৪১.১৬ কোটি। এর মধ্যে থেকে ৩.৩৮ কোটি যাত্রী ২০ এবং ২১ এপ্রিল চেপেছিলেন ট্রেনে। মূলত বৈশাখ মাসে বিয়ের মরশুম শুরু হতেই রেলের যাত্রী সংখ্যা আরও লাফ দিয়ে বেড়ে গিয়েছে। দাবি করা হচ্ছে, সাধারণত এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় শুরু হয়ে বিয়ের মরশুম জুন পর্যন্ত গিয়ে থাকে অন্যান্য বছরগুলিতে। তবে এবারে বিয়ের ‘তারিখ’ খুব কম। এই আবহে একসঙ্গে বহু জায়গায় বিয়ে আছে। আর তার জেরে যাত্রী সংখ্যায় এই লাফ লক্ষ্য করা গিয়েছে।

রেলের বোর্ডের কর্তার দাবি, বিয়ের মরশুম শুরু হতেই দিল্লি, পটনা, হাওড়া, দ্বারভাঙার মতো স্টেশনগুলিতে উল্লেখযোগ্য ভাবে যাত্রী সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে। আর এই সবের মাঝেই ট্রেনে অসংরক্ষিত টিকিটের যাত্রীও বেড়েছে। আর সাম্প্রতিক সময়ে যেভাবে পূর্ব ভারতে তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সেই সবের মাঝেই অসংরক্ষিত টিকিট কাটা যাত্রীরা জেনারেল বা নন-এসি কামরায় না গিয়ে এসি কামরা ভিড় জমাচ্ছেন। আর এই সব ঘটনার ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্রমেই ভাইরাল হয়েছে। পরিস্থিতি এমনই যে অসংরক্ষিত টিকিট কেটে ট্রেনে ওঠা মানুষজন মেঝে তো বসেই আছে, অনেক ক্ষেত্রে জায়গা না পেয়ে ট্রেনের টয়লেটে পর্যন্ত বসে থাকতে দেখা গিয়েছে যাত্রীদের। এদিকে এর জেরে অনেক সংরক্ষিত টিকিট কাটা যাত্রীদের সমস্যা হচ্ছে। অনেক টিকিটধারক নিজের আসনে বসতে পারছেন না। অনেকে আবার নিজের গন্তব্যেই পৌঁছতে পারছেন না এই সমস্যার জেরে।

কয়েকদিন আগেই, গত ১৩ এপ্রিল কইফিয়ত এক্সপ্রেসের একটি ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছিল। তাতে দেখা গিয়েছিল, এসি থ্রি টায়ার কামরায় এসে ভিড় জমিয়েছেন অসংরক্ষিত টিকিট কাটা বা টিকিটবিহীন যাত্রীরা। এদিকে কামরায় প্রবেশ করে ‘টিকিটিহীন’ যাত্রীরা দরজা বন্ধ করে দেন। যার জেরে সংরক্ষিত টিকিট কাটা যাত্রীরাই নিজেদের আসন পর্যন্ত যেতে পারেননি। সেই আবহে যাত্রীদেরকে ট্রেনের কাচ ভেঙে কামরায় প্রবেশ করার চেষ্টা করতে দেখা গিয়েছিল। এদিকে সাম্প্রতিককালে ভাইরাল হওয়া অপর একটি ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছিল, বহু যাত্রী টয়লেটের পাশে বসে আছেন।

এই পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে রেলের আধিকারিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল হিন্দুস্তান টাইমস। তবে সরকারি ভাবে কোনও আধিকারিকই কোনও বিবৃতি দেননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রেল আধিকারিক দাবি করেন, ১৩ এপ্রিল যে ভিডিয়োটি ভাইরাল হয়েছিল, সেটি আসলে পুরনো দিল্লি থেকে ছেড়ে যাওয়া আজমগড়গামী ট্রেন। সেই ট্রেনটি অযোধ্যা ধাম স্টেশনে থামে। আর ভাইরাল ভিডিয়োটি পুরনো। এটি হোলির পরে ২৬ মার্চের ঘটনা বলে দাবি করেন সেই আধিকারিক। অবশ্য এই একটি ভিডিয়ো রাজনৈতিক ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সাম্প্রতিক সময়ে কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে থেকে শুরু করে রাহুল গান্ধী এই ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে রেল পরিষেবা নিয়ে বিষোদগার করেছিলেন।

এই সবের মাঝেই রেল জানাচ্ছে, বাড়তি যাত্রীদের চাপ সামাল দিতে তারা ৪৩ শতাংশ ট্রেন বাড়িয়ে দিয়েছে। মূলত তামিলনাড়ু, ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, উত্তরপ্রদেশ, কর্ণাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলাঙ্গানা, ঝাড়খণ্ড, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান এবং দিল্লির ওপরে ফোকাস রেখেই ট্রেন বাড়ানো হয়েছে বলে জানাচ্ছে রেল। তবে তাও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি পুরোপুরি সামাল দেওয়া যায়নি।

(Feed Source: hindustantimes.com)