“এই গরমে বাচ্চার জ্বর হলে অযথা অ্যান্টিবায়োটিক নয়”সন্তানকে সুস্থ রাখার পরামর্শ

“এই গরমে বাচ্চার জ্বর হলে অযথা অ্যান্টিবায়োটিক নয়”সন্তানকে সুস্থ রাখার পরামর্শ

প্রচন্ড গরম৷ সঙ্গে আর্দ্রতায় বাড়ছে অস্বস্তি৷ ঘাম প্যাচ প্যাচে শরীরে বাড়ছে কাশি-সর্দি এমনকী জ্বরের ভয়৷ বিশেষ করে ছোট বাচ্চাদের অবস্থা খুবই খারাপ৷ সারাদিন দুরন্তপনায় ঝরছে ঘাম৷ সেই ঘাম বসে গিয়ে হাঁচি, কাশি লেগেই থাকছে৷ কীভাবে এর থেকে মুক্তি? বৃষ্টি নিয়ে কোনও ইতিবাচক খবর শোনাতে পারছে না আবহাওয়া দফতর৷ ফলে এই ভ্যাপসা গরম থাকবে আরও কিছু দিন৷ তার মধ্যে কীভাবে সুস্থ রাখবেন বাড়ির খুদে সদস্যকে? টিপস দিচ্ছেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞসুমিতা সাহা

প্রশ্ন- প্রচন্ড গরম, সঙ্গে হাই হিউমিডিটি৷ ১ বছর বা তার কম বয়সি বাচ্চাদের কীভাবে সুস্থ রাখা যাবে?

উত্তর- এই সময় বাচ্চাদের বেশি করে জল খেতে হবে৷ কারণ এই আবহাওয়ায় ডিহাইড্রেশন হচ্ছে বাচ্চাদের৷ অতিরিক্ত ঘামের মধ্যে দিয়ে শরীর থেকে অনেকটা জল বেরিয়ে যাচ্ছে৷ এছাড়াও গরমে হজম ক্ষমতা কমে যায়৷ পেট খারাপও হচ্ছে অনেকের৷ একটু খেয়াল রাখতে হবে, যাতে বাচ্চারা নির্জীব না হয়ে পড়ে৷

প্রশ্ন-ঘাম থেকে বাঁচতে কিছু কি করা যাবে?

উত্তর-খুব সাধারণ ভাবে নরম কাপড় দিয়ে বারবার ঘাম মুছে দেওয়া, গা ধুয়ে দেওয়া৷ অনেকে হয়ত মনে করেন যে বাচ্চাদের একবারের বেশি স্নান করানো বা গা ধোওয়ায় সমস্যা হতে পারে৷ কিন্তু তা নয়৷ উল্টে গা মুছে দিলে ওরা আরাম পায়, আর ঘামও বসে যায় না৷

প্রশ্ন- সাধারণত বলা হয় সিজারিয়ান (caesarean) বাচ্চাদের গরম বেশি লাগে, সেটা কী ঠিক?

উত্তর-না, এনিয়ে কোনও ডকুমেন্টেশন নেই৷

প্রশ্ন-এই সময় বাচ্চাদের এসি-তে রাখা নিয়ে একটা চিন্তা হয়৷ কারণ গরমে ঘেমে ঠান্ডা ঘরে ঢুকলে শরীর খারাপ হতে পারে৷

উত্তর- বাচ্চাদের নিশ্চিন্তে AC-তে রাখা যাবে৷ কোনও অসুবিধা নেই তাতে৷ কারণ শহর বা শহরতলীর অধিকাংশ বাচ্চা জন্মের পরই এসি রুমে বা নার্সারিতে থাকে৷ নবজাতদেরও এসিতে রাখলে সমস্যা নেই৷ খেয়াল রাখতে হবে যাতে AC-র তাপমাত্রা ২৭ ডিগ্রির আশপাশে থাকে৷ আর এসির ভেন্ট থেকে সরাসরি ঠান্ডা হাওয়া ওদের গায়ে না লাগে৷ তবে বারবার এসি- নন এসি করলে শরীর খারাপ হতে পারে৷ কারণ তাপমাত্রার পার্থক্যে সমস্যা হয়৷

প্রশ্ন-আপনি বললেন যে এই সময় বাচ্চাদের পেট খারাপ হতে পারে৷ তাহলে কী খেতে দিতে হবে? কারণ ছোট বাচ্চারা প্রাধাণত দুধ খায়, তাতে কী শরীরে বেশি গরম লাগে? ৬ মাসের বেশি বাচ্চাদের শরীর ঠান্ডা রাখতে কী ধরণের খাবার দিতে হবে?

উত্তর- কম মশালার খাবার, হাল্কা-পাতলা ঝোল৷ ৬ মাসের কম বয়সি শিশুরা যেহেতু মায়ের দুধ বা টিনের দুধ খায়, তাদের পেট খারাপের সমস্যা কম৷ কিন্তু একটু বড় যারা, তাদের পেটের গন্ডোগোল হতে পারে৷ ধরুন বাচ্চা বাইরের খাবার খেতে জেদ ধরেছে৷ এই সময় অনেক জায়গায়, গরমের ফলে খাবার নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে৷ আর না জেনে সেই ধরণের ফাস্ট ফুড বা বাইরের খাবার বাচ্চা খেলে পেট খারাপ হবে৷ ডায়রিয়া হতে পারে৷ তাই খাবার ব্যাপারে সাবধান হতে হবে৷ ঘরের হাল্কা রান্না বাচ্চাকে খাওয়ানোর চেষ্টা করুন৷

প্রশ্ন-দিনে কতটা পরিমাণ জল খেতে হবে?

উত্তর- একটা সাধারণ নিয়ম থাকে যেমন ১০ কেজির অর্থাৎ ১ বছরের বাচ্চার দিনে ১ লিটার খাওয়া উচিৎ৷ ২০ কেজি বাচ্চার দিনে দেড় লিটার জল খাওয়া উচিৎ৷ তবে এটা একটা সাধারণ হিসেব৷ এর থেকে বেশি-কম হতে পারে৷ তবে খেয়াল রাখতে হবে যে প্রস্রাবের রং যদি গাঢ় হলুদ হয়, তাহলে জল খাওয়াতে হবে বেশি করে৷ কারণ প্রস্রাব হলুদ হওয়ার মানে শরীরে জলের ঘাটতি হচ্ছে৷

প্রশ্ন-অনেক বাচ্চা জল খেতে চায় না, তাদের কী ভাবে জল খাওয়ানো যেতে পারে?

উত্তর- ডাবের জল, জল যুক্ত ফল যেমন তরমুজ বা জামরুল দিন৷ শরীরের জলের পরিমাণ কম হলে সমস্যা হবে৷

প্রশ্ন- ঠান্ডা-গরম লাগলে কী করতে হবে?

উত্তর- দেখুন, এই সময় কাশি-হাঁচি হলে খুব ভয়ের কিছু নেই৷ এধরনের রোগ নিজে থেকে ঠিক হয়৷ ৫ থেকে ৭ দিন লাগবে শিশুদের সুস্থ হতে৷

প্রশ্ন- আর জ্বর হলে?

উত্তর-সেটাও নিজে থেকে ঠিক হয়ে যাবে৷ তবে কিছু উপসর্গ খেয়াল রাখতে হবে৷ বাড়িতে বাচ্চাকে একটু আরামে রাখার চেষ্টা করুন৷ অযথা প্যানিক করবেন না৷ প্যারাসিটামল দিন, বেশি করে জল খাওয়ান৷ কারণ এধরণের সর্দি-কাশিতে ৭০% বাচ্চা নিজে থেকে ঠিক হয়ে যায়৷ ৩০% নিউমোনিয়ার আশঙ্কা থাকে৷ একটু খেয়াল রেখে, ৪৮ ঘণ্টা দেখে তারপর চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন৷ আর একটা বিষয়, অনেক বাবা-মা চান তাঁদের শিশুদের তাড়াতাড়ি সুস্থ করে তুলতে, অ্যান্টিবায়োটিকের মাধ্যমে৷ চিকিৎসকের কাছে এসেও সেই দাবি জানা৷ এটা খুব ভুল৷ এই ধরনের জ্বরে অ্যান্টিবায়োটিকের একেবারই প্রয়োজন নেই৷ অযথা সেই দাবি রাখবেন না৷ এই রকম সর্দি-কাশি-জ্বরে বাচ্চারা কিছু দিন ভুগলে কোনও সমস্যা নেই৷ এই জ্বর নিজে থেকেই ঠিক হয়ে যায়৷

প্রশ্ন-করোনাও বাড়ছে৷ তার জন্য কী বাড়তি সতর্কতা?

উত্তর- হ্যাঁ, মাস্ক পরতে হবে৷ আগের নিয়ম মানতে হবে৷ মাথা ব্যথা বা হাঁচি-কাশি হলে কোভিড টেস্ট করতে হবে৷ ঝুঁকি নিলে চলবে না৷

Published by:Pooja Basu

(Source: news18.com)